পবিত্র রমজান মাস বিশ্বের মুসলিমদের কাছে অনন্য। পুরো মাস আনন্দের সঙ্গে সিয়াম সাধনা করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক দুদর্শার কারণে দেশটির সাধারণ মানুষ এই রোজার মাসেও কষ্টে দিন পার করছেন। অনেকের খাবার প্লেটে জুটছে শুধু চা আর রুটি।
Advertisement
২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশটিতে দৈনন্দিন ব্যয় আর খাবারের দাম আকাশচুম্বী হয়ে যায়। অধিকাংশ মানুষ কর্মক্ষম হলেও বেকার হয়ে পড়েছেন।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, দেশটির ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ খাদ্য সহায়তার জন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীল।
আরও পড়ুন> সংকট কাটেনি, খাদ্যের সন্ধানে রাস্তায় কাবুলের শিশুরা
Advertisement
কিন্তু সেই সহায়তাও সীমিত। কেননা বড় বড় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তালেবান সরকারের সঙ্গে কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।
বেশির ভাগ দেশেই রমজান মাসে সেহরি ও ইফতারে সুস্বাদু খাবারের আয়োজন করে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। কিন্তু বর্তমানে আফগান পরিবারগুলোর সেই সামর্থ্য নেই।
কাবুলের একটি কিন্ডারগার্টেনের প্রধান ও সাবেক নারী মানবাধিকার কর্মী শামসিয়া হাসানজাদা আরব নিউজকে বলেন, ‘আগে আমরা ইফতার ও সেহরি তৈরি করতাম একসঙ্গে এবং শুধু নিজেদের জন্য নয়। নিরাপত্তাকর্মী ও আমাদের আশেপাশে বসবাসকারী লোকজনকে নিয়েও ইফতারের আয়োজন করা হতো। কিন্তু গ্রিন-টি ও শুকনো রুটি ছাড়া এখন আমাদের কিছুই নেই ‘
তিনি জানান, তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। সবাই আগে কাজ করতো। কিন্তু এখন একজন কাজ করেন। এই একজনের আয় পুরো পরিবারের খরচ চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
Advertisement
মোহাম্মদ নাঈম নামে কাবুলের এক বাসিন্দা বলেন ‘২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর থেকে দেশটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সেই আনন্দ উপভোগ করতে দেয়নি। বাড়িতে অনেক আর্থিক সমস্যার কারণে গত দুই বছরে নিজের জন্য এক টুকরো কাপড়ও তৈরি করতে পারেননি তিনি। গত কয়েক মাস ধরে পেনশন পাচ্ছেন না তিনি।
তিনি বলেন, আগে ইফতারে অনেক খাবারের আয়োজন থাকতো। সেহরিতেও থাকতো কয়েক ধরনের খাবার। কিন্তু এখন আমাদের কোনো খাবার নেই। বাজার থেকে মাংস কেনার সার্মথ্যও নেই। তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের আগে মোহাম্মদ নাঈম তৎকালীন প্রশাসনের অধীনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গাড়িচালক ছিলেন।
আরও পড়ুন> এক বছরে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বেড়েছে আফগানিস্তানে
আরেক মানবাধিকারকর্মী কারিশমা নাজারি বলেন, ‘সারাদিন রোজা রাখা ও তারপরে ইফতার ও সেহরির জন্য কিছুই না থাকা আমার ও অধিকাংশ আফগান পরিবারের জন্য বেদনাদায়ক। আমাদের বেশিরভাগেরই গ্রিন টি ছাড়া আর কিছুই নেই।’
তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানজুড়ে আমাদের অনেক ধনী লোকজন ছিল যারা অনেক দরিদ্র পরিবারকে দান ও সাহায্য করে আসছিল। তালেবান নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এসব মানুষও দেশ ছেড়ে চলে যান।’
৩৫ বছর বয়সী সাঈদ ওমর কাবুলের আগের প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করেছেন। গত ২ বছর ধরে পরিবারের ৯ সদস্যের খাবার জোটাতে যে কোনো কাজ করে আসছেন তিনি। প্রতিদিনই রোজগারের সুযোগ খুঁজতে শহরে যান কিন্তু প্রায়ই খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে।
তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারকে বাঁচানো কঠিন হয়ে গেছে। আগে আমাদের ইফতার ও সেহরিতে পর্যাপ্ত খাবার ছিল। আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে নিতাম। কিন্তু এখন আমি আমার পরিবার নিয়েই ব্যস্ত।’
২০ বছরের আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহার সমাপ্তি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর রাজধানী কাবুল দখল করে নেয় তালেবান। এরপর থেকে অরাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দেশটির অর্থনীতিতে ধস নেমে আসে। কার্যত অচল হয়ে পড়ে গোটা দেশ। বন্ধ হয়ে যায় বিদেশি সহায়তা। খাবারের সংকটে পড়ে আফগানরা তোশক-বালিশও বিক্রি করেছেন এমন খবরও পাওয়া যায়। তালেবানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে নানা ধরনের সংকট আর ভয়-ভীতির মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন আফগানরা।
সূত্র: আরব নিউজ
এসএনআর/টিটিএন/জেআইএম