মতামত

তোমার রহমত থেকে বঞ্চিত করো না

আলহামদুলিল্লাহ, পবিত্র মাহে রমজানের সপ্তম দিনের রোজা রাখার সৌভাগ্য আল্লাহপাক আমাদেরকে দান করেছেন। রহমতের দিনগুলো দ্রুতই কেটে যাচ্ছে। রমজানের এই দিনগুলোতে আমরা চেষ্টা করছি সকল প্রকার ছোট বড় পাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে। জানি না, কতটুকু এতে সফল হতে পারব। আমাদের উচিত হবে রমজান চলে যাওয়ার পরও যেন সর্ব প্রকার পাপ থেকে দূরে থাকি।

Advertisement

অনেক সময় ছোট খাট পাপ কাজকে আমরা গুরুত্ব দেই না। পাপ ছোট হোক বা বড় সব ধরনের পাপ ইসলামে নিষিদ্ধ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘এবং তোমরা তোমাদের পাপসমূহকে এই কারণে গোপন করতে না যে, পরকালে তোমাদের কর্ণ, তোমাদের চক্ষু এবং তোমাদের চর্ম তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে, বরং তোমরা ধারণা করিতে যে, আল্লাহ তোমাদের অনেক কার্যকলাপ সম্বন্ধে অবগত নন যা তোমরা করছ’ (সুরা হামীম আস সাজদা, আয়াত: ২২)।

হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আব্দুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন, বায়তুল্লাহ নিকট দু’জন কুরায়শী এবং একজন সাকাফী অথবা দু’জন সাকাফী ও একজন কুরায়শী বসেছিলেন। তাদের পেটের চর্বি ছিল খুব বেশি। কিন্তু অন্তরে বুদ্ধি ছিল খুব কম। তাদের একজন বললো, তুমি কি মনে কর আমরা যা বলছি আল্লাহ তা শুনছেন? অপরজন বললো, আমরা জোরে বললে তিনি শুনতে পান, আর চুপে চুপে বললে শুনতে পান না। অপরজন বললো, জোরে জোরে বললে যদি শুনতে পান তবে চুপে চুপে বললেও শুনতে পাবেন। তখন আল্লাহতায়ালা নাযেল করলেন, তোমরা দুনিয়ার অপরাধ করার সময় যখন লুকোতে, তখন তোমাদের এ চিন্তা ছিল না যে, তোমাদের চোখ, কান, চামড়া তোমাদেরই বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে, বরং তোমরা ধারণা করছিলে যে, তোমরা যা জান এর অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না’ (বুখারি)।

মূলত যারা পাপ কাজ করবে তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গই বিচার দিবসে সাক্ষ্য দিবে যে তারা কি করেছে। আর আল্লাহতায়ালা সবই দেখেন ও জানেন। সেদিন পাপীদের অপকর্মের ছবি তাদের চোখে মুখেই ফুটে উঠবে, তারা ঐ সব পাপ কর্ম করেছে কি করেনি, এরূপ প্রশ্নের কোনোই প্রয়োজন হবে না।

Advertisement

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গণিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ’ (মুসনাদে আহমদ )।

মানুষ আল্লাহপাকের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হয়েও আজ আমরা কত পাপ কাজই না করি। গায়ে শক্তি আছে বলে শক্তিহীনের ওপর চড়াও হচ্ছি, অর্থ আছে বলে অর্থহীনকে তুচ্ছ জ্ঞান করছি, এক কথায় যত পাপ আছে সবই আমার দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে। সব ধরনের অপকর্মই যদি আমার দ্বারা হতে থাকে তাহলে আল্লাহপাকের রহমতের আশা আমরা কীভাবে করতে পারি?

কবি শেখ সাদী (রহ.) কত সুন্দরই না বলেছেন ‘আমি ঐ পিপীলিকা, যাকে প্রতিদিন মানুষেরা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় পদদলিত করে চলে যায়। আমি বল্লা নই যে, মানুষকে দংশন করে কান্নাকাটি করার এবং কষ্ট দেব। আমি এ নেয়ামতের শোকর কীভাবে আদায় করব যে, মানুষকে কষ্ট দেয়ার শক্তি আমার নেই।’ আমরা কী কখনও ভেবে দেখেছি যে, সৃষ্টির মাঝে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী আমরা কিন্তু আমাদের কাজকর্মে কী আদৌ এর প্রমাণ দিতে পেরেছি? এর জন্য তো আমাদেরকে দিনরাত আল্লাহপাকের দরবারে শুকরিয়া আদায় করা উচিত। অথচ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হয়েও আজ আমার দ্বারা কতই পাপই না সংঘটিত হচ্ছে। আমাদেরকে এমনভাবে জীবন পরিচালনা করতে হবে আমাদের দ্বারা যেন কোনো ধরণের পাপ কাজ সংঘটিত না হয়।

যেহেতু পবিত্র রমজান মাস অতিবাহিত করছি আর রহমতের দিনগুলো দ্রুতই চলে যাচ্ছে। তাই আসুন না, এই মূল্যবান সময়কে নষ্ট না করে নিজের সমস্ত পাপের জন্য ক্ষমা চেয়ে রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের আধ্যাত্মিক পানীয় পানে সিক্ত হই। আল্লাহপাক আমাদের ক্ষমা করে তার রহমতের চাদরে আবৃত করে নিন, আমিন।

Advertisement

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

এইচআর/এএসএম