প্রবাস

একুশে পদকে ভূষিত অভিমানী নভেরা দেশে ফেরেননি

কাজী এনায়েত উল্লাহ

Advertisement

২০১৫ সালের ৬ মে ছিল নভেরা আহমেদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশের গুণী এ ভাস্কর্যশিল্লী অভিমান করে দেশ ছেড়ে ফ্রান্সে দীর্ঘদিন বাস করলেও আমরা অনেকেই ব্যাপারটা জানতাম না।

তার মৃত্যুর পরও খবরটা গুটিকয়েক মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বাংলাদেশে ইতিহাসের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা কতটুকু তার মূল্যায়ন করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়, কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় শহীদ মিনারে নকশা তৈরির সেই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের কথা উঠলে অনেকেরই আশ্চর্য হওয়ার কথাই।

হাঁ, তিনিই সেই শিল্পী যিনি আমাদের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ওই স্মৃতিশোধের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তা বাস্তবায়ন করেছিলেন। তার জন্ম ১৯৩৯ সালের ২৯ মার্চ এবং মৃত্যু ৬ মে ২০১৫। শিক্ষা জীবনে যুক্তরাজ্য, ইতালি এবং অস্ট্রিয়ায় অবস্থান করেন এবং ১৯৭১ সাল থেকে ফ্রান্সে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। অতি অভিমানী নভেরা আর কোনো দিন বাংলাদেশে ফিরে যাননি।

Advertisement

১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে সম্মান স্বরূপ ২১ শে পদকে ভূষিত করলেও তিনি এতে কোনো আগ্রহ দেখাননি। প্যারিস থেকে প্রায় দু’শ কিলোমিটার দূরে এক গ্রামে তিনি তার ফরাসি স্বামীর সঙ্গে বাস করতেন, সেখানকার পারিবারিক এবং সামাজিক জীবন নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।

ধারণা করা হচ্ছে ওখানে তিনি একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের সঙ্গে ছিলেন, যারা কখনো চায়নি নভেরা আহমেদ তার দেশের সঙ্গে বা ফ্রান্সে বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখুক। মুসলমান ধর্মাবলম্বী হলেও মৃত্যুর পর তার মরদেহ একটা কাঠের বাক্সের মধ্যে করে সমাহিত করা হয়।

যার ওপরে খঁচিত ছিল মুসলমান, খৃস্টান এবং অন্যান্য কিছু ধর্মীয় চিহ্ন। তিনি দীর্ঘদিন এ রকম একটা বন্দি জীবন সবার চোখের আড়ালে ঘটলেও মুষ্টিমেয় দু’চারজন যারা ব্যপারটা জানতেন তারা ও মুখ খোলেননি, এটাই আশ্চর্য। আজ ভাবতে গেলেও আমার অনেক মনোকষ্ট হয়। শুধু না জানার কারণে হয়তো বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকে আমরা দেখতেও পারিনি এবং মুক্ত করতে পারিনি।

১ জুন ২০১৫ সালে শিল্পী ফকির আলমগীরের প্যারিস ভ্রমণের সময় আমরা নভেরা আহমেদকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার গ্রামে গিয়েছিলাম, তার স্বামী প্রথমে একটু ইতঃস্তত করলেও পরে আমাদের তার বাড়িতে ঢোকার অনুমতি দেন। আমরা অনেক চেষ্টা করে সক্ষম হয়েছিলাম কিছু তথ্য নেওয়ার এবং আমাদের শিল্পীর কিছু কাজ দেখার।

Advertisement

আবেগ অনুভূতির মধ্যেই আমরা তার কবরে অর্পণ করেছিলাম আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। অনেক ভারাক্রান্ত হৃদয়ে প্যারিস ফেরার পথে ভাবলাম আমরাতো এদেশেই ছিলাম, আমাদের কি কিছুই করার ছিল না? শুধু না জানার কারণে আমরা হারালাম একটি ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকে আর জাতি হারালো তার এক অভিমানী সন্তানকে। বিনম্র শ্রদ্ধা হে, নভেরা আহমেদ, আত্মার শাান্তি কামনা করছি।

লেখক, ঔপন্যাসিক সময়ের প্রেক্ষিতে ও প্রত্যাশা। ফ্রান্স।

এমআরএম/এএসএম