মো. জিসান আহাম্মেদ ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার অলিপুর নয়াকান্দি গ্রামে। সেখানেই কেটেছে তার শৈশব-কৈশোরের সোনালি দিনগুলো। তিনি মতলব উত্তর উপজেলার অলিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চাঁদপুর সরকারি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
Advertisement
বর্তমানে তিনি প্রভাষক (হিসাববিজ্ঞান) পদে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর সরকারি কলেজে কর্মরত। সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার পেয়েছেন, আপনার অনুভূতি কী?জিসান আহাম্মেদ: ৪০তম বিসিএসের যেদিন রেজাল্ট দেয়; সেদিন আমি ব্যাংকে অফিস করছিলাম। হঠাৎ যখন দেখলাম যে আমার শিক্ষা ক্যাডার এসেছে, নিজের চোখকে যেন ক্ষণিক সময়ের জন্য বিশ্বাসই করতে পারিনি। এ যেন এক অন্যরকম ভালো লাগার বাঁধভাঙা অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। মনে হলো আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তব রূপ লাভ করলো।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?জিসান আহাম্মেদ: যখন অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ি; তখন থেকেই মূলত বিসিএসের প্রতি একরকম নেশা জন্মে যায়। বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে এমন নয়। বরং এক প্রকার নেশা থেকেই বিসিএসের প্রতি আসক্তি জন্মে যায়।
Advertisement
আরও পড়ুন: বিসিএস হচ্ছে ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?জিসান আহাম্মেদ: আমি যখন চাঁদপুর সরকারি কলেজে অনার্স থার্ড ইয়ারে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত; তখন গণিত ডিপার্টমেন্টের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শুকুর আলম স্যার বিসিএসের সিলেবাসের ধারণা দেন। তা ছাড়া আমার ডিপার্টমেন্টের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। বিশেষ করে তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান ও বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার পরিচালক প্রফেসর বেলাল হুসাইন স্যার আমাকে বিসিএস পরীক্ষা দিতে উদ্বুদ্ধ করেন। ডিপার্টমেন্টের পড়ার এত চাপ থাকা সত্ত্বেও আমার বিসিএস পড়া থেমে থাকেনি। উল্টো আরও গতি সঞ্চার হয়েছে। কারণ বিসিএসের প্রতি এক ধরনের পাগলাটে নেশা থাকে। আমার মতে, বিসিএস এক নেশার নাম, প্যাশনের নাম। যে নেশায় পড়লে জাগতিক সবকিছু তুচ্ছ মনে হয়, শুধু বিসিএসই ধ্যান-জ্ঞান মনে হয়। তারপরও হিসাববিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের পড়ার চাপ সামলে বিসিএস পড়া যথেষ্ট কঠিনই ছিল। এরপরও ভালো লাগা থেকে বিসিএস নিয়ে পড়তাম। বিসিএসের প্রতি এক ধরনের আসক্তি, নেশা ও ভালো লাগা থেকেই বিসিএসের পড়া শুরু আমার। প্রস্তুতিটা শুরু হয় চাঁদপুর সরকারি কলেজের শহীদ জিয়া হলের ৩০১ নম্বর রুম থেকে।
জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?জিসান আহাম্মেদ: যে কোনো সফলতার পেছনেই অনুপ্রেরণা একটা বড় জিনিস। অনুপ্রেরণা ছাড়া সফলতা ধরা দেয় না। আমার বিসিএস জার্নিতে পর্দার আড়াল থেকে যে মানুষগুলো সার্বিক সহযোগিতা করেছেন, তিনি হলেন আমার বাবা। বাবা সব সময় সাহস দিয়ে যেতেন। তারপর যে মানুষটি সহযোগিতা করেছেন তিনি আমার খালাতো ভাই জাকির হোসেন। তিনি আমার মধ্যে বিসিএসের নেশা জাগিয়ে তুলেছিলেন। ক্যাডার হতে হবে এমন এক বোধ জন্ম নিয়েছিল আমার মধ্যে। তার দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা ছাড়া আজকের এই অবস্থানে আসা কঠিন হতো।
জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএস প্রিলির জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?জিসান আহাম্মেদ: নতুনদের বিসিএস প্রিলির জন্য পড়াশোনায় লেগে থাকতে হবে। যার যার দুর্বল জায়গাগুলোয় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রচুর মডেল টেস্ট দিতে হবে (এজন্য বাজারে বই আছে)। তা ছাড়া কেউ যদি অন্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে চায় তাহলে যে কোনো একটি ভালো কোচিংয়ে পরীক্ষা ব্যাচে ভর্তি হবে। নিজের প্রস্তুতি অন্যদের তুলনায় কীরকম, তা যাচাই করতে পারে। কোথায় কোথায় বা কোন কোন বিষয়ে প্রস্তুতির ঘাটতি আছে, তা নিজেকেই আবিষ্কার করতে হবে। এমনভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, যাতে বিসিএস প্রিলির প্রশ্নের প্যাটার্ন বুঝতে পারা যায়। মনে রাখতে হবে, বিসিএস প্রিলির ক্ষেত্রে প্রশ্নের প্যাটার্ন বোঝাটা জরুরি। যেমন প্রশ্ন সহজ এলে একটু বেশি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, আবার প্রশ্ন কঠিন এলে অযথা দাগানো যাবে না। কিছুটা কম প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। বেশি পড়াশোনা, বিগত বিসিএসের প্রশ্নের পর্যালোচনা ও মডেল টেস্ট দিয়ে প্রশ্নের প্যাটার্ন বুঝতে হবে। বিসিএস প্রিলি কঠিন নয়। সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বিসিএস প্রিলি পাস করা সহজ হবে। বিসিএস প্রিলির জন্য সমমনা বন্ধুদের সঙ্গেও গ্রুপ করে পড়াশোনা শেয়ার করা যায়। এতে কার্যকর হয়, মনে থাকবে পড়াগুলো।
Advertisement
আরও পড়ুন: নিম্নবিত্ত কৃষক পরিবার থেকে শিক্ষা ক্যাডারে রেজাউল
জাগো নিউজ: প্রিলি শেষ করার পর বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?জিসান আহাম্মেদ: প্রিলি শেষ করার পর বিসিএস লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। বিগত বিসিএস লিখিত প্রশ্নাবলি দেখে প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা নিজের মধ্যে তৈরি করে নিতে হবে। আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নগুলো কমন পড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। যে কোনো বিষয় সম্পর্কে যেটুকু ধারণা আছে; সেটুকু গুছিয়ে সুন্দরভাবে লিখতে পারার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। তা ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডাটা, চার্ট, কোটেশন, উক্তি এগুলো নোট করে নিতে হবে। সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে তাহলেই সুন্দর ও গোছানো প্রস্তুতি হয়ে যাবে।
জাগো নিউজ: বিসিএস ভাইবার প্রস্তুতি কেমন হতে হয়?জিসান আহাম্মেদ: বিসিএস ভাইবার জন্য আত্মবিশ্বাস রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভাইবায় কী প্রশ্ন করবে, সেটি অনেকটা ভাগ্যের ওপরও নির্ভর করে। তবে ভাইবার ক্ষেত্রে ইংরেজিতে স্পিকিং প্র্যাকটিস করাটা জরুরি। বিসিএস ভাইবায় ইংরেজিতে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে ইংরেজিতে উত্তর দিতে হবে। বর্ণনামূলক প্রশ্নগুলো গুছিয়ে পজিটিভলি উত্তর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিসিএস ভাইবার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসটা অনেক বড় ফ্যাক্ট। নিজের একাডেমিক বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয়, নিজ জেলা, উপজেলা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু, সংবিধান, নিজ সম্পর্কে (ইংরেজিতে), সাম্প্রতিক ঘটনা এবং বিসিএসে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পছন্দ সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?জিসান আহাম্মেদ: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীদার হওয়া। পাশাপাশি ফ্যামিলি ও আত্মীয়-স্বজনের উপকারে যেন আসতে পারি। তাদের কল্যাণার্থে যেন কাজ করতে পারি, তার জন্য নিজেকে গড়ে তোলা। যেহেতু শিক্ষকতা পেশায় আছি, চেষ্টা করবো আগামীর জন্য স্বশিক্ষিত জাতি গঠনে অংশীদার হতে।
এসইউ/জিকেএস