পাবনার ভাঙ্গুড়ায় খামার থেকে এক বস্তা মুরগির খাদ্য ‘ফিড’ চুরির অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন গ্রাম প্রধানরা। গত ২৩ মার্চ উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের ঝবঝবিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এক সপ্তাহ ধরে ঘটনাটি চাপা থাকলেও শনিবার (৩১ মার্চ) জানতে পারেন গণমাধ্যম কর্মীরা। ঝবঝবিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও খামারের শ্রমিক নুরুজ্জামান (৫০) এবং একই গ্রামের বাসিন্দা কৃষি শ্রমিক জাকের আলীকে (৪৫) এই জরিমানা করা হয়েছে, যা তাদের জন্য জুলুম পর্যায়ে বলে মন্তব্য করছেন অনেকে। জানা গেছে, উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের ঝবঝবিয়া গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান ওরফে রিপন মোল্লা তার বাড়িতে দুইটি মুরগির খামার করেন। সেখানে গত আট মাস ধরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন নুরুজ্জামান নামের ওই ব্যক্তি। ৫ মার্চ নুরুজ্জামান এক বস্তা মুরগির খাদ্য (ফিড) চুরি করে বিক্রি করেন একই গ্রামের জাকের নামে এক ব্যক্তির কাছে। কয়েকদিন পর জাকের সেই ফিডের বস্তা খামার মালিক রিপনের কাছেই বিক্রি করতে যান। ফিডের বস্তা দেখে রিপন তার খামারের বস্তা বলে দাবি করেন। পরে রিপন বিষয়টি গ্রাম প্রধানদের কাছে জানান। তিনি একটি সালিশি বৈঠকের দাবিও জানান।
Advertisement
এরপর ২৩ মার্চ সকালে ঝবঝবিয়া জামে মসজিদের মাইক থেকে সালিশের ঘোষণা দেন গ্রাম্য প্রধানরা। পরদিন সকালে ঝবঝবিয়া কবরস্থান মাঠে সালিশের আয়োজন করা হয়। সালিশ বৈঠকে অষ্টমনিষা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও গ্রামপ্রধান ইয়াসিন সরকারের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন গ্রামপ্রধান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদ আলী, গ্রামপ্রধান আলেপ প্রামাণিক, আব্দুস সালাম, আজিজুল হক, আব্দুর রাজ্জাক, মন্টু সরদার, আব্দুর রহিম, আফজাল হোসেন, আব্দুল বারী, সাবেক ইউপি সদস্য আলম ও রিপনের বড়ভাই হাবিবুর রহমান প্রমুখ। এ সময় প্রায় এলাকার দেড় শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন।
সালিশে নুরুজ্জামানকে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা ও জাকেরকে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে সালিশনামায় তাদের স্বাক্ষর নেন প্রধানরা। সেই সঙ্গে নুরুজ্জামানের কাছ থেকে নগদ ১ লাখ টাকা এবং জাকির হোসেনের কাছ থেকে নগদ ৪০ হাজার টাকা আদায় করেন তারা। জরিমানার বাকি টাকাগুলো ৭ দিনের মধ্যে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাকি টাকা জমা দেওয়ার সময়সীমা গত বুধবার শেষ হয়েছে। কিন্তু বিরাট অংকের এই জরিমানার টাকা শোধ করতে পারছেন না সাজাপ্রাপ্তরা।
Advertisement
সালিশের সভাপতি ইয়াছিন সরকার বলেন, নুরুজ্জামান মুরগির খাদ্য ১ বস্তা বিক্রি করেছেন, তার প্রমাণ মিলেছে। জাকের বস্তা চুরি করেনি। কিন্তু চুরির মাল বিক্রির অপরাধে তাকেও জরিমানা করা হয়।
তবে সালিশে ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এলাকার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতেই এত জরিমানা করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, সালিশে যে রায় দেওয়া হয়েছে তা জুলুমের মধ্যে পড়ে। যা তাদের একেবারেই দেওয়ার সামর্থ্য নেই।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Advertisement
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসিদুল ইসলাম বলেন, গ্রাম্য সালিশ ও বিরাট অংকের জরিমানার কথা তিনি জেনেছেন। গ্রাম্য সালিশে এত বিরাট অঙ্কের টাকা জরিমানার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আমিন ইসলাম জুয়েল/এফএ/এমএস