দেশজুড়ে

পানি নিয়ে উপকূলের হাহাকার এখন খুলনা নগরীতে

শুষ্ক মৌসুমে খুলনার উপকূলজুড়ে শুরু হওয়া সুপেয় পানির জন্য হাহাকার এখন মহানগরীতে এসে ঠিকেছে। উপকূলের মানুষ মাইলের পর মাইল হেঁটে পানি সংগ্রহ করেন আর নগরবাসীকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে গভীর রাতে লাইনে দাঁড়িয়ে। নগরীতে এখনও যেসব নলকূপে পানি উঠছে সেখানেই গভীর রাতে দেখা মিলছে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন। রমজানের সাহরির চেয়ে তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সুপেয় পানি।

Advertisement

আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ করে নগরবাসীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে সরবরাহ করা পানি পানযোগ্য না হওয়ায় এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গভীর নলকূপ নির্ভর এই প্রকল্প থেকে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তাও মিলছে না অনেকের ভাগ্যে। নতুন নিয়মে পানি সরবরাহ করায় আরও বেশি বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আওতায় থাকাকালীন নগরীতে যেসব নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে, সেই নলকূপগুলোই সুপেয় পানির একমাত্র ভরসা। তবে চলতি শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এই নলকূপগুলোও এখন অকেজো হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু নলকূপে গভীর রাতে মিলছে পানি। আর সেই নলকূপের কাছেই রাতে ভিড় করছেন নগরবাসী। অনেক পরিশ্রম করেই এই নলকূপ থেকে তুলতে হচ্ছে পানি।

এদিকে খুলনা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, রমজান মাসের শুরু থেকেই নতুন নিয়মে সরবরাহ করা হচ্ছে পানি। যেসব পাম্প থেকে পানি সরবরাহ করা হয় সেসব পাম্পের পাশে টাঙানো হয়েছে পাম্প চালানোর সময়সূচি। এই সময়ের বাইরে মূল প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহ করা হবে।

Advertisement

নতুন সময় অনুযায়ী, সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা, দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পাম্প চালু রাখা হবে। এই সময়ের বাইরে মধূমতি নদীর পানি সরবরাহ করা হবে।

নগরবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদেরকে জানানো হয়েছে নতুন নিয়মে পাম্প চালুর পর যে সময় থাকবে সেই সময়ে প্লান্ট থেকে পানি সরবরাহ করা হবে। কিন্তু সেই পানিও চোখে দেখা যায় না। তাছাড়া পাম্পগুলোর পানিও ঠিকমতো আসে না। ফলে রমজান মাসে পানির জন্য খুব অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।

খুলনা মহানগরীর সাতরাস্তা মোড় এলাকার বাসিন্দা সুলতানা রহমান বলেন, ওয়াসার পানি খুব বেশি পাওয়া যায় না। ফলে বাড়ির মধ্যে স্থাপন করা নলকূপ থেকে পানি না উঠলে খুব বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। শীতকালে ওয়াসার পানি মোটামুটি পাওয়া গেলেও এখন তা মিলছে খুবই কম। পানিতে থাকছে গন্ধ আর লবণাক্ততা। মাঝে মাঝে ঘোলা পানিও আসছে। যা ট্যাংকিতে জমা হয়ে যাচ্ছে।

ময়লাপোতা এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বকুল জানান, তার বাড়িতে ওয়াসার সংযোগ রয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিন ঠিকমতো পানি পাওয়া যায়নি। আশপাশে পুকুর বা খাল-বিল না থাকায় ওয়াসার পানির ওপর নির্ভর করতে হয় তাকে। কিন্তু এখন সেই পানিও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না।

Advertisement

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ মো. আশরাফ উজ জামান বলেন, খামখেয়ালীভাবে গত বছর খুলনা ওয়াসা পানির দাম বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু সেই অনুপাতে এখন পানি দিতে পারছে না।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বছরের শুষ্ক মৌসুমের ৬-৭ মাস ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে তা ব্যবহারের উপযোগী নয়। ওই পানি দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত। সেই ময়লাযুক্ত পানি খুলনার গ্রাহকদের সরবরাহ করা হয়।

তবে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, চলতি শুষ্ক মৌসুমে পানি সরবরাহ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে লবণাক্ততা কমানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

এফএ/জিকেএস