রমজানের রোজা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্দেশিত ফরজ ইবাদত। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। আল্লাহ তাআলা মানুষকে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যেভাবে আগের নবি-রাসুলদের উম্মতদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যারা রমজান মাস পাবে তাদের জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক। কোরআনে এসেছে-
Advertisement
فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
‘কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
প্রশ্ন হলো- কোরআনুল কারিমে ‘সিয়াম’ শব্দের উল্লেখ করার কারণ কি? এটি বুঝতে পারলেই রোজা রাখার কারণ ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। তাহলো-
Advertisement
সিয়াম শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে ‘বিরত থাকা’। তাইতো চুপ বা নিস্তব্ধ থাকাকেও সিয়াম বলা হয়। আর যে ব্যক্তি চুপ থাকে তাকে ‘সায়েম’ বলে।
যেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের পর মানুষের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখিতে চুপ থাকতে বলেছেন। সে নির্দেশটি ছিল এমন-
‘(সন্তান ভূমিষ্ঠের পর) যদি মানুষের মধ্যে কাউকে তুমি দেখ (তোমাকে কোনো প্রশ্ন করে) তবে তুমি বলো, ‘আমি দয়াময় আল্লাহর উদ্দেশে সাওম বা রোজা (কথা বলা থেকে বিরত থাকতে) মানত করছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলবো না।’ (সুরা মারইয়াম : আয়াত ২৬)
এ আয়াতের আলোকে রোজা রাখার মূল উদ্দেশ্য হলো দুনিয়ার সব খারাবি থেকে বিরত থাকা বা চুপ থাকা। আর এতে যেমন মহান আল্লাহর নির্দেশ পালন হবে। পাশাপাশি গোনাহ থেকেও বেঁচে থাকা যাবে।
Advertisement
ইসলামি শরিয়তে সিয়াম
ফজর তথা (সুবহে সাদেক) সূর্যোদয়ের আগে থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় খাওয়া ও পান করা, স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পক, অশ্লীল ও অসার ফাহেশা কথা-বার্তাসহ ইত্যাদি যাবতীয় রোজা বিনষ্টকারী কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশ মেনে ইবাদত করাই সিয়াম বা রোজা।
আমরা কেন রোজা রাখবো? রোজা রাখার প্রয়োজনীয়তাই বা কী? এ সম্পর্কে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দিয়ে বলেছেন-
‘শুধুমাত্র পানাহার (খাওয়া ও পান করা) থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম নয়; বরং অসারতা ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকার নামই হলো (প্রকৃত) সিয়াম। সুতরাং যদি তোমাকে কেউ গালাগালি করে অথবা তোমার প্রতি মুর্খতা দেখায়, তাহলে তুমি (তার প্রতিকার বা প্রতিশোধ না নিয়ে) তাকে বলো যে, আমি সায়েম, আমি রোজা রেখেছি, আমি রোজা রেখেছি। (মুস্তাদরেকে হাকেম, ইবনে হিব্বান, সহিহুল জামেইস সাগির)
ইসলাম পূর্ব যুগে সিয়াম
উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য রোজার বিধান প্রথম নয়। বরং আগের নবি-রাসুলদের প্রতিও ছিল রোজা পালনের নির্দেশ। কারণ, সিয়াম বা রোজা হলো এমন এক ইবাদত, যা মানুষ সৃষ্টির পর থেকেই আল্লাহ তাআলা দার বান্দার জন্য ফরজ করেছেন। যা আমরা কোরআনুল ওঠে এসেছে-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম বা রোজা ফরজ করা হয়েছে; যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া (আত্মশুদ্ধি) অর্জনে করতে পার। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)
এ থেকেও বোঝা যায়, আগের সব উম্মতের জন্য রোজা ফরজ ছিল। ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট জিনিস থেকে বিরত থেকে রোজা পালন করতো। তাওরাত ও ইঞ্জিলের বর্তমান সংস্কারগুলো থেকেও জানা যায় যে, আল্লাহ তাআলা রোজাকে আগের বান্দাদের ওপর ফরজ করেছিলেন। হিজরতের পর যার প্রমাণ পেয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি।
হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আগমন করলেন, তখন দেখলেন, মদিনার ইয়াহুদিরা আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তখন তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এটা কী এমন দিন যে, তোমরা রোজা রাখছ?’
ইয়াহুদিরা বললো, ‘এ এক মহান দিন। এ দিনে আল্লাহ তাআলা মুসা আলাইহিস সালাম ও তার কাওমকে ফেরাউনের অত্যাচার ও আক্রমণ থেকে নাজাত দিয়েছিলেন। আর ফেরাউন ও তার কাওমকে পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছিলেন। তাই মুসা আলাইহিস সালাম এরই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যেই এদিন রোজা পালন করেছিলেন। আর তাইতো আমরাও এ দিনে রোজা পালন করি।
এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘মুসার স্মৃতি পালন করার ব্যাপারে তোমাদের চাইতে আমরা অধিক হকদার।’ সুতরাং তিনি ওই দিনে রোজা রাখলেন এবং সবাইকে রোজা রাখতে নির্দেশ দিলেন। (বুখারি ও মুসলিম)
তবে আমরা কেন রোজা রাখবো?
মহান আল্লাহর মহাঅনুগ্রহ যে, তিনি বান্দার ওপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পর্যাযে আদেশ-নিষেধ, উপদেশ দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে ফরজ তথা আবশ্যকীয় এবং হারাম তথা বর্জনীয় কাজ। অনুরূপ একটি ফরজ হচ্ছে রমজান মাসের সিয়াম বা রোজা পালন করা। আল্লাহর হুকুমে দুনিয়া সব খারাবি থেকে নিজেদের বিরত রাখার মাধ্যমে তাকওয়া ও পরহেজগারি অর্জন করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর বিধান মেনে সব খারাপ কাজ থেকে বিরত তথা চুপ থেকে সিয়ামের যথাযথ হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস