নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম যখন ঊর্ধ্বমুখী তখন দুধের দামের ঠিক উল্টো চিত্র। প্রতি লিটার দুধ পাইকারি বাজারে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খামারিরা বলছেন, গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক দামের কারণে উৎপাদন খরচের থেকেও কম দামে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে পথে বসেছেন পটুয়াখালীর অনেক খামারি।
Advertisement
পটুয়াখালীর খামারিরা জানান, প্রতি লিটার দুধ উৎপাদনে অন্তত ৬০-৬৫ টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু কয়েকদিন ধরে পটুয়াখালীর পাইকারি বাজারে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। এতে প্রতি লিটারে খামারিকে ২০-২৫ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে অর্থ সংকটে গবাদি পশুকে পর্যাপ্ত খাবার দিতে পারছেন না খামারিরা। এমন পরিস্থিতিতে সড়কে দুধ ফেলে প্রতীকী প্রতিবাদও জানিয়েছেন তারা।
পটুয়াখালী শহরের পুরান বাজারে দুধের পাইকারি ও খুচরা বাজার বসে। এ বাজার থেকেই সাধারণত জেলার মিষ্টান্ন ও আইসক্রিম ব্যবসায়ীরা দুধ কেনেন। তবে রমজান শুরুর আগ থেকেই মিষ্টি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুধ কিনেছেন। এতে বাজারে দুধ বিক্রি করতে আসা খামারিরা ক্রেতা পাচ্ছেন না। ফলে দুধের দাম দিন দিন কমছে বলে দাবি খামারিদের।
এদিকে, গবাদি পশুর খাবার ও ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দিশেহারা খামারিরা। এ কারণে গত একবছরে জেলায় শতাধিক খামার বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানায় জেলা ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশন। দুধের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে না পারলে অধিকাংশ খামারই বন্ধ করতে হবে বলেও জানান সংগঠনের নেতারা।
Advertisement
পটুয়াখালী সদর উপজেলা ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. বাছির বলেন, আমি উচ্চশিক্ষা শেষে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সমন্বিত খামার শুরু করি। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, এখন টিকে থাকাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত গবাদি পশুর দানাদার খাবারের দাম বাড়ছে। ওষুধসহ অন্য উপাদানের দাম যে হারে বেড়েছে সে হারে দুধের দাম না বেড়ে উল্টো দিন দিন কমছে। এখন আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সরকার আমাদের বাঁচাতে দুধের বাজারে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ না নিলে জেলার শতশত খামারি পথে বসবে।
জেলা ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, গত এক থেকে দেড় বছরে বিভিন্ন অজুহাতে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। বিশেষ করে ভুট্টার গুঁড়া, সয়ামিল, গমের ভুসি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পাশাপাশি মিষ্টিসহ দুগ্ধজাত খাবারের দামও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে জেলায় দুধের দাম বাড়েনি বরং সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে শতশত খামারিকে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
পটুয়াখালী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেন, রমজানে মিষ্টির চাহিদা কমে যাওয়ায় দুধের চাহিদা কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে আমরা কাজ করছি।
এমআরআর/এএসএম
Advertisement