রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। বছরের অন্য মাসগুলোর তুলনায় এ মাসের মর্যাদা অধিক। কোরআন নাজিলের মাস হওয়ায় এ মাসটি বরকতময়ও বটে। এ মাসে রোজাদারের জন্য রহমতের দরজা খোলা। কোরআন ও হাদিসে এ মাসের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে-
Advertisement
১. কোরআন নাজিলের মাস
মানব জাতির মুক্তির সনদ কোরআনুল কারিম এ মাসেই একত্রে লওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে বাইতুল ইজ্জতে অবতীর্ণ হয়। এ মাসেই সর্বপ্রথম নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অহি অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ
Advertisement
‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে। যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)।
২. রোজাদারের জন্য রহমতের দরজা খোলা
রমজান মাসেই রোজাদারের জন্য রহমতের দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘রমজান মাস শুরু হলেই রহমতের দরোজা খুলে দেওয়া হয়।’ (বুখারি ১৮৯৯, মুসলিম ১০৭৯)
৩. জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া
Advertisement
রোজাদারের জন্য পবিত্র মাস রমজানে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজান মাস শুরু হলে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি ১৮৯৯, মুসলিম ১০৭৯)
৪. শয়তানকে আবদ্ধ করে রাখা হয়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজান মাসের শুভাগমন উপলক্ষে জান্নাতের দরোজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরোজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’ (বুখারি ১৮৯৯, মুসলিম ১০৭৯)
৫. জাহান্নাম থেকে মুক্তি
জাহান্নাম থেকে নাজাতের মাস রমজান। সুতরাং এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত ও ইস্তেগফার পড়া। এটি ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে মুক্তির পরোয়ানা পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক দিন ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমদ ২১৬৯৮)
৬. রমজানের ওমরাহ হজ সমতুল্য সওয়াব
রমজান মাস ব্যবসায়ী ও সাবলম্বীদের জন্য একটি বিশেষ মৌসুম। এ মাসে ওমরাহ পালন করলেই মিলবে হজের সমতুল্য সওয়াব। আর হজের প্রতিদান শুধু জান্নাত। এ মাসের প্রতিটি আমলের অনেক গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের ওমরাহ হজ সমতুল্য।’ (তিরমিজি ৯৩৯, আবু দাউদ ১৯৮৬)
৭. রমজানের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি পায়
রমজান মাসে রোজা রেখে নফল আদায় করলে অন্য মাসের ফরজের ন্যায় সওয়াব হয়। আর এ মাসের এক ফরজে অন্য মাসের ৭০ ফরজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল, সে যেনো অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেনো অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল।’ (শুআবুল ঈমান ৩/৩০৫-৩০৬)
৮. রোজার প্রতিদান দেবেন আল্লাহ
রমজানের রোজার প্রতিদান কোনো ফেরেশতা লিখবেন না। এ মাসের রোজার প্রতিদান দেবেন স্বয়ং আল্লাহ। হাদিসে কুদসিতে এসেছে-
يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ الصَّوْمُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَأَكْلَهُ وَشُرْبَهُ مِنْ أَجْلِي، وَالصَّوْمُ جُنَّةٌ، وَلِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ حِينَ يُفْطِرُ وَفَرْحَةٌ حِينَ يَلْقَى رَبَّهُ، وَلَخَلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ
‘আল্লাহ তাআল বলেন, মানুষের অন্য সব আমল তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা একান্তই আমার জন্য এবং আমি এর জন্য তাকে পুরস্কৃত করব। রোজা ঢালস্বরূপ। তার নামে বলছি, যার হাতে মুহাম্মদের জীবন, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের গন্ধের চেয়েও পবিত্র। একজন রোজাদার দু’টি আনন্দ লাভ করে। সে আনন্দিত হয় যখন সে ইফতার করে এবং রোজার কল্যাণে সে আনন্দিত হয় যখন সে তার প্রভুর সাথে মিলিত হয়।’ (বুখারি)
এমএমএস/জেআইএম