জাতীয়

সুলভ মূল্যের দুধ-ডিম-মাংস: ৯টার গাড়ি এলো ১০টার পর

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পবিত্র রমজান মাসে রাজধানীতে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে প্রথম রমজান থেকে, চলবে আগামী ২৮ রমজান পর্যন্ত। তবে, রমজানের দ্বিতীয় দিনেই এ কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। সকাল ৯টা থেকে নির্ধারিত স্থানগুলোতে গাড়ি থাকার কথা থাকলেও এক ঘণ্টা পরও মেলেনি গাড়ি।

Advertisement

শনিবার (২৫ মার্চ) প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের নির্ধারিত স্থানগুলো ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। পরে সকাল ১০টার পর বিভিন্ন স্পটে গাড়ি এসে বিক্রয় কার্যক্রম শুরু করে।

এদিকে বিলম্বে গাড়ি পৌঁছানো ছাড়াও সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী (মানিকনগর গলি মুখে) নির্ধারিত স্থানে যথা সময়ে গাড়ি না থাকায় সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. হিরন্বয় বিশ্বাসকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘যাত্রাবাড়ীর দায়িত্ব আমার না, কেন আমার নাম রাখা হয়েছে জানি না। আমার জানা মতে এ গাড়ি সম্ভবত আরামবাগে রয়েছে।’

তবে মতিঝিলের আরামবাগের জন্য রয়েছে আলাদা ভ্রাম্যমাণ গাড়ি। সেখানে সকাল সোয়া ১০টায়ও কোনো গাড়ির দেখা মেলেনি। সকাল ৯টায় খিলগাঁও (রেলক্রসিংয়ের দক্ষিণে) নির্ধারিত স্থানে গিয়ে কোনো বিক্রয় কেন্দ্রের দেখা না মিললেও দ্বিতীয়বার সাড়ে ১০টায় গিয়ে দেখা মেলে সেই গাড়ির। তবে সেখানকার দায়িত্বে থাকা ড. বিবেক চন্দ্র রায়কে কল করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

Advertisement

এদিকে খিলগাঁওয়ের যে জায়গাটিতে গাড়িটি রাখা হয়েছে সেখানে ক্রেতাদের আনাগোনা খুবই কম দেখা গেছে। পথে হেঁটে যাওয়া মানুষ দাম কম হওয়ায় কিছু পণ্য কিনছেন। তবে ফার্মগেইটসহ বিভিন্ন স্থানে একেবারেই ভিন্ন চিত্র। গাড়ি দাঁড়ানোর ঘণ্টা পার হতেই মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

খিলগাঁও ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা হাসিবুর রহমান শান্ত জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের গাড়ি আজ বের হয়েছে সাড়ে ৯টায়। এখানে এসেছি ১০টার কিছুক্ষণ পর। মূলত গাড়িতে পণ্য লোড-আনলোডের ব্যাপার থাকে, তাই একটু দেরি হয়েছে। আমরা আজ ১০০ কেজি গরুর মাংস, ১০ কেজি খাসির মাংস, ব্রয়লার ৫০ কেজি, দুধ ২০০ লিটার আর ২ হাজার ডিম এনেছি। প্রতিদিন এমন পরিমাণই গাড়িতে আনা হয়।

খিলগাঁওয়ের বিক্রয়কেন্দ্রে বিক্রি কম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসিবুর বলেন, মূলত এখনো মানুষ সেভাবে জানতে পারেনি। আমরা আজ নিয়ে দুইদিন বসলাম। গতকাল দুপুর আড়াইটায় সব পণ্য বিক্রি শেষ হয়েছে। ভিড় থাকলে হয়ত দ্রুত শেষ হতো। অনেকে গতকাল দেখে গেছে আজ আসছে, এভাবেই কিছু ক্রেতা বাড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দ মুনীব হোসেন পান্না জাগো নিউজকে বলেন, বাজারের তুলনায় এখন দাম কিছুটা কম, এটি সত্যিই ভালো উদ্যোগ। তবে সাধারণ জনগণের কাছে এটি পৌঁছানো খুব জরুরি। আমার জন্য বেশি দামে পণ্য কেনা খুব বেশি ডিফিকাল্ট না। কিন্তু আমাকে নিয়ে চিন্তা করলে তো হবে না। বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষ যে সমস্যায় রয়েছে তাদের জন্য একটু বেশি আউটপুট দিয়ে তাদের কাছে পৌঁছাতে পারলে ভালো হবে। তবে যেহেতু উদ্যোগটি শুরু হয়েছে আশা করি সামনে আরও ভালো হবে।

Advertisement

বিক্রয় কেন্দ্র থেকে পণ্য কিনতে আসা মাহমুদা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, বাজারে মাংস, দুধ, ডিমের দাম তো অনেক বেশি, সেই তুলনায় এখানে দাম কম। গতকাল এখান থেকে জিনিসপত্র নিয়েছিলাম। পরে দেখলাম অনেক ভালো। তবে যেহেতু সরকারি তাই দাম আরেকটু কম হলে ভালো হতো।

এদিকে পণ্য কিনতে এসে ফিরে যেতে দেখা গেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। কথা হয় রিকশাচালক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, মাংস কেনার পয়সা নেই। দাম বাজারের চেয়ে কম আছে, আরেকটু কম হলেই ভালো হতো।

সার্বিক বিষয়ে জানতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হককে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

রাজধানীর নতুনবাজার (বাড্ডা), কড়াইল বস্তি, খামারবাড়ি, আজিমপুর মাতৃসদন, গাবতলী, দিয়াবাড়ী (উত্তরা), জাপান গার্ডেন সিটি, ৬০ ফুট রোড, খিলগাঁও (রেলক্রসিংয়ের দক্ষিণে), সচিবালয়ের পাশে (আবদুল গণি রোড), সেগুনবাগিচা (কাঁচাবাজার), আরামবাগ, রামপুরা, কালশী (মিরপুর), যাত্রাবাড়ী (মানিকনগর গলির মুখে), বছিলা, হাজারীবাগ (সেকশন), লুকাস মোড় (নাখালপাড়া), নয়াবাজার (পুরান ঢাকা) এবং কামরাঙ্গীর চর এলাকায় সুলভ মূল্যে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।

এ বছর প্রাথমিকভাবে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৪০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯৪০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার প্রতি কেজি ৩৪০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা এবং ডিম প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যে বিক্রয় করা হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুধ, ডিম ও মাংসের সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে রমজান মাসে জনসাধারণ যেন প্রাণিজ আমিষ ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে সে লক্ষ্যে ব্যবসায়ী, উৎপাদনকারী ও সাপ্লাই চেইন সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

আইএইচআর/এমআইএইচএস/এএসএম