অর্থনীতি

টুপি-আতরের বিক্রি বাড়লেও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি নেই

দোরগোড়ায় সিয়াম সাধনার মাস রমজান। শুক্রবার (২৪ মার্চ) প্রথম রোজা পালন করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। সেই হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) অনুষ্ঠিত হবে প্রথম তারাবির নামাজ। রমজানকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বেড়েছে টুপি, আতর ও জায়নামাজ বিক্রি। বেড়েছে হিজাব বিক্রিও। তবে, এরপরও হাসি নেই বিক্রেতাদের মুখে।

Advertisement

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বাজারে এখন সবকিছুর দাম বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় আয় নেই। রমজান উপলক্ষে টুপি, আতর বিক্রি কিছুটা বাড়লে তা খুব বেশি নয়। গত এক সপ্তাহ ধরে বিক্রি একটু বেড়েছে। কিন্তু প্রতিদিন যে বিক্রি হচ্ছে, তাতে খুব এটা লাভ হচ্ছে না। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তারা বলছেন, বাজারে এখন সবধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি। সাধারণভাবে চললেও একদিনে একজনের পিছনে খাবার খরচ বাবদ ১০০ টাকার ওপরে খরচ হচ্ছে। সে হিসেবে ৪ থেকে ৫ জনের সংসারে একদিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ লাগে। কিন্তু ব্যবসার যে পরিস্থিতি তাতে দিনে ১০০ থেকে ২০০ টাকা লাভ করাও কঠিন।

কেউ জানান, খরচের বোঝা টানতে না পারায় ঢাকা থেকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন পরিবার। সেইসঙ্গে খাবার খাওয়াও কমিয়ে দিয়েছেন। কোনো রকমে খেয়ে-পরে দিন চলে যাচ্ছে।

Advertisement

বায়তুল মোকাররম মসজিদ, গুলিস্তান ও মতিঝিল অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন দামের টুপি বিক্রি হচ্ছে। মান অনুযায়ী ৩০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দামের টুপি আছে। এর মধ্যে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে থাকা টুপি বেশি বিক্রি হচ্ছে।

গুলিস্তানের টুপি ও আতর বিক্রেতা ফিরোজ বলেন, দু-তিনদিন ধরে টুপি-আতর বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। রোজার কারণে এখন অনেকে নতুন টুপি ও আতর কিনছেন। তবে, আতরের ক্রেতা খুব কম। টুপির ক্রেতাও খুব বেশি নয়। তারপরও সারাবছর এমন বিক্রি থাকলে আমার কষ্ট কম হতো।

তিনি বলেন, কয়েক মাস ধরে বিক্রি পরিস্থিতি খুব খারাপ। একটা টুপি বিক্রি করে ৫ থেকে ৭ টাকা লাভ হয়। কিন্তু কোনো কোনো দিন ২০টা টুপিও বিক্রি হয় না। এখন বোঝেন আমরা কীভাবে চলছি। এখন বিক্রি একটু বেড়েছে, তাতেও দিনে ২০০ টাকা লাভ হচ্ছে না। এ টাকা দিয়ে সংসার কীভাবে চালাচ্ছি, তা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।

বায়তুল মোকাররম এলাকায় টুপি বিক্রি করা আয়নাল হোসেন বলেন, রোজার কারণে তিন-চারদিন ধরে টুপি ভালোই বিক্রি হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বিক্রি দ্বিগুণের মতো। তবে, সত্যি কথা বলতে আমাদের ব্যবসার পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। যে টুকু বিক্রি করতে পারছি, তার প্রায় পুরোটাই চাল-ডাল কিনতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন বাজারে সবকিছুর অস্বাভাবিক দাম। আমাদের মতো স্বল্পআয়ের মানুষেরা খুব কষ্টে আছেন।

Advertisement

মতিঝিলের ব্যবসায়ী মিঠু বলেন, আগে পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকতাম। আমার এক ছেলে এক মেয়ে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই ছয় মাস আগে পরিবার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। এরপরও ব্যবসা থেকে যে আয় হচ্ছে, তা দিয়ে খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

ব্যবসা  পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসন্ন রোজার কারণে দু’দিন ভালোই বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এ পরিস্থিতি কয়দিন থাকবে? বড়জোর রোজার প্রথম ১০ দিন। এরপরও তো আবার আগের মতো অবস্থা হবে। জিনিসপত্রের দাম না কমলে কেউ আসলে শান্তিতে থাকতে পারে না।

রাজধানী সুপার মার্কেটে হিজাব বিক্রেতা দিদারুল ইসলাম বলেন, রোজার সময় হিজাব বিক্রি কিছুটা বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা হিজাবের পাশাপাশি ওড়না ও নারীদের পোশাক বিক্রি করি। অনেকে ঈদ উপলক্ষে এখনই কেনাকাটা শুরু করেছেন। গত কয়েকদিনের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এবার ঈদে ভালো ব্যবসা হবে।

এমএএস/এমএএইচ/জেআইএম