ভৈরবে ১৪০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী পঁচু বেপারী মসজিদটি সংস্কারের অভাবে ঐতিহ্য হারাচ্ছে। প্রথমদিকে টিনশেড থাকলেও ১৯৩৪ সালে (১৩৪১ বঙ্গাব্দ) ইট, বালি, সিমেন্ট দিয়ে মিনারসহ মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। এরপরে প্রায় ৯০ বছরেও এই মসজিদটি সংস্কার করা হয়নি।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদটি নামাজের উপযোগী থাকলেও ভেতরের পলেস্তারা খুলে পড়ছে। কোনো কোনো জায়গায় দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ কারণে মুসল্লিরা ভয়ে ভয়ে নামাজ পড়েন।
মসজিদে আগত নজরুল মিয়া বলেন, শতবছর পুরোনো মসজিদটিতে এক সময় মুসল্লিদের নামাজের জায়গা হতো না। এখন সংস্কারের অভাবে মসজিদটির অনেক জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। চুন, সুরকি খসে পড়ছে। ভয়ে অনেকে মসজিদে আসেন না। কখন যেন ভেঙে পড়ে মসজিদটি।
মসজিদের সাবেক ক্যাশিয়ার মোশারফ হোসেন বলেন, ৬০ বছর ধরে এই মসজিদের কমিটিতে ক্যাশিয়ারসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি। শত বছরের পুরোনো মসজিদটি ঐতিহ্য ধরে রাখতে সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। পাশে রেললাইন থাকায় ট্রেন আসলে মসজিদটি কেঁপে ওঠে। মুসল্লিদের নামাজে অনেক সময় ধ্যানও নষ্ট হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত মসজিদটি সংস্কারে সরকারিভাবে কোনো সহায়তা আসেনি। বৃষ্টি আসলে ছাদের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে, নামাজে ব্যাঘাত ঘটে।
Advertisement
স্থানীয় বাসিন্দা হারুনুর রশিদ ভূঁইয়া বলেন, গতবছর রমজানে এতেকাফে বসা মুসল্লিরা বৃষ্টির পানির কারণে মসজিদ থেকে বের হয়ে বাইরে অবস্থান নিয়েছিলেন। বৃষ্টি এলে মসজিদের ভেতরে হাঁটু পানি হয়ে যায়। মসজিদের অনেক জায়গা আছে। প্রয়োজনে নতুন একটি মসজিদ করে দিলেও মুসল্লিরা নামাজ পড়তে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, দ্রুত সংস্কার না হলে শতবর্ষী মসজিদটি ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি হারিয়ে যাবে।
মসজিদের বর্তমান ইমাম হাফেজ উমর ফারুক বলেন, ১৪০ বছরের পুরোনো এ মসজিদে আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধার ইউনিয়নের একজন প্রথম ইমামতি শুরু করেন। পরে কালিকাপ্রসাদের একজন ইমাম প্রায় ৬০ বছর ছিলেন। তারপর ফেনীর একজন ইমাম ৪০ বছর ইমামতি করেন। পরে তার ছেলে মাওলানা জোবাইয়েদ ২৭ বছর ইমামতি করেন। তারপর আমি এ মসজিদে ২০০৯ সালে যোগদান করি।
তিনি বলেন, মসজিদের বয়স অনুযায়ী এখন পর্যন্ত কোনো সংস্কার হয়নি। আমি যোগদানের পর থেকেও দেখিনি। মসজিদের ভেতরে ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। অনেক জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। মুসল্লিদের নামাজ পড়তে কষ্ট হয়। এখন আমাদের দাবি, মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হোক নতুবা সংস্কার করা হোক।
Advertisement
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, প্রায় ১৪০ বছর পুরোনো এই মসজিদ। এক সময় এই মসজিদ এলাকায় রেল কলোনি ছিল। লোকজন ফেরি দিয়ে আশুগঞ্জ-ভৈরব যাতায়াত করতো। মানুষের সমাগম ছিল অনেক বেশি। এখন রেল ব্রিজ হওয়াতে মানুষের সংখ্যাও কমে গেছে।
তিনি বলেন, আমি সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকে মসজিদের বিভিন্ন ভাঙা জায়গা এরইমধ্যে সংস্কার করেছি। মসজিদের পাশে আমার বাড়ি না হওয়ায় আমি নিয়মিত যেতে পারি না। তবে মসজিদটি সংস্কারের জন্য আমি স্থানীয়দের নিয়ে একটি উদ্যোগ নিয়েছি।
মোশারফ হোসেন আরও বলেন, পাশের মেঘনা ডিপোঘাটের কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় মসজিদটি পরিচালনা করে যাচ্ছি। এরইমধ্যে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ আমাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছে, মসজিদটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে যেন ভাঙা না হয়। তবে আমরাও চাই শত বছরের পুরোনো মসজিদটির ঐতিহ্য বজায় থাকুক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে সম্প্রতি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ভৈরবে একটি ১৪০ বছরের পুরোনো মসজিদ আছে। আমি মসজিদটির সংস্কারের বিষয়ে এখনো কোনো চিঠি বা আবেদন পাইনি। তবুও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত খবর নিয়ে খুব দ্রুত মসজিদটি সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
এমআরআর/এমএস