ভ্রমণ

প্রকৃতির অপার বিস্ময় কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক

সাইফুর রহমান তুহিন

Advertisement

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যের গোলাঘাট ও নওগাঁ জেলাজুড়ে বিস্তৃত কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক অনেকগুলো কারণে সব বন্যজীবনপ্রেমীর কাছে স্বপ্নের এক গন্তব্য। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত পার্কটি ভারতের হাতেগোনা কয়েকটি সত্যিকারের প্রাকৃতিক স্থানগুলোর একটি। মানবসৃষ্ট পরিবেশ দূষণ থেকে পুরোপুরি মুক্ত কাজিরাঙা এখনো একটি দারুণ বনভূমি। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক কাজিরাঙায় কৌতূহলোদ্দীপক কী কী আছে।

ন্যাশনাল পার্ক ও টাইগার রিজার্ভ একটি সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক। পরে ১৯৭৪ সালে এটিকে ন্যাশনাল পার্ক ঘোষণা করা হয়। ২০০৭ সালে কাজিরাঙাকে টাইগার রিজার্ভ করা হয়। আসামের নওগাঁ, গোলাঘাট ও সন্তিপুরজুড়ে বিস্তৃত কাজিরাঙা। গোলাঘাট জেলার বকাখাতে পার্ক হেডকোয়ার্টারের অবস্থান। তবে ট্যুরিস্ট সেন্টার হলো বকাখাত থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে কোহোরা এলাকায়।

ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ১৯৮৫ সালে কাজিরাঙাকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করা হয়। এটি শুধু উত্তর-পূর্ব ভারত নয়, গোটা ভারতেরই হাতেগোনা কয়েকটি অপরিবর্তিত প্রাকৃতিক এলাকাগুলোর একটি। ব্রহ্মপুত্র ভ্যালির সর্ববৃহৎ দূষণমুক্ত এলাকা এটি।

Advertisement

আরও পড়ুন: ছুটির দিনে ঘুরে আসুন লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

গণ্ডার সংরক্ষণ বিশ্বের বিপন্নপ্রায় প্রজাতিগুলোর একটি হলো এক শিংওয়ালা গণ্ডার। এ প্রজাতি সংরক্ষণে এ পার্কের আন্তরিক চেষ্টা আসামকে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে দিয়েছে। একপ্রকার বিলুপ্তির কাছ থেকে ফিরেছে এসব গণ্ডার। এখন এদের সংখ্যা ২৬১৩টি। যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এবং এক শিংওয়ালা গণ্ডারের বিষয়ে সচেতনতার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত। আনুমানিক ৭০০টি গণ্ডার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নেপালের চিতবন ন্যাশনাল পার্ক।

দ্য বিগ ফাইভ বড় আকৃতির এক শিংওয়ালা গণ্ডার, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ভারতীয় বন্যমহিষ, ভারতীয় হাতি ও ইস্টার্ন সোয়াম্প ডিয়ার বা বড় সিংহকে একসঙ্গে কাজিরাঙা ন্যশনাল পার্কের বিগ ফাইভ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

কাজিরাঙার বাসিন্দারাকাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক কিন্তু বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ওয়েস্টার্ন হুলোক গিবনের শেষ আবাসস্থল। যা ভারতে পাওয়া যায় এমন একমাত্র প্রজাতির শিম্পাঞ্জি। গিবনরা হলো বিশ্বে সবচেয়ে হুমকির মুখে থাকা বানর প্রজাতি। আরেকটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হলো গঙ্গা নদীর শুশুক (ডলফিন প্রজাতি)। যেটির গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল হলো কাজিরাঙা বনের জলাভূমি।

Advertisement

আরও পড়ুন: রাম সেতু বানরবাহিনীর তৈরি নাকি প্রকৃতির বিস্ময়?

কাজিরাঙায় পাখি দর্শনস্থায়ীভাবে বসবাসকারী এবং পরিযায়ী মিলিয়ে কাজিরাঙা হলো আনুমানিক ৪৭৮ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। এগুলোর মধ্যে ২৫ প্রজাতি আবার বৈশ্বিকভাবে হুমকির কবলে এবং আরও একুশটি অনেকটা হুমকির মুখে। কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক হলো প্রবলভাবে হুমকির সম্মুখীন বেঙ্গল ফ্লোরিকান প্রজাতির পাখির শেষ আবাসস্থলগুলোর একটি।

কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্কে সাফারি কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক ঘুরে দেখার জন্য এলিফ্যান্ট সাফারি ও জিপ সাফারিই সেরা উপায়। পার্কটি মোট চার ভাগে বিভক্ত। এগুলো হলো- কাজিরাঙা রেঞ্জ (সেন্ট্রাল রেঞ্জ), ইস্টার্ন রেঞ্জ, ওয়েস্টার্ন রেঞ্জ এবং বুরাপাহাড় রেঞ্জ।

কাজিরাঙায় ট্রেকিং পানবাড়ি রিজার্ভ ও কুকুরকাটা রিজার্ভ ফরেস্টে ট্রেকিং পাখিপ্রেমী ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য অনেক উপভোগ্য। কাজিরাঙা বনের অভ্যন্তরে কুকুরকাটা হিলসের ওপর থেকে ব্রহ্মপুত্র প্লাবনভূমিকে খুবই চমৎকার দেখায়।

আরও পড়ুন: কলকাতার যেসব স্থানে ঢুঁ মারতে ভুলবেন না

কীভাবে পৌঁছবেনআকাশপথে যেতে হলে কলকাতা থেকে কাছের বিমানবন্দর হলো গুয়াহাটি, যোরহাট ও ডিব্রুগড়। এ ক্ষেত্রে যোরহাটই বেশি উপযুক্ত। কারণ সেখান থেকে কোহোরাতে (কাজিরাঙা ন্যশনাল পার্ক) সড়কপথে কম সময়ে যাওয়া যায়। কোহোরা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গোলাঘাট থেকে যোরহাট বিমানবন্দর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে। গুয়াহাটি থেকে কোহোরার দূরত্ব ১৯২ কিলোমিটার এবং সময় লাগবে ৪-৫ ঘণ্টার মতো। ডিব্রুগড় থেকে কাজিরাঙা ২৫১ কিলোমিটার দূরে। নিকটবর্তী রেলওয়ে টার্মিনাল হলো গুয়াহাটি।

আকাশপথে যাতায়াত করতে না চাইলে আপনাকে সড়ক কিংবা রেলপথে সিলেট বিভাগীয় শহরে পৌঁছে প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসে কিংবা পাবলিক বাসে চড়ে তামাবিল স্থলবন্দরে যেতে হবে। সীমান্ত পেরিয়ে ডাউকি বাজার থেকে কার কিংবা জিপ রিজার্ভ করে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর পৌঁছবেন মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে। শিলং থেকে গুয়াহাটি যাওয়ার পাবলিক বাস সহজেই পাবেন। সময় লাগবে পৌঁনে দুই ঘণ্টার মতো।

লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ফিচার লেখক।

এসইউ/এমএস