ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ৮টি বিভাগে বিভক্ত। এরমধ্যে নানা কারণেই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ তেজগাঁও বিভাগ। এ বিভাগের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করছেন উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার। ২০১৩ সালের ৭ এপ্রিল থেকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অবদান রাখায় বিপ্লব কুমার সরকার ডিএমপি’তে পর পর ৫ বার শ্রেষ্ঠ ডিসির পুরস্কার পেয়েছেন। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি স্বরুপ মিলেছে পিপিএম ও বিপিএম পদকও। সম্প্রতি জাগো নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে উঠে এসেছে তার সফলতার কারণ ও কর্ম পরিকল্পনার কথা। পুলিশ অফিসার হিসেবে দায়িত্বের কথা। কাজের চ্যালেঞ্জ ও পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব কি তাও বলেছেন অকপটে। তিনি বলেন, এককভাবে সব কাজ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। টিমওয়ার্কিং, অদম্য চ্যালেঞ্জিং মানসিকতা ও ধৈর্য্যের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা একজন পুলিশ অফিসারের আসল যোগ্যতা। তবে পুলিশও মানুষ। মানুষ মাত্রই ভুল করে। কিন্তু পুলিশের পোশাকে দু’একজন অন্যায় কিংবা অপরাধ করলে আমরা পুলিশ বাহিনীর সব অর্জন ভুলে যাই। এভারেজে পুলিশের সমালোচনা হয়। হাজারো সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে যে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে হয় তা সবাই বুঝতে চায় না। জাগো নিউজকে দেয়া সাক্ষাতকারের দুটি পর্বের আজ থাকছে শেষ পর্ব। জাগো নিউজ: দীর্ঘদিন ধরে আপনি ডিএমপির গুরুত্বপূর্ণ জোন তেজগাঁওয়ের দায়িত্বে। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাসহ সবই সামলাচ্ছেন কি করে? বিপ্লব কুমার সরকার: পদ-পদবি বড় কথা নয়, বড় হচ্ছে দায়িত্ব। পুলিশ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। এখানে বিশৃঙ্খল লোকের সুযোগ নেই। পুলিশে যোগ্য লোকের অভাব নেই। কিন্তু সবাই সফল হন না। কাজের টিউনিং সবাই করতে পারেন না। বলতে পারেন কিছু যোগ্য লোকের সাহচর্য আমার মিলেছে। যে কারণে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাসহ সবই সামলানো যাচ্ছে। জাগো নিউজ: পুলিশের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে যদি বলতেন? বিপ্লব কুমার সরকার: পুলিশের হাজারো সীমাবদ্ধতা আছে। এর মাঝেও পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশের ট্রান্সপোর্টের সমস্যা রয়েছে। কর্মঘণ্টার শেষ নেই। জরুরি প্রয়োজন পড়লেও ছুটি বাতিল হয়ে যায়। পুলিশের কাছে যে সব অভিযোগ আসে তার অধিকাংশই পুলিশের দায়িত্বের বাইরে। তাই অনেক সমস্যার সমাধান অনেক ক্ষেত্রে করা সম্ভব হয় না। মানুষ কিছু হলেই থানায় আসে। মামলা, জিডি এসব করতে। কিন্তু এর মূলে যে সব কারণ তা কিন্তু ভূমি, প্রতিষ্ঠান, দলীয় ব্যাপার। ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে সমাধানে পুলিশের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আবার যেসব বিষয়ে পুলিশ দায়িত্বপ্রাপ্ত তা সম্পাদনের জন্য যে পরিমাণ লোকবল দরকার, তা পুলিশের নেই। আবাসন সমস্যা একটি বড় সমস্যা। অধিকাংশ থানার নিজস্ব ভবন নেই। যদিও সম্প্রতি সে দিকটায় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করছি অল্প কিছুদিনের মধ্যে তেজগাঁও বিভাগের সব থানারই নিজস্ব ভবন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের সীমাবদ্ধতা দূর করণে অনেক আগুয়ান। আগের চেয়ে পুলিশ এখন তাই বেশি রাষ্ট্রীয় সুবিধা অর্জন করেছে। জাগো নিউজ: মাঝে কিছু দিন পুলিশের উপর হামলার ঘটনা বেড়েছিল। যদিও এখন সে অবস্থা নেই। এই সময়টায় কতোটা চাপবোধ করেছেন? বিপ্লব কুমার সরকার: পুলিশ আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বপ্রাপ্ত। যারা দেশে অস্থিরতা চায়, শান্তি চায় না, তারাই মূলত: পুলিশকে টার্গেট করে চোরাগুপ্তা হামলা করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ চাপে রয়েছে এমন অনেকে ভাবলেও ভাবতে পারেন। তবে মনোবল ভাঙ্গেনি। পুলিশ শৃঙ্খলা। আর সে কারণে পুলিশও যথোপযুক্ত পাল্টাজবাব দিয়েছে শৃঙ্খলারক্ষা করেই। পুলিশ সিভিল ফোর্স। প্রয়োজনে পুলিশ ফোর্স করতে পারে। কিন্তু সে জন্য প্রেক্ষাপট লাগে। পুলিশ যাই করুক না কেন এর জবাবহিদিতা রয়েছে। পুলিশ চাইলেই সব কিছু করতে পারে না। আইনের বাধ্যবাধকতা মেনেই সব কিছু করতে হয়। জাগো নিউজ: ব্যক্তি পুলিশের দায় পুলিশ বাহিনী নেবে না এমন কথা বলেছেন আইজিপি। আপনিও কি এর সঙ্গে একমত? বিপ্লব কুমার সরকার: অবশ্যই একমত। পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। কিন্তু কোনো পুলিশ সদস্যই যদি অপরাধ করে বসে তবে এর দায় পুলিশ বাহিনী নেবে না। কারণ পুলিশ বাহিনী এই শিক্ষা কখনো দেয়নি। এর দায় তাই ব্যক্তির। তবে আমরা দু’একজন পুলিশ সদস্যের অপরাধকে ধরে পুরো বাহিনীকেই দোষারোপ করি। এটা মোটেও ঠিক নয়। যারা অপরাধ করছে তারা ঠিকই শাস্তিও পাচ্ছেন। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। আইনের কাছে সবাই সমান। জাগো নিউজ: আপনার বিভাগে কোনো পুলিশ সদস্য যাতে অপরাধ না করেন সে জন্য কি বিশেষ কোনো ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ নিয়েছেন? বিপ্লব কুমার সরকার: গালি দিলেই পুলিশ গুলি ছুড়বে এমন শিক্ষা পুলিশকে দেয়া হয়নি। আর এটাই পুলিশের বিশেষ সৌন্দর্যও বলতে পারেন। পুলিশ প্রশিক্ষিত। আর সে কারণে পুলিশের অপরাধ কেউ মানতে পারে না। তবুও পুলিশ সদস্যরা যে অপরাধ করে না তা নয়। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে তাদের অনেককে প্রত্যাহার, সাসপেন্ড করা হয়। আমার বিভাগেও ইতোপূর্বে দোষী সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশও পাঠানো হয়েছে সদর দফতরে। কেউ যাতে অপরাধ না করে সেজন্য শাস্তির নজির আমি স্থাপন করেছি। এর বাইরে কাউন্সিলিং তো আছেই। জাগো নিউজ: পুলিশের কি ক্ষমতা আছে, নাকি দায়িত্ব? অনেকেই এমন প্রশ্নে গোলক ধাধায় পড়েন। বিপ্লব কুমার সরকার: পুলিশের নিজস্ব কোনো ধরণের ক্ষমতা নেই। আছে দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব পালন করতে হয় পুলিশকে আইনের মধ্য থেকেই। আইন লঙ্ঘন নয় বরং যে শপথ নিয়ে পুলিশে আসা, সবাইকে আইনের মধ্য থেকেই সেই দায়িত্ব পালন করতে হয়। জাগো নিউজ: ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন। স্বপ্ন থাকলেও সবাই পুলিশ হতে পারে না। আপনার কি ইচ্ছে ছিল? বিপ্লব কুমার সরকার: কিশোরগঞ্জ সদরের করমপট্টি গ্রামে জন্ম। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে মেঝো আমি। ১৯৮৭ সালে এসএসসি ও ১৯৮৯ সালে এইচএসসি পাশের পর বোটানিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করেছি। ২১তম বিসিএস দিয়ে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান। বাবা অজিত চন্দ্র সরকার ছিলেন সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল। ছোট বেলায় পরিবারের ইচ্ছে ছিল আমি ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবো। তবে, ক্যারিয়ার জীবনে এসে পট পরিবর্তন হয়। পুলিশই একমাত্র পেশা যেখানে সরাসরি মানুষের জন্য কাজ করা যায়। এতো সুযোগ অন্য কোনো পেশায় নেই। প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তেই মানুষের সেবা করা সম্ভব। একটা পরামর্শ দিয়েও মানুষের সেবা পুলিশ থেকে করা যায়। সে চিন্তা থেকে এই বাহিনীতে আসা।জেইউ/এমএমজেড/পিআর
Advertisement