বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে রাত ৮টার পর সারাদেশে দোকান, বিপণিবিতান, মার্কেট বন্ধ রাখার বিষয়ে গত বছরের জুনে নির্দেশনা দেয় সরকার। বর্তমানে এ নির্দেশনা বলবৎ রয়েছে। তবে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে অনেক অঞ্চলেই রাত ৮টার পর দোকান, বিপণিবিতান, মার্কেট খোলা থাকছে।
Advertisement
এর মধ্যেই চলে এসেছে পবিত্র রমজান মাস। আসছে ঈদুল ফিতর। এরইমধ্যে বিভিন্ন মার্কেটে ঈদুল ফিতরকেন্দ্রিক বিক্রিও শুরু হয়ে গেছে। তবে রমজান বা ঈদকেন্দ্রিক মার্কেট খোলা রাখার বিষয়ে এখনো নতুন কোনো নির্দেশনা দেয়নি সরকার।
এদিকে, ঈদ ও রোজাকে সামনে রেখে গত মাসে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি রাত ১০টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার দাবি জানায়। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, দোকান, বিপণিবিতান, মার্কেট খোলা রাখার বিষয়ে ২০২২ সালে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সেটিই এখনো বলবৎ রয়েছে। অর্থাৎ রাত ৮টার পর বিপণিবিতান, মার্কেট খোলা রাখা যাবে না। তবে রোজা ও ঈদ উপলক্ষে বাড়তি সময় মার্কেট খোলা রাখার একটি প্রস্তাব এসেছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
Advertisement
আরও পড়ুন>> কাল থেকে রাত ৮টার পর দোকান-মার্কেট বন্ধ
অন্যদিকে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এবার বিদ্যুতের সমস্যা নেই। তাই মার্কেট উন্মুক্তভাবে খোলা রাখার সুযোগ দিতে হবে। মার্কেট খোলা রাখার ক্ষেত্রে কোনো সময় বেঁধে দেওয়া উচিত হবে না। সরকার যদি মার্কেট খোলা রাখার ক্ষেত্রে সময় বেঁধে দেয়, তাহলে তার প্রতিবাদ করা হবে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, এখন বিুদ্যতের সমস্যা নেই। তাই মার্কেট উন্মুক্তভাবে খোলা থাকবে। ব্যবসায়ীরা যতক্ষণ খুশি দোকান, মার্কেট খোলা রাখতে পারবেন। সরকার থেকে মার্কেট খোলা রাখার সময় বেঁধে দিলে আমরা প্রতিবাদ করবো।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী- রাত ৮টার পর বিপণিবিতান, মার্কেট খোলা রাখার সুযোগ নেই, বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘এমন কোনো নিয়ম নেই। ব্যবসায়ীরা যতক্ষণ খুশি মার্কেট খোলা রাখতে পারবেন। আমার কাছে যে তথ্য আছে, তাতে এবার মার্কেট খোলা রাখার ক্ষেত্রে সরকার কোনো সময় বেঁধে দেবে না।’
Advertisement
আরও পড়ুন>> রাত ৮টার পর দোকান-শপিংমল খোলা থাকলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তৌফিকুল আরিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘দোকান, বিপণিবিতান, মার্কেট খোলা রাখার বিষয়ে আগে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সেটাই এখন কার্যকর আছে। সে হিসেবে রাত ৮টা পর্যন্ত মার্কেট, বিপণিবিতান খোলা রাখা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘মার্কেট বাড়তি সময় খোলা রাখার বিষয়ে একটি প্রস্তাব এসেছে। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। নতুন নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আগের নির্দেশনায় কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ রাত ৮টার পর মার্কেট খোলা রাখা যাবে না।’
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে গত বছরের ১৯ জুন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন, এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, ঢাকা চেম্বারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী মালিক সংগঠন ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং বাণিজ্য, বিদ্যুৎ, শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন>> বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে রাত ৮টার পর দোকান-মার্কেট বন্ধ রাখার নির্দেশ
বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাত ৮টার পর সারাদেশে দোকান, বিপণিবিতান, মার্কেট বন্ধ রাখা হবে। পরের দিন অর্থাৎ ২০ জুন থেকে এ নিয়ম কার্যকর করা হয়। তবে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ নিয়ম কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে রাখা হয়-
>> ডক, জেটি, স্টেশন, বিমানবন্দর এবং পরিবহন সার্ভিস টার্মিনাল অফিস।
>> তরিতরকারি, মাছ, মাংস, দুগ্ধজাতীয় সামগ্রী, রুটি, পেস্ট্রি, মিষ্টি এবং ফুল বিক্রির দোকান।
>> ওষুধ, অপারেশন সরঞ্জাম, ব্যান্ডেজ অথবা চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান।
>> দাফন ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রির দোকান।
>> তামাক, সিগারেট, পান-বিড়ি, বরফ, খবরের কাগজ, সাময়িকী বিক্রির দোকান এবং দোকানে বসে খাওয়ার (হালকা) নাশতা বিক্রির খুচরা দোকান।
>> খুচরা, পেট্রল বিক্রির জন্য পেট্রলপাম্প এবং মেরামত কারখানা নয় এমন মোটরগাড়ির সার্ভিস স্টেশন।
>> নরসুন্দর এবং কেশ প্রসাধনীর দোকান।
>> যেকোনো ময়লা নিষ্কাশনকারী প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
>> যেকোনো শিল্প, ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান যা জনগণকে শক্তি আলো অথবা পানি সরবরাহ করে এমন প্রতিষ্ঠান।
>> ক্লাব, হোটেল, রেস্তোরাঁ, খাবার দোকান, সিনেমা অথবা থিয়েটার।
আরও পড়ুন>> রাত ৮টার পর খোলা থাকবে যেসব প্রতিষ্ঠান
এরপর গত বছরের ২২ জুন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে এক নির্দেশনা দিয়ে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১ জুলাই থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত দোকানপাট, মার্কেট, বিপণিবিতান রাত ৮টার পরিবর্তে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখার সুযোগ দেওয়া হয়।
এমএএস/এএএইচ/এমএস