মতামত

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখুন

বৈশ্বিক সংকট ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বেই প্রায় সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তাই আমাদের ভোক্তাদের এবং ব্যবসায়ীদের উভয় পক্ষের যৌথভাবে কাজ করে যেতে হবে। যাতে বাজারে পণ্যর দাম স্বাভাবিক থাকে।

Advertisement

ভোক্তাদের কোনো গুজবে কান দেওয়া যাবে না। সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে অনেক সময় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তাই আমাদেরকে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। বাজার সিন্ডিকেট করা যাবে না। কালোবাজারি বা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো হয়।

কালোবাজারি সরাসরি প্রতারণা, জুলুম ও আর্থিক অস্বচ্ছতা প্রকাশ করে। তাই ব্যবসায়ীদের কালোবাজারি বন্ধ করতে হবে। সমাজে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ কাজ করে যাচ্ছে। তাই তাদেরকে অনুরোধ করবো সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে বাজারে কালোবাজারি বা সিন্ডিকেট বন্ধ করুন।

পবিত্র রমজান সংযমের মাস। কিন্তু রমজানে অনেক ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এসব পণ্যের বেশির ভাগই আমদানিনির্ভর। ডলার সংকটের কারণে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। এ কারণে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রায় ২৫ বা তার বেশি শতাংশ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

Advertisement

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত। তাই ডলারের সরবরাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিদিনই পণ্যের দাম বাড়ছে, সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছে। আমাদের জীবনে অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস দরকার; চাল, তেল এবং পেঁয়াজ তাদের মধ্যে অন্যতম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রমজানে তেল, মসুর, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুরের চাহিদা বাড়বে। যেমন, ভোজ্যতেলের চাহিদা দেড় লাখ টন যেখানে রমজানে এই চাহিদা দাঁড়ায় তিন লাখ টনে।

একইভাবে মাসিক চিনির চাহিদা দেড় লাখ টন থেকে বেড়ে তিন লাখ টনে এবং খেজুরের চাহিদা ৫ হাজার টন থেকে বেড়ে ৫০ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের দামও বাড়বে। ফলে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। তাই রমজানে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায়, সাধারণ ভোক্তাদের অনেক সমস্যা হতে পারে।

ভোক্তার ওপর চাপ কমাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর সুপারিশ করা যেতে পারে। আর কী কী বিকল্প আছে, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত। উদাহরণস্বরূপ,সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা থাকা উচিত যাতে কোনও ক্রেতা একবারে এক মাস বা তার বেশি পণ্য কিনতে না পারে। ক্রমবর্ধমান ডিম,মুরগি ও তেলের দাম বৃদ্ধি নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রায় এক হাজার টাকা, যা আগে ছিল ৫১০ বা ৫৩০ টাকা।

সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলেছে। গরিব মানুষের কথা ভাবার সময় নেই তাদের। কোনো দ্রব্যের দাম একবার বাড়লে আর কমে না। এটি এখন একটি সাধারণ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কাম্য। তা না হলে ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সতর্ক থাকতে হবে।

Advertisement

উচ্চমূল্য এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ক্রয়ক্ষমতার অক্ষমতার কারণে কিছু পরিবার প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী কিনতে পারে না। তবে এ অবস্থার জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং না থাকা এবং ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক মুনাফাকে দায়ী করছেন সাধারণ ক্রেতারা। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি জেলার প্রতিটি বাজারে প্রশাসনিক নজরদারি বাড়াতে হবে।

সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে নেই। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলেরও। জাতীয় ভোক্তা সুরক্ষা অধিদপ্তরের নৈতিক দায়িত্ব অবশ্যই যথাযথভাবে পালন করতে হবে। সরকারি কার্যক্রম আরো গতিশীল ও সক্রিয় হতে হবে। আপনি যদি বিভিন্ন বড় বাজার জরিপ করেন,আপনি দেখতে পাবেন কিভাবে রমজান মাসে পণ্যের দাম ওঠানামা করে। রমজান শুরুর এক সপ্তাহ আগে ও পরে দামের পার্থক্য বেশ বড়।

রমজান শুরু হলেই আমাদের দেশে পণ্যের দাম বেড়ে যায়; এটা নতুন নয়। তবে অন্যান্য দেশে উৎসবের সময় দাম কমানো হয় বলে শুনেছি। পবিত্র রমজানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পণ্যের দাম কমানো হয়। তাছাড়া বড়দিনে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায় বাজারে। কিন্তু আমাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত।

রমজান মাস এলেই আমাদের দেশের খুচরা, মাঝারি, বড় ব্যবসায়ীরা সাধারণ ভোক্তাদের পকেট কাটার উৎসবে মেতে ওঠেন। অর্থাৎ ব্যবসায়ীদের সংযমী হতে হবে এবং অল্প করে লাভ করুন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত তদারকি করতে হবে। রমজানে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ভোক্তাদের প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সহজেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে প্রচুর মুনাফা করতে পারে। যা মোটেও যৌক্তিক নয়। অধিকন্তু, বেশিরভাগ ভোক্তা আসল এবং নকল পণ্যের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। ফলে তারা প্রায়ই সমস্যায় পড়েন। তাই ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং প্রচুর প্রচার করা উচিত যাতে সাধারণ নাগরিকরা কীভাবে সঠিক পণ্য কিনতে হয় সে সম্পর্কে সচেতন হন।

কোনো অন্যায় দেখলে ক্রেতাদের প্রতিবাদ করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কিত যে কোনো নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় ভোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে যাতে তারা তাদের অধিকার প্রকাশ করতে পারে। বৈশ্বিক সংকটে ভোক্তাদের সাশ্রয়ী হতে হবে।

অতীতে পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে টিসিবি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি শুরু করে। এ বছর টিসিবি এই উদ্যোগ গ্রহণ করুক। এতে সাধারণ ভোক্তাদের অনেক উপকার হবে। নিঃসন্দেহে এটি সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সব সিটি কর্পোরেশনের অধীনে প্রতিটি এলাকায় ডিলার এবং ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকিযুক্ত পণ্য বিক্রি করা একান্ত জরুরি। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সরকারকে এগিয়ে আসে সর্বদা কিন্তু আমাদের সচেতন হতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের উচিত হবে পণ্য মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে রাজনীতি না করা। বরং ভোক্তাদের স্বার্থে সরকারকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ,জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।

এইচআর/জেআইএম