রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নে একদল শিক্ষার্থীর উদ্যোগে চালু হয়েছে বাজার। যে বাজারে মিলছে ৫০ টাকায় পৃথকভাবে মাছ-মাংস এবং ১০ টাকায় তেল, চিনি, ডালসহ বিভিন্ন পণ্য। বাজারের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাধ্যের বাজার’।
Advertisement
মূলত এটি একটি দোকান। নিম্ন ও স্বল্প আয়ের লোকজন সেখানে গিয়ে সাধ্যের মধ্যে ওই খাদ্যপণ্যগুলো কিনতে পারছেন। এরইমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই দোকান।
রমজান মাস উপলক্ষে রংপুর সদর উপজেলার বালাচওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এই দোকান দেওয়া হয়েছে। বাজারের মূল উদ্যোক্তা কলেজশিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বালাচওড়া এলাকার আরও আট কলেজশিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে এই বাজারের উদ্বোধন করা হয়। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সাধ্যের বাজারে চলে বেচাকেনা।
Advertisement
স্থানীয় দিনমজুর সোলেমান আলী বলেন, বাজারে একটা ব্রয়লার মুরগি কিনতে গেলে কমপক্ষে ৩০০-৪০০ টাকা লাগে। কাটা মাংসও আধা কেজির নিচে পাওয়া কষ্টকর। সেখানে ৫০ টাকা দিলেই এই দোকান থেকে প্রয়োজনীয় মাংস পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয় সমাজসেবক মনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, যদি তরুণরা তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা-চেতনার বিকাশ না ঘটাতে পারে।
রংপুর সদর উপজেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি আরজিনা বেগম বলেন, আমাদের তরুণরা এতো সুন্দর আয়োজন করে দরিদ্র দিনমজুরের কথা ভেবেছে এটা ভাবতেই অনেক গর্ববোধ করছি।
রংপুর সদরের চন্দনপাট ইউনিয়নের হরিপুর, বৈকুণ্ঠপুর ও বদরগঞ্জের গোপালপুর ইউনিয়নের বালাচওড়া, শিবপুর, হল্লাইপাড়া, কুঠিপাড়া, দক্ষিণটারী, ছোট শিবপুর, বড় শিবপুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন ‘সাধ্যের বাজার’ থেকে সাধ্যমতো খাদ্যদ্রব্য কিনছেন।
Advertisement
সাধ্যের বাজারের উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, শবে বরাতের দিন তিনি স্থানীয় শ্যামপুরহাটে বাজার করতে গেলে ব্রয়লার মুরগির দোকানে দেখতে পান একজন ভিক্ষুক ৫০ টাকার মাংস চাচ্ছেন। কিন্তু দোকানদার তাকে মাংস না দিয়ে ফিরিয়ে দেন। বিষয়টি তিনি এলাকায় ফিরে বন্ধুদের জানান। সবাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন তারা রমজানে এমন একটি বাজার করবেন, যেখানে ১০ টাকা থেকে শুরু করে মানুষ তার সামর্থ্য অনুযায়ী খাদ্যপণ্য কিনতে পারেন। এরই ধারাবাহিকতায় সাধ্যের বাজার নামে দোকানটি দেওয়া হয়েছে। সবাই মিলে তারা মূলধন বিনিয়োগ করেছেন। পাইকারি দরের সঙ্গে পরিবহন খরচ যোগ করে খাদ্যপণ্য সেখানে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ওই দোকান থেকে দেড় শতাধিক মানুষ খাদ্যপণ্য কিনছেন।
দেলোয়ার হোসেন আরও জানান, প্রথম দিন ৯ হাজার ৭৩০ টাকা, দ্বিতীয় দিন ৮ হাজার ৯০০ টাকা, তৃতীয় দিন ৯ হাজার ১২০ টাকা এবং চতুর্থ দিন ১১ হাজার ৫০ টাকার বিক্রি হয়েছে। তাদের দোকানে গরুর মাংস, মুরগির মাংস, ডিম, তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, খেজুর ও বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
সাধ্যের বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা পলাশ চন্দ্র দাস বলেন, খাদ্যপণ্য আমরা কেনা দামে বিক্রি করছি। প্রতিদিন রংপুর শহরের পাইকারি বাজার থেকে এসব পণ্য কিনে আনা হয়।
চন্দনপাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) আমিনুর রহমান বলেন, গ্রামের তরুণ প্রজন্ম যে ভালো কিছু করছে, তার প্রমাণ ‘সাধ্যের বাজার’। তাদের এ উদ্যোগের জন্য গ্রামের দিনমজুর, নিম্ন আয়ের মানুষ সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটা করতে পারছেন। এ উদ্যোগ অবশ্যই অনুকরণীয়।
জিতু কবীর/এফএ/এএসএম