ফ্রান্সে পেনশনের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসসহ বিভিন্ন শহরে এ ধরনের সংঘর্ষ ঘটেছে। বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, সরকারের প্রস্তাবিত অবসর নীতিমালার বিরুদ্ধে ফ্রান্সে চলমান বিক্ষোভে এটিই সবচেয়ে বড় সহিংসতার ঘটনা।
Advertisement
বিশ্লেষকদের দাবি, বুধবার (২২ মার্চ) ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ অবসরকালীন সংস্কারকে জরুরি বলার পর বিক্ষোভকারীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। সেদিন ম্যাক্রোঁ বলেন, জনপ্রিয়তা যদি কমেও যায়, তবুও তিনি এ সংস্কার বাস্তবায়নে প্রস্তুত রয়েছেন। রোববার (১৯ মার্চ) এক জরিপে দেখা যায়, ম্যাক্রোঁর জনপ্রিয়তা এরই মধ্যে ২৮ শতাংশ কমে গেছে।
আরও পড়ুন>> অনাস্থা ভোটে অল্পের জন্য উতরে গেলেন ম্যাক্রোঁ
জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝিতে সরকারি কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার বয়স বাড়ানোর উদ্যোগ নেন ম্যাক্রোঁ। অবসরের বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ করার পরিকল্পনা হয় ও পার্লামেন্টে ভোটাভুটি ছাড়াই এ সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এর প্রতিবাদে তিন মাস ধরে ফ্রান্সজুড়ে বিক্ষোভ চলছে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় ১৫০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তাছাড়া বিক্ষোভকারীরা অগ্নিসংযোগও করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ছোড়েন ও লাঠিপেটা করেন। পুলিশের ওপর হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন>> ফ্রান্সজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত
এদিন বিক্ষোভকারীরা দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় বর্দো শহরের পৌর ভবনের বারান্দায় আগুন ধরিয়ে দেন। মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সেখানে সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। ব্রিটিশ রাজা হিসেবে এটিই চার্লসের প্রথম বিদেশ সফর। এদিকে, বিক্ষোভকারীরা নতুন করে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাজা চার্লস আদৌ ফ্রান্সে যাবেন কি না তা নিয়ে ধোয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন বলেন, প্যারিসে প্রায় ১৪০টি জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া দেশজুড়ে সংঘর্ষের ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১৪৯ সদস্য আহত হয়েছেন। কমপক্ষে ১৭২ জন সহিংসতাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু প্যারিস থেকেই গ্রেফতার হয়েছেন ৭২ জন।
Advertisement
আরও পড়ুন>> যুদ্ধ বন্ধের আলাপ, চীনে যাচ্ছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ১০ লাখ ৮৯ হাজারের মতো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। এর মধ্যে শুধু প্যারিসে ১ লাখ ১৯ হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। জানুয়ারিতে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর এটিই ছিল রাজধানীতে সবচেয়ে বড় জমায়েত।
তবে ফ্রান্সজুড়ে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছিলেন ৭ মার্চের বিক্ষোভে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ওই দিন বিভিন্ন জায়গায় মোট ১২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন।
এএফপির বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, বৃহস্পতিবার প্যারিসে কয়েকশ কালো পোশাকধারী উগ্রপন্থী বিক্ষোভকারী ব্যাংক, দোকান ও রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর চালিয়েছেন। তাছাড়া সড়কে থাকা গাড়িসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নষ্ট করেছেন।
আরও পড়ুন>> ইউরোপের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানো: ম্যাক্রোঁ
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় লিলে শহরের পুলিশপ্রধান থিয়েরি কোর্তেকুইসে বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরের আঘাতে সামান্য আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা প্যারিসের গ্যারে দে লিয়ন স্টেশনের রেলপথ দখল করে রেখেছিলেন। চার্লস দ্য গল বিমানবন্দরেও প্লেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সূত্র: বিবিসি
এসএএইচ