জাতীয়

মুড়ি-বুট আর পানিতে হয় বস্তিবাসীর ইফতার

স্বামী-সন্তান নিয়ে ভালোই চলছিল নারগিস বেগমের সংসার। দুজনে মিলে যা আয় করতেন তা দিয়ে চলে যেতো। কিন্তু রমজানের আগে থেকেই তাদের সংসারে ছন্দপতন। এই পরিবারের চাকা যেন এখন আর ঘুরতেই চায় না। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে আটকে গেছে তিন সদস্যের এই পরিবারের চাকা। ফলে এখন প্রায় প্রতিদিন ভাজি-ভর্তা খেয়ে তাদের দিন চলে যায়। সেখানে ইফতারে ভালো কিছু খাওয়া তাদের শুধুই স্বপ্ন। মুড়ি, ছোলা, পানি দিয়ে কোনোমতে স্বামী-সন্তান নিয়ে ইফতার করেন নারগিস বেগম। শুধু নারগিস বেগম নন, তার থেকে আরও খারাপ অবস্থায় আছেন অনেকে। এই যেমন হাসিনা বেগম। তার তো ইফতারি সারতে হয় শুধু পেঁপে ভাজি আর ভাত দিয়ে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁও বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, এসব মানুষের অসহায় পরিস্থিতি। কথা হয় বস্তিতে থাকা মানুষের সঙ্গে। তাদের ইফতারির আয়োজনও দেখা হয়।

আরও পড়ুন: আলু-পেঁপে ছাড়া ৬০ টাকার নিচে সবজি নেই, কমেছে মুরগির দাম

এই বস্তিতে দীর্ঘদিন ধরে থাকেন হাসিনা বেগম। পরিবারে তার বাবা-মা, স্বামী ও দুই সন্তান রয়েছে। বস্তির অন্ধকার গলির মধ্যে টিনের ছোট একটি রুমে মাসিক তিন হাজার টাকা ভাড়ায় থাকেন তিনি। তার ঘরের সবাই সেহরিতে ডাল আর শাক ভাজি দিয়ে ভাত খেয়ে রোজা রাখেন। তাদের ইফতারির আয়োজনে থাকে পেঁপে ভাজি আর ভাত।

Advertisement

দুঃখ করে হাসিনা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সব কিছুর দাম বাইড়া গেছে। ভালো কিছু কিন্না খাওনের খেমতা নাই। মাইনসের বাসায় কাজ করি। জামাই রিকশা চালায়। সেই দিয়া আমগো সংসার চলে। তার মইধ্যে দুইটা মাইয়ারে স্কুলে ভর্তি করাইছি। মাইয়া দুইডা এইডা-ওইডা খাইতে চায়। টাকার অভাবে তাগো ভালো কিছু রাইন্দা দিতে পারি না। আগে জিনিসের দাম কম ছিল। তখন ইফতারিতে বেগুনি-চপ বানাইতাম। এহন তেলের দাম অনেক বাইড়া গেছে বইলা বানাইতে পারি না।’

আরও পড়ুন: মাংস খাওয়া কমিয়েছে ৯৬ শতাংশ নিম্নবিত্ত, মাছ ৮৮

হাসিনার পাশের ঘরে দীর্ঘদিন ধরে থাকেন ২৫ বছর বয়সী নারগিস বেগম। অন্যের বাড়িতে কাজ করে মাসে পাঁচ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। স্বামী চালান রিকশা। পরিবারে তাদের ছয় বছরের এক মেয়ে রয়েছে। সে একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।

নারগিস বলেন, ভালোই চলছিল সব কিছু। হঠাৎ করে জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন অনেক কষ্টে আছি। প্রায় প্রতিদিন ভাজি-ভর্তা খেয়ে দিন চলে যায়।

Advertisement

বস্তির সামনের চায়ের দোকান দিয়ে চলে কোহিনূরের আট সদস্যের পরিবার। তিনি বলেন, ‘বেবাক জিনিসের দাম বাড়ছে বইলা ভালা কিছু কিননা খাইতে পারি না। ইফতারের টাইমে ৬-৭ জনের লইগা ৫০-৬০ টাকার বুট-মুড়ি আর আলুর চপ, বেগুনি কিইনা সারি। এর বেশি কিছু খাওনের ভাগ্য হয় না।’

আরও পড়ুন: রোজায় দাম বেড়েছে তেল-পেঁয়াজ-মসলার

একই অবস্থা এই বস্তিতে থাকা প্রায় আড়াইশো পরিবারের সদস্যদের। যারা কাজকর্ম করে কিছু আয় করতে পারছেন তাদের কোনোমতে দিন কাটলেও বৃদ্ধ ও অসুস্থরা বেশি কষ্টের মধ্যে রয়েছেন।

বস্তিতে থাকা ৬৫ বছরের মরিয়ম দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। ১৫ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ায় মেয়ের বাড়িতে থাকেন তিনি। এর মধ্যেও নিয়মিত রোজা রাখেন। বেশিরভাগ সময় মুড়ি আর পানি দিয়ে তার ইফতারি হয়।

এমএইচএম/জেডএইচ/জেআইএম