জয়পুরহাটে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করে ভালো ফলন হয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করার ব্যবস্থা না থাকায় কাঙ্ক্ষিত লাভ পাচ্ছেন না কৃষকরা। বিদেশি এ ফল চাষ করে অনেক কৃষকই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় প্রথমদিকে হাতেগোনা কয়েকজন চাষ শুরু করলেও এখন প্রায় ২৫০ কৃষক স্ট্রবেরি চাষ করছেন। এর মধ্যে জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নেই আছেন ২০০ কৃষক।
Advertisement
সরেজমিনে জানা যায়, বর্তমানে জেলার কয়েকটি এলাকায় অনেকেই স্ট্রবেরি চাষে ভালো ফলন পেয়েছেন। অন্য ফসলের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকের মাঝে দিন দিন আগ্রহও বাড়ছে। তবে স্থানীয়ভাবে খুচরা পর্যায়ে কিছু ফল বিক্রি হলেও পাইকারি বাজারজাত করার ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা কাঙ্ক্ষিত লাভ পাচ্ছেন না।
ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার চাষিরা। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের একাধিকবার জানিয়েও লাভ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। তাদের দাবি, কৃষি বিভাগ যদি স্ট্রবেরির বাণিজ্যিক প্রসারে যথাযথ উদ্যোগ নেয়, তাহলে তারা উপযুক্ত দাম পাবেন। সেইসঙ্গে এর চাষ আরও বৃদ্ধি পেতো।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে লোকসানের মুখে চাষিরা
Advertisement
জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চাঁন্দা, কালীবাড়ী মাঠে জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এসব ক্ষেতের ভেতরে কেউ স্ট্রবেরি গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত, কেউ সেচ দিচ্ছেন, কেউ কেউ ফল তুলছেন।
চান্দা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘দশ বছর আগে আব্দুল মোমিন ভাই প্রথম স্ট্রবেরি চাষ করেন। তার সাফল্য দেখে ছয় বছর আগে দেড় বিঘা জমিতে আমিও চাষ করি। কম খরচে অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভ হওয়ায় পরের বছর থেকে তিন বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করি। এরপর চাষ অব্যাহত রেখেছি। এই ফল বিক্রি করে অভাব দূর করে স্বাবলম্বী হয়েছি। এখন কৃষকরা আমার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করেন। অনেকে পরামর্শও নিতে আসেন। দিন দিন এ ফলের চাষ বেড়েই চলেছে। গত বছর গ্রামে স্ট্রবেরি চাষ করেছিলেন ৬০-৭০ জন। এ বছর নতুন অনেকেই স্ট্রবেরি চাষ করেছেন।’
কালিতলা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি স্ট্রবেরি চাষ শুরু করতে হয়। এ জন্য ট্রাক্টর দিয়ে পাঁচ-ছয়টি চাষ করে জমির মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। তারপর সার, গোবরসহ অন্য উপাদান ব্যবহার করে জমি প্রস্তুত করতে হয়। সব মিলে স্ট্রবেরি চাষের জন্য প্রতি বিঘা জমিতে চারাসহ খরচ হয় প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। আগে লাভ বেশি হতো কিন্তু বর্তমানে সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি, সেচের খরচ বাড়ায় লাভ কম হচ্ছে। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘায় ফল এবং চারা বিক্রি করে লাভ আসে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা।’
আরও পড়ুন: সগৌরবে টিকে থাকুক দেশীয় ফল
Advertisement
একই এলাকার কৃষক সাজ্জাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘উইন্টারডন জাতের একটি চারাগাছ থেকে মৌসুমে কমপক্ষে ২ কেজি ফল পাওয়া যায়। এ ফলের চাহিদা থাকলেও এলাকায় পাইকারিভাবে স্ট্রবেরি বিক্রি করা যায় না। খাওয়ার জন্য রাস্তার পাশে এবং ফেরি করে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কিছু কিছু বিক্রি করে ফেরিওয়ালারা। তাই স্ট্রবেরি ঢাকায় আড়তদারের কাছে কমিশনে বিক্রি করি। ঢাকার মহাজনরা আমাদের কাছ থেকে বাকিতে নিয়ে বিক্রি করার পর টাকা দেন। কোনো কারণে ঢাকায় পৌঁছানোর আগেই স্ট্রবেরি নষ্ট হয়ে গেলে লোকসান হয়। তাই এ ফল কেনাবেচায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলায় এবার প্রায় সাড়ে ৩০০ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়েছে। স্ট্রবেরি চাষের পুরো কৃতিত্বই কৃষকের। কারণ তারা নিজ উদ্যোগে এ ফলের চাষ করেছেন। কৃষক যাতে লাভজনকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করতে পারেন, সেজন্য কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের সঙ্গে মাঠে থেকে তদারকি করছেন।’
এসইউ/জিকেএস