প্রায় চার হাজার বছর ধরে বাঙালি বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জাতির পদানত ছিল। তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল দীর্ঘ দিনের। হাজার বছরের কাঙ্খিত সেই স্বাধীনতার স্বপ্নবীজকে অঙ্কুরিত করে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ধাপে ধাপে বাঙালি জাতিকে জাতীয়তাবাদের চেতনায় আন্দোলিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনিই বাঙালিকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, তাদের বাঁচার একমাত্র পথই হচ্ছে স্বাধীনতা।
Advertisement
বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সাংগঠনিক কর্ম তৎপরতায় তাঁর দল আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছেন। পাকিস্তানের শাসন, শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরূদ্ধে মানুষকে করেছেন সংঘবদ্ধ। অন্যদিকে দলের প্রচার-প্রচারণা ও আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা-সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ করেছেন নিষ্পেষিত, নীপিড়িত অধিকার বঞ্চিত বাঙালিকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তির জন্য ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য তার রাজনৈতিক জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন দুবার। যদিও তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেই বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রেখেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন, তিনিই ছিলেন বাঙালির আস্থা ও বিশ্বাসের একমাত্র ঠিকানা। বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন ছিল বাঙালির জন্য একটি শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন রাষ্ট্র আর একটি আত্মনির্ভরশীল সমৃদ্ধ জাতির।
বাঙালির জন্য তাঁর ত্যাগ ও তিতিক্ষা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে পরিণত করেছে এক অবিচ্ছেদ্য নামে। তাই বাংলাদেশ নাম উচ্চারিত হলেই বাঙালি ও বিশ্ববাসীর চোখে ভেসে ওঠে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতার মায়াবী মুখ। আর যাদের ভাসে না, তাদের কোনোদিনই ভাসবে না। কারণ তারা এখনো এই দেশকে পাকিস্তানের ভাবধারায় ফিরিয়ে নেয়ার দিবাস্বপ্নে বিভোর। তারা ও তাদের উত্তরসূরিদের আমৃত্যু অবস্থান স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।
Advertisement
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আজ একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের পথপ্রদর্শক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর অমর কীর্তি। যদিও বাঙালি জাতির জন্ম হয়েছে হাজারো বছর পূর্বে; কিন্তু জাতি হিসেবে কোনো স্বীকৃতি ছিল না, পৃথক জাতিসত্তা হিসেবে কোনো পরিচিতি ছিল না।
স্বাধীন কোনোও ভূখণ্ডও ছিল না তাদের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাঙালিকে পৃথক জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করেছেন, পৃথক জাতিসত্তা হিসেবে বাঙালি পরিচিতি পেয়েছে, বাঙালি জাতি রাষ্ট্রও বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে হয়েছে। তাই তো তিনি বাঙালি জাতির পিতা।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম, আর যুগ থেকে যুগান্তরে একটি আলোকিত নাম, একটি অবিনশ্বর চেতনা একটি গৌরবান্বিত ইতিহাসের নাম।
মহান সৃষ্টিকর্তা বঙ্গবন্ধুকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের দূত হিসেবে। তাঁর জন্ম না হলে হয়তো বাঙালি জাতি স্বাধীনতা লাভ করত না, সৃষ্টি হতো না স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভেঙে জন্ম হয় দুটি পৃথক রাষ্ট্র- পাকিস্তান ও ভারত। আমাদের এই ভূখণ্ড আজকের বাংলাদেশ তখন ছিল পাকিস্তানের একটি অংশ। ব্রিটিশের কবল থেকে স্বাধীনতা লাভের এক বছরের মধ্যেই এদেশের মানুষ বুঝতে পারে, তারা নতুন করে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের কবলে পড়েছে। নিপীড়ন, নির্যাতন, বঞ্চনা পিছুতো ছাড়ছেই না বরং বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।
Advertisement
১৯৪৮ সালেই পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাকে অবজ্ঞা করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার ঘৃণ্য চক্রান্ত শুরু করে। আর তখন থেকেই আত্মজাগরণ ঘটে বাঙালির। এই জাগরণকে ধীরে ধীরে ও ধাপে ধাপে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে নেন বাঙালির মুক্তিদূত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তর সালের মুক্তি সংগ্রাম, শুধু বাঙালির নয়, সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসে এক অবিনাশী আলোকিত অধ্যায়। আর এই অধ্যায়ের মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আমাদের আবেগ, ভালোবাসা জুড়ে থাকা বাংলাদেশ শব্দটি সর্বপ্রথম উচ্চারণ করেছেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৯ সালের ২৯ জুলাই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের (বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) নারায়ণগঞ্জ মহকুমা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নারায়ণগঞ্জের ‘বায়তুল আমান’-এ অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে শেখ মুজিব সেদিন তাঁর বক্তৃতায় পূর্ব পাকিস্তান না বলে ‘বাংলাদেশ’ উচ্চারণ করেন। ।
বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করছে তাঁর ভাষা প্রেম। মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় রাজপথে তাজা রক্ত দিয়েছে বাঙালি। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সশরীরে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে যোগ দিতে পারেননি। কারণ সে সময় তিনি কারাবন্দি ছিলেন।
কারাগার থেকেই চিরকুটের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তিনি এবং আন্দোলনের দিকনির্দেশনা দিতেন। ১৯৫৫ সালের ২৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান গণপরিষদে এই ভূখণ্ডের ‘পূর্ব বাংলা’ নামের বিরোধিতা করে বলেন, এ অঞ্চলের নাম ‘বেঙ্গল’ অথবা ‘বাংলাদেশ’ করা হোক। ১৯৯৬ সালের ৫ ডিসেম্বর শহীদ হোসেন সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু দিবসে আয়োজিত আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু বলেন ‘পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম হবে পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধু 'বাংলাদেশ’।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে বঙ্গভবনে বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম বৈঠকে ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখি ১৯৪৭-৪৮ সালে। কিন্তু আমি ২৭ বছর স্টেপ বাই স্টেপ মুভ করেছি।’
১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন ঐতিহাসিক ছয় দফা। বাঙালির মুক্তি সনদ বা ‘ম্যাগনাকার্টা’ বলে কথিত ছয় দফা মূলত ছিল স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা। বঙ্গবন্ধু নিজেই একথা বলেছেন।
বঙ্গবন্ধু তাঁর ঘনিষ্ঠ স্বজন, নেতাকর্মীদের ও একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘৬ দফার মাধ্যমে আমি তোমাদেরকে সাঁকো তৈরি করে দিলাম। তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ঐপাড়ে (স্বাধীনতা) পৌঁছা।’ ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ৭ জুন বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘আসন্ন নির্বাচন হবে ছয় দফার প্রশ্নে গণভোট।’ বাস্তবেও তাই ঘটে। জনগণ ছয় দফার পক্ষে ঐতিহাসিক রায় প্রদান করে। এ কারণে নির্বাচনের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা টালবাহানা করে। বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ছয় দফা থেকে সরে দাঁড়াতে নানা অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছিলেন অনড়, ছয় দফার ভিত্তিতেই দেশ চলবে। আর পাকিস্তানিরা বুঝে নিয়েছিল, ছয় দফা বাস্তবায়ন মানেই বাঙালির স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফার মূল নির্যাস ছিল বাঙালির স্বাধীনতা। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে সুস্পষ্টভাবে বললেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দিব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইন-শা-আল্লাহ।’ তিনি আরও বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের পালে হাওয়া লাগে। সবার চোখে মুখে তখন স্বাধীনতার স্বপ্ন। পাকিস্তান সরকারের আর বোঝার বাকি রইলো না বাঙালি বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মুক্তির দিশারী পেয়েছে, এই জাতিকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। এই চরম সত্যকে মেনে নিতে পারেনি পাকিস্তান সরকার।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে নৃশংস অভিযান চালায় বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। অতর্কিত হামলা করে নির্বিচারে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করে ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় মানুষরূপী এই নরপিশাচের দল। এমতাবস্থায় পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপরই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
স্বাধীনতার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু সেদিন বলেছিলেন-"‘ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।'
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থে বলা হয়-ঢাকায় যখন প্রথম গুলি বর্ষিত হলো ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিওর সরকারি তরঙ্গের (ওয়েব লেংনথ) কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। ওই কণ্ঠের বাণী মনে হলো আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসাবে ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিশ্ববিখ্যাত ইতিহাসবিদ, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধে যে সকল দেশ বন্ধু হিসেবে আমাদের পাশে ছিল তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ডকুমেন্টস প্রকাশ করে। বিশেষ করে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ ডকুমেন্টস থেকে জানা যায়-২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এই-ই হয়তো আপনাদের জন্য আমার শেষ বাণী হতে পারে। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি- যে যেখানেই থাকুন, যে অবস্থাতেই থাকুন এবং হাতে যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরূদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। ততদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান- যতদিন না দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটি থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে।’
সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয় ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এটি তৎকালীন ইপিআরের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এ ঘোষণা বিশ্বের বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে প্রচারিত হয়। তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় স্বাধীনতার লড়াই। নয় মাসব্যাপী জীবনপণ যুদ্ধ শেষে কাঙ্ক্ষিত বিজয় ছিনিয়ে আনে বীর বাঙালি জাতি।
মূলত ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়েই বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিল মুক্তিযুদ্ধে। ৩০ লাখ তাজা প্রাণ আর লাখ লাখ মা বোনের সম্ভ্রম ও তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাঙালির এই মহৎ অর্জন।
কিন্তু ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরে বাঙালির এই মহৎ অর্জনকে নানাভাবে বিকৃত করা হয়। ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয় বঙ্গবন্ধুর নাম। কিন্তু ওরা জানতো না জীবিত মুজিবের চেয়ে আদর্শের মুজিব, লক্ষ কোটিগুণ শক্তিশালী। বাঙালির আবেগ, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জড়িয়ে আছে যার নাম কার সাধ্য তাকে মুছে ফেলার?
পৃথিবীর মানচিত্রে যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, যতদিন বাঙালির রক্তার্জিত ইতিহাস থাকবে ততদিন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যুগ থেকে যুগান্তরে অমর-অবিনশ্বর হয়ে থাকবেন বঙ্গবন্ধু নিপীড়িত মানুষের মুক্তির দিশারি হয়ে।
লেখক: ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য।
এইচআর/এমএস