দেশজুড়ে

ফরিদপুরে বেগুন-শসা-লেবুতে আগুন, মাছও নাগালের বাইরে

রমজান ঘিরে প্রতিবছর দেশের পাইকারি-খুচরা সব বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা দেয় স্থানীয় বাজারগুলোতেও। বাজার পরিস্থিতি এবারও ব্যতিক্রম নয়। রমজান শুরুর আগেই ফরিদপুরের বিভিন্ন বাজারে বেড়েছে বেগুন, শসা, লেবুসহ অন্যান্য কাঁচামালের দাম। চড়া দামের মাছের দাম আরও চড়েছে। বাজারে মাছ, শাক-সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও রমজান উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

Advertisement

বুধবার (২২ মার্চ) ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা বাজার, লেক পাড়, বেলতলা বাজার, সিএমবি ঘাট বাজার ও আশপাশের বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুনের কেজি ৩০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা, শসা ২৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা ও লেবুর হালি ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবস্থানে এ দাম বেড়েছে। রমজানে এসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি গোল বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন মানভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম কমেছে কাঁচামরিচের। ১২০ টাকা কেজির কাঁচামরিচ সপ্তাহের ব্যবধানে কমে ৮০ টাকায় নেমেছে।

জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ময়না গ্রামের লেবু চাষি শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ে প্রতি হালি লেবু ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করছি। রমজান উপলক্ষে আমরা দাম বাড়াইনি। তবে আমাদের কাছ থেকে কিনে নেওয়ার পর ব্যবসায়ীরা খুচরা বাজারে প্রতি হালি লেবু ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন।

Advertisement

উপজেলার দাদপুর এলাকার কৃষক দবির শেখ বলেন, প্রতি কেজি গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে কিনে খুচরা বাজারে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

মধুখালী উপজেলার মেকচামি ইউনিয়নের মরিচ চাষি গৌরব রায় বলেন, আমরা ক্ষেত থেকে প্রতি কেজি মরিচ ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। আর খুচরা বিক্রেতারা কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৯০ টাকা দাম নিচ্ছেন।

মধুখালী সদরের ব্যবসায়ী মো. আলম জাগো নিউজকে বলেন, পাইকারি বাজারে এসব পণ্যের দাম না বাড়লেও রমজানে চাহিদা বাড়ায় বাজারে দাম চড়া। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি পণ্যের দাম কেজিপ্রতি গড়ে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

শহরতলীর কানাইপুর কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা খবির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, রমজান উপলক্ষে কিছুটা দাম বেড়েছে। যা কয়েকদিন আগেও বেশ কম ছিল। রমজানের কারণে বাজারে কাঁচাপণ্যের চাহিদা বেড়েছে, এ কারণে দামও কিছুটা বাড়তি।

Advertisement

শহরের শরীতুল্লাহ বাজারের কাঁচামাল ও সবজি বিক্রেতা মনসুর আলী জাগো নিউজকে বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের চাহিদা বেশি। রোজার শুরুতে বাজার চড়া থাকা স্বাভাবিক। তবে খুব বেশি দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। কদিন পরে দাম আবার স্বাভাবিক হতে পারে।

শহরের নিউমার্কেট এলাকায় বাজার করতে আসা ক্রেতা রাজু শেখ বলেন, প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম। বাজারে এলেই শুনি এটার দাম ওটার দাম বাড়তি। কোনোকিছুর দাম কমতে শুনি না।

শহরের চকবাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা মো. দাউদুজ্জামান দাউদ জাগো নিউজকে বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় কাঁচাবাজারের সবজি থেকে শুরু করে প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দামৎ চড়েছে। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও রমজান ঘিরে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কোনো কোনো পণ্যের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিগুণ বেড়েছে।

এদিকে মাছের দাম আগে থেকেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। রমজান শুরুর আগে এ দাম আরও বেড়েছে। বাজারে রুই মাছের কেজি ৪২০ টাকা, চিংড়ি এক হাজার টাকা, বড় সাইজের কাতল ৪৫০ টাকা, ইলিশ মাছ ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা, টেংরা ৬৫০ টাকা, শোল ৮০০ টাকা, গ্লাস কার্প ৩২০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ টাকা, বাটা ১৫০ টাকা, দেশি কৈ মাছ এক হাজার টাকা, চাষের কৈ ২৫০ টাকা, দেশি শিং এক হাজার টাকা, চাষের শিং ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছ কিনতে বাজারে আসা মাহাদি রাজিব নামের এক ক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, রমজান উপলক্ষে প্রতিটি পণ্যের পাশাপাশি মাছের দামও বেড়েছে। সবজির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সব ধরনের মাছের দাম কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এ অবস্থা কাটাতে যথাযথ বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান তিনি।

শহরের বেলতলা বাজারের মাছ বিক্রেতা ঝন্টু রাজবংশী জানান, রমজান উপলক্ষে সব মাছের দাম বেড়েছে। কিছুদিন পর দাম স্বাভাবিক হতে পারে।

এন কে বি নয়ন/এমকেআর/জিকেএস