দেশজুড়ে

ভালোই আছেন বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের ভাই-ভাতিজারা

দেশের সাত বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে সিপাহি মোস্তফা কামালের জন্ম ভোলায়। এ বীরসন্তানের বাবার বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলার পশ্চিম হাজীপুর গ্রামে। তবে ১৯৮২ সাল থেকে তার পরিবারের সদস্যরা ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামে ‘শহীদ স্মরণিকা মোহাম্মদ মোস্তফা বীরশ্রেষ্ঠের পরিবার নিবাস’-এ বসবাস করে আসছেন।

Advertisement

২০০৫ সালে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের বাবা হাবিবুর রহমান মারা যান। ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মারা যান তার মা মালেকা বেগম। বর্তমানে মোহাম্মদ মোস্তফা বীরশ্রেষ্ঠের পরিবার নিবাসে বীরশ্রেষ্ঠের ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমানের ও তার দুই ছেলে বসবাস করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতির এ সূর্যসন্তানের স্বজনরা বর্তমানে ভালোই আছেন।

যেমন আছেন বীরশ্রেষ্ঠের ভাই ও ভাতিজারা

বীরশ্রেষ্ঠের ছোট ভাই মো. মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে ঢাকায় মাঠ পরিচালকের চাকরি করতেন। ২০০৫ সালে তার বাবা হাবিবুর রহমানের মৃত্যুর পর চাকরির বয়স সাত বছর থাকতেই ওই চাকরি ছেড়ে দেন। বর্তমানে তিনি তার দুই ছেলের সঙ্গে থাকছেন। তার বড় ছেলে মো. সেলিম (লিটন) বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল মহাবিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন। ছোট ছেলে মো. শাহীন এলাকায় ডিশ ও ইন্টারনেটের ব্যবসা করেন।

Advertisement

বীরশ্রেষ্ঠের ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, তার বড় ভাই একজন বীরশ্রেষ্ঠ। এটি তার জন্য গর্বের।

তিনি বলেন, ‘বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল যখন স্বাধীনতা যুদ্ধে যান তখন আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তাম। শেষবার যখন তিনি বাড়ি থেকে যান তখন তার জামা-কাপড়ের ব্যাগটি আমি এগিয়ে দেই। তখন বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল আমার গালে চুমু দিয়ে বলেন, ভালো থাকিস। দেশ স্বাধীনের তিনমাস পর জানতে পারি, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল শহীদ হয়েছেন।’

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তাফা কামালের নামে ভোলা সদরে বাসস্ট্যান্ড, কলেজ, গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর, দৌলতখান উপজেলায় লঞ্চঘাট, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের পরিবারে এখন কোনো অভাব নেই। বীরশ্রেষ্ঠের ছোট ভাই হিসেবে সমাজের সবাই আমাকে সম্মান করেন। বর্তমানে কোনো কাজ না করলেও বাড়িতে নাতি-নাতনিদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি।’

Advertisement

বীরশ্রেষ্ঠের ভাতিজা মো. সেলিম। ইতিহাসে মাস্টার্স করেছেন। ২০১৬ সালে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল মহাবিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ে প্রভাষক পদে যোগ দেন তিনি। পরে ২০১৭ সালে ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান মো. সেলিম।

বীরশ্রেষ্ঠের ভাতিজা হওয়ায় অনেক গর্ব হয় বলে জানান মো. সেলিম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এখন যে কলেজে কর্মরত তা আমার চাচা বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের নামে। কলেজে পড়াশোনার মান খুবই ভালো। প্রতিবারই আমাদের কলেজ ভালো রেজাল্ট করে।’

বীরশ্রেষ্ঠের আরেক ভাতিজা মো. শাহীন এলাকায় ডিশ ক্যাবল ও ইন্টারনেটের ব্যবসা করেন। এতে আয়-রোজগারও বেশ ভালো। বর্তমানে অনেক ভালো আছেন বলে জানান তিনি।

ভোলা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের সদস্যদের সবসময়ই খোঁজখবর নেই। তারা যেকোনো কাজে আমাদের কাছে এলে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই।’

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলার দৌলতখান উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম হাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হাবিবুর রহমান সেনাবাহিনীর হাবিলদার ছিলেন। শৈশব থেকেই দুঃসাহসী ছিলেন মোস্তফা কামাল। তিনি ছেলেবেলা থেকেই সেনাবাহিনীর একজন সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখতন। ১৯৬৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে পালিয়ে সেনাবাহিনীতে চাকরি নেন। তিনি ছিলেন চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল ছিলেন দুই নম্বর প্লাটুনে। ১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য কুমিল্লা-আখাউড়া রেললাইন ধরে উত্তর দিকে এগোতে থাকে। ১৮ এপ্রিল ভোরবেলা পাকিস্তানের সৈন্যরা দরুইন গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর মর্টার ও আর্টিলারির গোলাবর্ষণ শুরু করে। সিপাহি মোস্তফা কামাল নিজ পরিখায় অবস্থান নেন।

বেলা ১১টার দিকে শুরু হয় শত্রুপক্ষের গোলাবর্ষণ। সেই সময় শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। মোস্তফা কামাল মরিয়া হয়ে পাল্টা গুলি চালাতে থাকেন। তার পূর্ব দিকের সৈন্যরা পেছনে সরে নতুন অবস্থানে সরে যেতে থাকেন এবং তাকেও সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তবে সবাইকে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে এলএমজি থেকে গুলি চালাতে থাকেন মোস্তফা কামাল। তার ৭০ গজের মধ্যে শত্রুপক্ষ চলে এলেও তিনি থামেননি।

পাকিস্তানি সৈন্যরা মরিয়া হয়ে মোস্তফা কামালকে লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করতে থাকে। একপর্যায়ে মোস্তফার এলএমজির গুলি শেষ হয়ে যায়। তিনি মারাত্মকভাবে জখম হন। তখন পাকিস্তানি সৈন্যরা চড়াও হয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেন এ বীরসন্তানকে।

এসআর/জেআইএম