দেশজুড়ে

স্ট্রবেরি চাষ করে নওগাঁর হাফিজের ভাগ্য বদল

স্ট্রবেরি চাষ করে ভাগ্যের চাকা বদলে দিয়েছেন নওগাঁর মাহবুবুর রহমান হাফিজ। স্ট্রবেরি চাষে সাফলতা পাওয়ায় এখন পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেছেন। অল্পদিনের মধ্যেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ড্রাগন, আঙ্গুর ও থাই পেয়ারা চাষ করবেন বলে জানান তিনি।এদিকে স্ট্রবেরি বাগান দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত আসছেন এবং তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে অনেকে স্ট্রবেরি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। মাহবুবুর রহমান হাফিজ ভবিষতে আরও বড় পরিসরে স্ট্রবেরি চাষ করবেন বলে জানান। মাহবুবুর রহমান হাফিজ নওগাঁ শহরের কোমাইগাড়ী মহল্লার চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. মঈনুদ্দীনের ছেলে। তিনি ১৯৮৪ সালে হাফেজিয়া মাদরাসা থেকে ৩০ পারার হাফেজ হয়ে বের হন এবং ১৯৯৮ সালে বগুড়া জামিল মাদরাসা থেকে দাওরা হাদিস পাস করে কুষ্টিয়া ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজে ভর্তি হয়ে ২০০২ সালে মাস্টার্স পাস করেন। পড়াশুনা শেষ করে বেসরকারি ফুড বেভারেজে চাকরি শুরু করলে পরিবারের কারণে চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে আসতে হয়েছে বাড়িতে। চাকরি না করে কিভাবে টাকা উপার্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায় সেই চিন্তা থেকেই তিনি স্ট্রবেরি চাষের উদ্যোগ নেয়।২০০৮ সালে নওগাঁ যুব উন্নয়ন অধিদফতরের সামনে তাদের নিজস্ব ৫ কাঠা জমিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুর হোসেনের আবিষ্কৃত স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। বেশ ভাল ফলাফল পান তিনি। সে সময় প্রতি কেজি  স্ট্রবেরি ৫শ টাকা দরে বিক্রি হয়। বেশির ভাগ  স্ট্রবেরিই বিক্রি হতো চট্টগ্রামে। ভালো লাভ হওয়ায়  স্ট্রবেরি চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি করার চিন্তা ভাবনা থেকে ২০০৯ সালে ৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ব্যাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করলে ওই বছর খরচ বাদ দিয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা আয় হয়। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১০ ও ২০১১ সালে ৩ বিঘা জমিতে সাড়ে ৮ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। ২০১২ সালে ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে চাষ শুরু করলে সে বছর আবহাওয়াজনিত ক্ষতির কারণে ভাল করতে পারেনি। তারপরেও অব্যাহত থাকে তার প্রাণান্ত চেষ্টা। ২০১৩ সালে ৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সে বছরে প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় করেন। ২০১৪ সালে ৫ বিঘা জমিতে প্রায় ৭ লাখ টাকা আয় করেন। ২০১৫ সালে ৫ বিঘা জমিতে  স্ট্রবেরি চাষ করলে খুব ভাল হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা আর হরতাল অবরোধ অসহযোগের কারণে সময় মতো ঢাকা, চট্টগ্রামে পৌছাতে না পারার কারণে খুব বেশি টাকা মুনাফা অর্জন করতে পারেননি। তারপরও সে সময় লক্ষাধিক টাকা লাভ পেয়েছেন। মাহবুবুর রহমান হাফিজ জানান, প্রতি বছর নভেম্বর মাসের দিকে স্ট্রবেরি লাগাতে হয়। এক বিঘা জমিতে ৫০ হাজার চারা লাগানো যায়। স্ট্রবেরি চাষের জন্য এক বিঘা জমি তৈরি, সার, শ্রমের দাম, চারা, লিজকৃত জমির মূল্যসহ অন্যান্যে খরচ হয় প্রায় ১ লাখ ২৫/৩০ হাজার টাকা। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে স্ট্রবেরি তোলা শুরু হয়। প্রথমে মাত্র এক-দুই কেজি স্ট্রবেরি উৎপাদন হলেও দেড় হাজার টাকায় বাজারে পাইকারি বিক্রি হয়। দিন যায় উৎপাদন বেশি হয় দামও কমা শুরু হয়। স্ট্রবেরির উৎপাদনের ভরা মৌসুমে এক বিঘা জমি থেকে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ কেজি সংগ্রহ করা যায়। আর বিক্রি হয় সর্বনিম্ন ২০০ টাকা কেজি দরে। তার স্ট্রবেরির বাগানে জাপানি এবং হাইব্রিড জাতের দুই ধরনের স্ট্রবেরি চাষ করা হয়। জাপানি স্ট্রবেরির স্বাদ ভালো হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও বেশি দামও বেশি।চলতি মৌসুমে সদর উপজেলার শালুকা মৌজায় ৫ বিঘা জমি ৪৫ হাজার টাকায় বাৎসরিক লিজ নিয়ে স্ট্রবেরি চাষ করেছেন তিনি। গত দুই সপ্তাহ ধরে স্ট্রবেরি বিক্রি করতে শুরু করেছেন। শুরুতে দাম প্রতি মণ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পেলেও বর্তমানে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। স্ট্রবেরি ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন আড়তে পাঠিয়ে দেন। এবার ফলন বেশ ভাল হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে দামও ভাল পাবেন বলে আশা করছেন তিনি। বাগানে প্রতিদিন তিনিসহ ৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত তার হাতে অর্ধ শতাধিক বেকার যুবক এই স্ট্রবেরি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন বলে জানান মাহবুবুর রহমান। নওগাঁ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানান, স্ট্রবেরি চাষী মাহবুবুর রহমান হাফিজকে আমরা সব রকমের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি। এই ফল চাষে অনেক বেকার যুবককেও আমরা উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আব্বাস আলী/এসএস/এমএস

Advertisement