রাজনীতি

ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে দ্বিধান্বিত তৃণমূল

তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়েও কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি। এতে নেতাকর্মীরা চাঙা হয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রের। তবে তৃণমূলের দাবি ভিন্ন। তারা বলছেন, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা-মামলায় দিশেহারা অবস্থা। লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি। থাকতে পারছেন না নিজ এলাকায়। কেন্দ্রের আন্দোলন আরও জোরদার করে একেবারে শেষের দিকে তৃণমূলে কর্মসূচি দিতে পারে কেন্দ্র। আছে ভিন্নমতও।

Advertisement

বিএনপির তৃণমূল ও কেন্দ্রের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা হলে তারা এমন তথ্য দেন। সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ কয়েকটি দাবিতে বিএনপি ২০২২ সালের জুলাই থেকেই ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিতে সরব। বিশেষ করে তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দৃঢ়ভাবে মাঠে ছিল। একই সঙ্গে ছিল ভোটাধিকার হরণসহ দলীয় নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন ইস্যু। সারাদেশে বিএনপি এসব ইস্যুতে মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, এমনকি ইউনিট ও হাট-বাজারে কর্মসূচি পালন করে।

আরও পড়ুন>> চলমান কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির তৃণমূলে সংশয়

এসব কর্মসূচি পালনের পর নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বিভাগীয় সমাবেশ করে বেশ চাঙা হয় বিএনপি। এসব সমাবেশে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল। তবে আলোচনার তুঙ্গে ছিল ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ। শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে ব্যাপক জনসমাগম ঘটায় দলটি। ছিল তৃণমূলের অংশগ্রহণ।

Advertisement

ওই সমাবেশ থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা ঘোষণা করা হয়। এসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিএনপিসহ তাদের সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনে শরিক হওয়া দলগুলো এখন যুগপৎভাবে মাঠে রয়েছে। কয়েকটি জোট, দল ও সংগঠন এখন বিএনপির সঙ্গে এই আন্দোলনে যুক্ত। বিএনপি ও তার শরিকেরা এখন পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করছে। এরই মধ্যে দলটি ঢাকাসহ সব মহানগর, জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি পালন করেছে।

আরও পড়ুন>> ‘নতুন ঐক্য’ গড়ার চেষ্টায় বিএনপি, ‘ঈদের পর’ যুগপৎ আন্দোলন

তৃণমূলের নেতাদের মতে, নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে বিএনপিকে জুন বা জুলাইকে আন্দোলনের রোডম্যাপ ধরে মাঠে নামতে হবে। তারা বলছেন, একেবারে শেষ মুহূর্তে ‘বিশেষ আন্দোলন’ যখন শুরু হবে তখন ওয়ার্ড, ইউনিয়নসহ সর্বত্র আন্দোলন করতে হবে। তার আগে তারা তৃণমূলে কর্মসূচি চান না। এখন ঢাকাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষে তারা। কারণ আন্দোলনে সফলতা পেতে হতে হলে ঢাকায় জনসমাগম ঘটনোর কোনো বিকল্প নেই।

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘুরুলিয়া গ্রামের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী জাগো নিউজকে জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি পালন করার কারণে তিনি এলাকায় থাকতে পারছেন না। গত ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের আগে তাকে গ্রেফতার করে নাশকতা মামলায় আসামি দেখিয়ে চালান দেয় পুলিশ। এক মাসের বেশি জেলে থাকার পর তিনি জামিনে মুক্ত হন। এরপর কয়েকদিন তিনি বাড়িতে অবস্থান করলেও গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিএনপি ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়। কেন্দ্রীয় বিএনপির ওই ঘোষণার পর ফের শুরু হয় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের পুলিশি হয়রানি। এরপর তার নামে আরও দুটি নাশকতা মামলা হয়। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিলেও তিনি এলাকায় ফিরতে পারেননি।

Advertisement

আরও পড়ুন>> আরও একটি ঈদ গেলো, বিএনপির আন্দোলন কতদূর

কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, স্থানীয় ক্যাম্প পুলিশ প্রতিদিন তাকে আটকের জন্য বাড়িতে যায়। মামলা না থাকলেও পার্শ্ববর্তী তালবাড়িয়া গ্রাম থেকে কয়েকজনকে ধরে পুরোনো মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে। তাই ভয়ে তিনি এখনো এলাকা ছাড়া।

আক্কাস আলীর ভাষ্য, পুলিশের চেয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বেশি ঝামেলা করছেন। আমাদের এলাকায় দেখলেও তারা পুলিশকে ফোন দেন।

সাতক্ষীরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম রেজা জাগো নিউজকে বলেন, জেলা বা বিভাগীয় শহরে কর্মসূচি পালনের সময় ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা অংশ নিলেও খুব একটা সমস্যা হয়নি। তবে ইউনিয়নে কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশি হয়রানি শুরু হয়।

তিনি বলেন, ওয়ার্ড পদযাত্রার পর সাতক্ষীরার তৃণমূল বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। কর্মসূচি পালন করতে আমাদের যত বাধা আসুক সমস্যা নেই। তবে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার আগে একেবারে তৃণমূলের কর্মসূচিতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হচ্ছে।

যশোরের মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ মো. ইকবাল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে তার উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত তৃণমূল। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে মামলা হয়েছে।

তিনি বলেন, আন্দোলন একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে আসার আগে ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডে এমনকি উপজেলায়ও বিশেষ কর্মসূচি পালন না করাটা উত্তম। সব কর্মসূচি তার উপজেলায় সক্রিয়ভাবে পালন হয়। একটা পর্যায় না আসা পর্যন্ত নেতাকর্মীদের নামে মামলার সংখ্যা বাড়লে অনেকে কর্মসূচিতে আসতে আগ্রহ হারায়। আশা করছি কেন্দ্র সেটি বিবেচনায় নেবে।

তবে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, মামলায় নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কর্মসূচির মাধ্যমে তৃণমূল জেগে উঠেছে। আর মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি আওয়ামী লীগের পুরোনো কৌশল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্রের মুক্তি ও দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে দল আন্দোলনে আছে। সময় বুঝে এবং জনগণের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়েই কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তৃণমূলের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত একেবারে হয়নি তা আমি বলছি না। সব কর্মসূচিতে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে মাঠ গুছিয়ে তৃণমূলের ভিত শক্ত করতে নানা পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই এসব কর্মসূচি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এটা আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কেএইচ/এএসএ/জেআইএম