দেশজুড়ে

ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও মিলছে না ওএমএস-টিসিবির পণ্য

রমজানের শুরু থেকেই নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক। রোজায় এসে খাবারের দামের এই ঊর্ধ্বমুখী সারাদেশের ন্যায় ঝালকাঠির মানুষকে আরও কষ্টে ফেলেছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষরা পড়েছেন বিপাকে। তাই তারা এখন তাকিয়ে থাকেন খোলাবাজার (ওএমএস) ও টিসিবির পণ্যের দিকে। কিন্তু তাতেও নেই স্বস্তি। চাহিদার চেয়ে খাদ্যপণ্যের বরাদ্দ কম থাকায় অনেকেই পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। এমনকি পরপর কয়েক দিন লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না পণ্য।

Advertisement

রমজান উপলক্ষে সারাদেশের সঙ্গে ঝালকাঠিতেও নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ে। চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ ছাড়াও সবজি, মাছ, মুরগিসহ সব জিনিসের দাম এখন চড়া। এক মাসের ব্যবধানে ঝালকাঠিতে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে ৩-১০ টাকা।

ফলে নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও টিসিবি এবং ওএমএসের পণ্য কিনতে ভিড় করছেন। এমনকি জেলা শহরের পাশের উপজেলা ও বিভিন্ন গ্রাম থেকে পণ্য নিতে আসছে মানুষ।

আরও পড়ুন: মাঝরাতেও টিসিবির পণ্য নিতে শত শত মানুষের ভিড়

Advertisement

বাজারে দেখা গেছে, খুচরায় এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, যা ১০ দিন আগেও ছিল ১৫০ টাকা। এক লিটার বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়, ১০ দিন আগে যা ছিল ১৬০ টাকা।

এছাড়া খুচরা দোকানে মোটা দানার মসুর ডাল ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এটি ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি-বিদেশি পেঁয়াজ ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০-৪৫ টাকা হয়েছে। তবে টিসিবিতে সয়াবিন তেল ১১০ টাকা, মসুর ডাল ৬৫ টাকা ও চিনি ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে চালের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে গুটি স্বর্ণা চাল প্রতি কেজির দাম ৪০-৪১ টাকা আর পাইজাম ৪৫-৪৬ টাকা। বিআর-২৯ চাল ৪৮-৪৯, বিআর-২৮ চাল ৫৩-৫৪, মিনিকেট চাল ৫৭-৫৮, উন্নত মিনিকেট ৬০-৬১, নাজিরশাইল ৬৬-৬৭, সিদ্ধ কাটারি ৯৩-৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আর খুচরায় আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজিতে। ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। অন্যদিকে খোলাবাজারে (ওএমএস) প্রতি কেজি চাল ৩০ ও খোলা আটা ২৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: এক হালি লেবুর দাম ১০০ টাকা

ঝালকাঠি জেলা খাদ্য অধিদপ্তর ও বরিশালের টিসিবি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতিদিন ওএমএসের ডিলারপ্রতি ৫০০ কেজি চাল ও ৫০০ কেজি আটা বরাদ্দ থাকে। সপ্তাহের ছয়দিন ওএমএসের দোকানে ১০ জন ডিলারের মাধ্যমে এসব চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি চাল ও আটা কিনতে পারেন। পাঁচ কেজি হারে এক হাজার কেজি চাল ও আটা পায় ২০০ মানুষ। কিন্তু প্রতিটি ডিলার পয়েন্টের লাইনে থাকেন ৩০০-৪০০ জন। কয়েক দিন ধরে এই ভিড় আরও বেড়েছে। আগে বিকেল পর্যন্ত বিক্রি চললেও, এখন দুপুরের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় পণ্য।

ঝালকাঠিতে টিসিবির ডিলার রয়েছেন ৩৫ জন। পণ্য স্বল্পতার কারণে প্রতিদিন একজন ডিলার পণ্য বিক্রি করছেন। টিসিবির ডিলার পয়েন্টেও বেলা বাড়তেই ভিড় বেড়ে যায়। প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষ খাদ্যপণ্য না পেয়ে ফিরে যান বলে ভোক্তারা অভিযোগ করেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝালকাঠি শহরের বাসন্ডা (যুব উন্নয়নের সামনে) এবং ফরিয়া পট্টি ন্যাশনাল ব্যাংকের সামনে দেখা গেছে, টিসিবির পণ্য কিনতে হাতে কার্ড নিয়ে অপেক্ষা করছে মানুষ। লম্বা লাইন। কিন্তু পণ্য শেষ হওয়ায় ডিলার দোকানের শাটার বন্ধ করে দিয়েছেন। ক্রেতারা পণ্য না পেয়ে বাইরে হাহাকার করছেন।

আরও পড়ুন: মুরগির দাম বাড়িয়ে ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা লুট

কমদামে খাদ্যদ্রব্য কিনতে ফরিয়া পট্টি এলাকার ওএমএসের ডিলারের দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন গৃহপরিচারিকা শিরিন বেগম।

তিনি বলেন, ‘ঘরে খাওয়ার লোক চারজন। ওএমএস থ্যাইকা কম দামে চাল-আটা পাইলে কিছু পয়সা বাঁচে। কিন্তু দুই ঘণ্টা লাইনে খাড়াইয়াও হ্যেয়া ক্যেনতে পারি না।’

দুপুর ১২টার দিকে শহরের পালবাড়ি এলাকায় ওএমএসের চাল কিনতে লাইনে দাঁড়ানো মধ্যবিত্ত ঘরের এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তার স্বামীর বেতনে সংসার চলে না। ছেলেমেয়ে নিয়ে অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন। তাই কম দামে চাল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছি।

টিসিবির ডিলার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, টিসিবির বরাদ্দ কম থাকায় ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়।

ঝালকাঠি জেলা খাদ্য কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইন জানান, জেলায় ১৭ জন ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন ১২ হাজার কেজি (১২ টন) চাল স্বল্পমূল্যে (৩০ টাকা দরে) বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে জেলা শহরে ১০ জন ডিলার থাকলেও সপ্তাহে তিনদিন করে প্রতিদিন পাঁচজন ডিলার একটন চাল ও একটন আটা বিক্রি করছেন। বাকি তিন উপজেলায় স্বল্পমূল্যে শুধু চালই বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের যে পরিমাণে বরাদ্দ রয়েছে তার চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি।

আতিকুর রহমান/জেডএইচ