চার বছর আগে ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৭ নিহত হন। এরপর এই ভবন নির্মাণে নানা অনিয়মের বিষয়গুলো বেরিয়ে আসতে থাকে। কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়েরে ওই ভবনের জমির মূল মালিক ছিলেন প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুক। অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ভবনটি নির্মাণ করে রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেড। সে কারণে সংক্ষেপে ভবনের নাম হয় এফআর টাওয়ার।
Advertisement
এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিল্টন দত্ত বাদী হয়ে মামলা করেন। ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক সমীর চন্দ্র সূত্রধর আদালতে চার্জশিট দেন।
সেখানে এস এম এইচ আই ফারুক, তাজভীরুল ইসলাম, সেলিম উল্লাহ, এ এ মনিরুজ্জামান, সৈয়দ আমিনুর রহমান, ওয়ারদা ইকবাল, কাজী মাহমুদুন নবী ও রফিকুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খানকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। তবে মামলাটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত না হওয়ায় পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন আদালত।
গত ১৫ মার্চ এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। ওইদিন পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় আদালত আগামী ২ মে পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।
Advertisement
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের পর নকশা জালিয়াতি ও ভুল নকশা অনুমোদনের ঘটনায় দুদকের দুই মামলার বিচার শুরু হলেও সাক্ষ্যগ্রহণে তেমন অগ্রগতি হয়নি।
এফআর টাওয়ারে অগ্নিদুর্ঘটনার-ফাইল ছবি
আরও পড়ুন: দুই শর্ত পূরণ হলেই এফআর টাওয়ার চালু
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)- এর পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আদালতের নির্দেশে এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার মামলাটি অধিকতর তদন্তের কার্যক্রম শুরু করেছি। এখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে সাক্ষ্য নিচ্ছি। সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবো।
Advertisement
সাক্ষ্যগ্রহণে আটকা দুদকের দুই মামলা
ঢাকার বনানীর এফআর টাওয়ারের নকশা জালিয়াতির অভিযোগে ভবন মালিক ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলসহ চার জনের বিচার চলছে। ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ কামাল হোসেনের আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এ মামলায় মোট সাক্ষী ৪০ জনের মধ্যে মাত্র ৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ২৭ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলার অপর আসামিরা হলেন-রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন খাদেম, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ইজারা গ্রহীতা সৈয়দ মো. হোসাইন ইমাম ফারুক (এস এম এইচ আই ফারুক) ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান।
এদিকে রাজউকের ছাড়পত্র ইস্যু, ফি জমা, ভুয়া ও নকশা অনুমোদন না নিয়ে ভুয়া নকশা তৈরি করে এফআর টাওয়ারের ১৯তলা থেকে ২৩তলা পর্যন্ত নির্মাণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্ধক, বিক্রি ও অগ্নিকাণ্ডে জনসাধারণের জানমালের ক্ষতির কারণে দুদকের উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ২৫ জুন কমিশনের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: এফআর টাওয়ার নির্মাণে ত্রুটি, তদন্ত প্রতিবেদনে দোষী ৬৭ জন
রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারের নকশা জালিয়াতির মামলায় ভবনটির মালিক সৈয়দ মো. হোসাইন ইমাম ফারুক (এস এম এইচ আই ফারুক) ও রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ সৈয়দ কামাল হোসেন।
অপরদিকে এ মামলার ঘটনাকালীন তত্ত্বাবধায়ক মো. মোফাজ্জেল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল বাকীকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মামলায় মোট ৪৬ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র সাত জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৬ এপ্রিল দিন ধার্য রয়েছে।
আরও পড়ুন: এফআর টাওয়ার কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল ফায়ার সার্ভিস
বিচার শুরু হওয়া ১৬ আসামি হলেন—এফআর টাওয়ারের মালিক সৈয়দ মো. হোসাইন ইমাম ফারুক (এস এম এইচ আই ফারুক), রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল, এফআর টাওয়ার ওনার্স সোসাইটির সভাপতি কাসেম ড্রাইসেলের এমডি তাসভীর-উল-ইসলাম, রাজউকের সাবেক পরিচালক মো. শামসুল আলম, সহকারী পরিচালক শাহ মো. সদরুল আলম, সহকারী অথরাইজড অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক জাহানারা বেগম, সহকারী পরিচালক মেহেদউজ্জামান, রাজউকের উচ্চমান সহকারী মো. সাইফুল আলম, ইমারত পরিদর্শক (নকশা জমা গ্রহণকারী) ইমরুল কবির, ইমারত পরিদর্শক মো. শওকত আলী, উচ্চমান সহকারী মো. শফিউল্লাহ, সাবেক অথরাইজড অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম, নিম্নমান সহকারী মুহাম্মদ মজিবুর রহমান মোল্লা, অফিস সহকারী মো. এনামুল হক ও শওকত আলী।
জেএ/এসএইচএস/জেআইএম