ফরিদপুর শহরের মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ভুল করে এক গৃহবধূর জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের মোহনমিয়া নতুনহাট এলাকার মো. রুবেল মোল্লার স্ত্রী। তিনি একটি পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছেন।
Advertisement
গত শুক্রবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় প্রসব ব্যথা নিয়ে ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলিতে অবস্থিত মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ওই অন্তঃসত্ত্বা নারীকে।
পরে ওই রাতে তড়িঘড়ি করে তার সিজার করানো হয়। সিজারের সময় ওই নারীর জরায়ু কেটে ফেলা হয়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ৩০৭ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ জাগো নিউজকে বলেন, কারা অপারেশন করেছে নাম বলতে পারবো না। তবে দেখলে চিনতে পারবো। আমার তো সারাজীবনের জন্য ক্ষতি হয়ে গেলো। আমি এর বিচার চাই।
Advertisement
গৃহবধূর শ্বশুর মো. রফিক মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, শুক্রবার (২৫ মার্চ) আমার ছেলের বউকে শহরের মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসি। সন্ধ্যায় আমার ছেলের বউকে নার্স ও আয়ারা বাচ্চা প্রসব করাতে ওটিতে নেয়। এসময় কোনো ডাক্তার আমরা দেখিনি। তারা কিছুক্ষণ পর এসে বলে রোগীর অবস্থা ভালো না। জরুরি সিজার করতে হবে। আধাঘণ্টা পরে বলে বাচ্চা এবং দুইজনের অবস্থাই খারাপ। বাচ্চা বাঁচলেও মা বাঁচবে না এবং মাকে বাঁচালে বাচ্চা বাঁচবে না।
তিনি বলেন, জরুরি রক্ত লাগবে বলে কাগজে সই করতে বলে। পরে আমাদের জানানো হয় আমার ছেলের বউয়ের জরায়ুর অবস্থা খুবই খারাপ তাই পুরোটা কেটে ফেলা হয়েছে।
রফিক মোল্লা আরও বলেন, আমাদের ধারণা ডাক্তার না থাকায় নার্স এবং আয়ারা মিলে সিজার করিয়েছে। সে কারণে আমার ছেলের বউয়ের সারাজীবনের সর্বনাশ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক নাসিরউদ্দিন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ডাক্তার দিয়েই এ সিজার করানো হয়েছে, নার্স কিংবা আয়া দিয়ে নয়। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। রোগী ও তার সন্তান সুস্থ আছে। হাসপাতালের তিনতলায় ৩০৭ নম্বর কেবিনে ভর্তি রয়েছেন।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। মীমাংসা হয়ে গেছে। তবে কীভাবে মীমাংসা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
তবে নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি শুনেছি। রোগী ও তার স্বজনরা আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। এ বিষয়ে আমার কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। তবে এ বিষয়ে আমার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো কথা বা যোগাযোগ হয়নি।
এ বিষয়ে জনতে চাইলে ডা. কল্যাণ কুমার সাহা জাগো নিউজকে বলেন, অপারেশনটি নার্স কিংবা আয়া নয় আমিই করেছি। কিন্তু অপারেশনটি করে তাদের উপকার করে আমি উল্টো হ্যারাজমেন্টের শিকার হচ্ছি।
তিনি বলেন, অপারেশনের আগে রোগী ও বাচ্চার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। বিষয়টি রোগীর অভিভাবক ও স্বজনদেরও বলা হয়। মা ও শিশু দুইজনই খুব ঝুঁকির মধ্যে ছিল। তাদের দুইজনকে অথবা যে কোনো একজনকে বাঁচানো সম্ভব বলেও তাদের জানানো হয়। জরায়ুর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। যার কারণে কাটা ছাড়া দুটি জীবন বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ডা. কল্যাণ কুমার আরও বলেন, জরায়ু কাটার আগেও রোগীর অভিভাবক ও তাদের স্বজনদের অনুরোধে তাদের লিখিত অনুমতি নিয়েই অপারেশন করা হয়েছে। বরং অপারেশন করার পর রোগী, অভিভাবক ও স্বজনরা অনেক খুশি হন এবং আবেগাপ্লুত হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেন।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, তিনি ঢাকায় একটি ট্রেনিংয়ে আছেন। বিষয়টি জানা নেই। ওই পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এন কে বি নয়ন/এমআরআর/এএসএম