বিএনপিকে স্বাধীনতাবিরোধী ও চক্রান্তকারী দাবি করে আগামী নির্বাচনে তাদের পরাজিত করার ঘোষণা দিয়েছেন ১৪ দলের নেতারা। পাশাপাশি প্রতিহতেরও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর কাকরাইলের আইডিইবি মিলনায়তনে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় ১৪ দলের নেতারা এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলিপ বড়ুয়া প্রমুখ।
এসময় আমু বলেন, ৭৫ এর পর বিএনপি-জাতীয় পার্টি নামে দল ছিল না। একটি মাত্র দল ছিল স্বাধীনতার সপক্ষের দল। বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমেই স্বাধীনতাবিরোধী দলগুলোর সৃষ্টি। তাদের কাছ থেকে স্বাধীনতার কোনো কিছুই আশা করা যায় না। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়া মুক্তিযোদ্ধা নামধারী স্বাধীনতাবিরোধী ছিল। ফখরুদ্দিন সরকার ছিল বিএনপিপন্থি সরকার।
Advertisement
আরও পড়ুন>> দেশে কেউ না খেয়ে দিন কাটায় না: কাদের
বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, মানুষ হত্যা, ধ্বংসকারী দল নির্বাচনে ভয় পাওয়ায় কারণই হলো তাদের সঙ্গে জনসমর্থন নেই। সংবিধানের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য কোনো গ্রেফতার করা হয় না। দ্রুত স্বাধীনতাবিরোধীদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
বিএনপির কথাবার্তা ষড়যন্ত্রের আলামত দাবি করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি করবেন না, পবিত্রভাবে কথা বলুন, না হয় দেশ ছেড়ে চলে যান। যতই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র করেন, কোনো লাভ নেই।
আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করলে বিএনপিকে নির্বাচন আসারও আহ্বান জানান মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
Advertisement
দলটির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, আগামী নির্বাচনে পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। বাকসন্ত্রাস করে আবারও অগ্নিসন্ত্রাসের দিকে ধাবিত অপশক্তিকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে হবে। এবার লড়াই একাত্তরের লড়াইয়ের মতই পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের বিরুদ্ধে।
এসময় তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, নির্বাচন কমিশনকে সরকার প্রভাবিত করবে না। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কখনই আসবে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ইতিহাস বিকৃতির মধ্যদিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক যাত্রা শুরু। ৭৫ এর পর থেকে এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কার্যক্রম চালানো বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দল হিসেবে কিভাবে দাবি করে?
তিনি বলেন, প্রথম আলোর খবরটি ষড়যন্ত্রমূলক ছিল। যা নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে। এর দায়ভার ঐ পত্রিকাকে নিতে হবে। রাজাকারের ছেলে মির্জা ফখরুলের স্বাধীনতার চেতনা নেই আছে পাকিস্তানি চেতনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারো নেই, যারা টেক ব্যাক করে পাকিস্তান বানাতে চায় তারা দিবাস্বপ্ন দেখছে।
আগামী নির্বাচনে আবারও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে পরাজিত করে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিকে জয়যুক্ত করানোরও আহ্বান জানান হানিফ।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, যতই স্বাধীনতার বিকৃতির চেষ্টা করা হোক না কেন প্রকৃত ইতিহাস মুছে দেওয়া যায় না। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বিকৃত করে ভোট ডাকাতির নির্বাচন করেছিল বিএনপি-জামায়াত। স্বাধীন নির্বাচনের জন্য আমরা লড়াই করেছি বলেই ফখরুদ্দীনরা নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিল। আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ নির্বাচন চাই। বিএনপি নির্বাচনে যাক না যাক সেটা তাদের বিষয়। কিন্তু কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে লাভ নেই। মুক্তিযুদ্ধের শহীদের তালিকা নিয়ে টালবাহানা করে ইতিহাস বিকৃতি করতে চায় বিএনপি। যত যাই হোক স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে কোনো মূল্যে এ দেশের ভার দেওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন>> সরকার দেশের মানুষের কষ্ট বোঝে না: জিএম কাদের
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ইতিহাসের মীমাংসিত বিষয়ে কারও দ্বিমত থাকা উচিত নয়। একাত্তরের মীমাংসিত বিষয়কে বিএনপি অস্বীকার করে বাংলাদেশ দখল করেছিল। সামরিক শাসকের ঔরসজাত দল বিএনপি। আন্দোলন নামে বিএনপি আবারও রাজনৈতিক অপরাধ করছে, যা এ দেশের জন্য অশনিসংকেত।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের কুর্তা গায়ে দিয়ে আবারও জামায়াতকে হালাল করার চেষ্টা করছে। বিএনপি বাংলাদেশের জন্য একটি অশনিসংকেত ও বিপদজনক দল। সবাইকে নিয়ে নির্বাচনের স্বপ্ন নয়, স্বাধীনতাবিরোধী দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে হবে।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলিপ বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে ঈর্ষান্বিত বিএনপি। স্বাধীনতার মূল্যবোধকে রক্ষা করার জন্য শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে শক্তিশালী রাখতে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। সরকারকে দুর্নীতি বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এসইউজে/ইএ/এমএস