স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুসের গল্পটা আমাদের সবারই জানা। ছয়বার যুদ্ধে হেরে গুহায় লুকিয়ে থাকার সময় একটি মাকড়শাকে দেখে অনুপ্রাণিত হন এবং সপ্তমবারের চেষ্টায় ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন তিনি। আবার, কালীপ্রসন্ন ঘোষের বিখ্যাত কবিতায় বলা আছে, ‘একবার না পারিলে দেখো শতবার’। অর্থাৎ, সাফল্য পেতে অধ্যাবসায়ের বিকল্প নেই। কিন্তু ওপরের ঘটনাগুলোকেও যেন ছাড়িয়ে গেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার এক নারী। একবার-দুবার কিংবা এক-দুইশবার নয়, রীতিমতো ৯৬১ বারের চেষ্টায় ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
Advertisement
ঘটনাটি ঘটেছিল এক দশকেরও বেশি সময় আগে। তবে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় আবারও ভাইরাল হয়েছে সেটি।
ওই নারীর নাম চা সা-সুন। ২০১০ সালে তিনি যখন ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তখন তার বয়স ছিল ৬৯ বছর। ৯৬০ বার ব্যর্থ হয়েও হাল না ছেড়ে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এবং অবশেষে সফল হওয়ার পর তাকে নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ায়।
আরও পড়ুন>> লাইসেন্স হাতে পেয়ে দেখলেন মেয়াদ শেষ ৬ বছর আগেই!
Advertisement
নিউইয়র্ক টাইমসের খবর অনুসারে, তিনি টানা তিন বছর সপ্তাহে পাঁচ দিন করে লিখিত পরীক্ষা দেওয়া চালিয়ে গেছেন। কোনো কিছুই তাকে পরীক্ষায় বসা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
এরপর ছিল আরও দুই বাধা: ড্রাইভিং স্কিল ও রোড টেস্ট। এক্ষেত্রেও প্রতিটিতে টানা চারবার করে অকৃতকার্য হন সা-সুন।
সবশেষে তিনি যখন পাস করেন, ততদিনে খরচ হয়ে গেছে ৫০ লাখ ওনের বেশি (প্রায় ৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা)।
আরও পড়ুন>> পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে লাগবে ডোপ টেস্ট সনদ
Advertisement
বর্তমানে ৮০ বছর বয়সোর্ধ্ব এ নারী দিদিমা জিওনবাংক ড্রাইভিং স্কুলে গাড়ি চালানো শিখেছিলেন। দীর্ঘদিনের চেষ্টায় তিনি যখন কৃতকার্য হন, তখন তার পাশাপাশি প্রশিক্ষকরাও সেই আনন্দ উদযাপন করেছিলেন।
পার্ক সু-ইয়ন নামে ড্রাইভিং স্কুলটির এক প্রশিক্ষক টাইমসকে বলেছিলেন, অবশেষে তিনি যখন লাইসেন্স পেলেন, আমরা সবাই উল্লাসে ফেটে পড়লাম এবং তাকে জড়িয়ে ধরলাম, ফুল দিলাম। মনো হলো, আমাদের পিঠ থেকে একটি বিশাল বোঝা নেমে গেলো।
তিনি বলেন, তাকে হাল ছেড়ে দিতে বলার সাহস ছিল না আমাদের। কারণ তিনি বারবার আসছিলেন।
আরও পড়ুন>> কুয়েতের স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সে গাড়ি চালানো যাবে সব দেশে
সা-সুনের এমন অনুপ্রেরণাদায়ক ঘটনা নজরে পড়ে দক্ষিণ কোরীয় গাড়িনির্মাতা হুন্দাইয়েরও। সংস্থাটিকে তাকে প্রায় ১৮ লাখ টাকার একটি গাড়ি উপহার দেয়। এমনকি, হুন্দাইয়ের একটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও অংশ নেন তিনি।
বারবার ব্যর্থ হওয়ার বিষয়ে এ বৃদ্ধা বলেছিলেন, আমি কিছু মনে করিনি। আমার কাছে প্রতিদিন ড্রাইভিং টেস্ট দিতে যাওয়া অনেকটা স্কুলে যাওয়ার মতো ছিল। আমি সবসময় স্কুল মিস করতাম।
গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাওয়া এত জরুরি ছিল কেন? সা-সুন জানিয়েছেন, তিনি জীবিকানির্বাহের জন্য বাড়িতে ফলানো সবজি বিক্রি করেন। তাই ব্যবসায় উন্নতির জন্য গাড়ি চালানো শেখা দরকার ছিল। তাছাড়া, নাতি-নাতনিদের চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাও ছিল তার।
সূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট, এনডিটিভিকেএএ/