দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র রমজান মাস। আগামীকাল (শুক্রবার) থেকেই শুরু হচ্ছে রোজা। সারাদিন অনাহারের পর সন্ধ্যায় ইফতার করবেন রোজাদাররা। তৃপ্তির ইফতারিতে অন্যতম অনুষঙ্গ শসা। তাই রমজান এলেই বেড়ে যায় শসার দাম। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে বাড়তি দামের খুব সামান্যই পাচ্ছেন কৃষক। বাড়তি দামের পুরোটাই চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। রাজশাহীর তিনটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, তিন হাত ঘুরে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে দাম বেড়েছে ২৫ টাকা।
Advertisement
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় শসা চাষ হয়েছে ৬০৭ হেক্টর জমিতে। শসার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৮৭২ টন। এছাড়া খিরা চাষ হয়েছে ৩৯২ হেক্টর জমিতে, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৭৭৭ টন।
সরেজমিনে রাজশাহীর পাইকারি মোকাম খড়খড়ি বাজার, মাস্টারপাড়া বাজার ও খুরচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভোর ৫টায় কৃষক যে শসা ৪৫ টাকায় বিক্রি করেছেন, সকাল আটটা বাজতেই খুচরা বাজারে সে শসা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
খড়খড়ি বাজারে দেখা যায়, পবার চাষি মোসলেম উদ্দিন এসেছেন শসা নিয়ে। তিনি জানান, গতকালের চেয়ে আজ মোকামে দাম একটু বেড়েছে। কাল ৪৩ টাকা করে বিক্রি করেছি। আজ ৪৫ টাকা করে আড়ৎদার কিনে নিলো। মান ভেদে দাম হচ্ছে।
Advertisement
আরও পড়ুন: দরজায় পবিত্র রমজান, চোখ রাঙাচ্ছে বেগুন-লেবু-শসা
আরেক চাষি শফিকুল ইসলাম এনেছেন ২ মণ শসা। তিনি বিক্রি করলেন ৬২ টাকা দরে। তিনি বলেন, আমার হাইব্রিড শসা। এ শসার চাহিদা বেশি। দেখতে সুন্দর, দাম বেশি।
এদিকে সেখান থেকে শসা নিয়ে পাইকাররা বিভিন্ন আড়তে পৌঁছে যান সকালেই। সকাল সাড়ে ৬টায় মাস্টারপাড়া পাইকারি বাজারে দেখা গেল, দেশি শসাই বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। আর হাইব্রিড শসা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে।
ওই বাজার থেকে মো. আলাল কিনলেন ২০ কেজি শসা। তিনি বলেন, কাল থেকে রোজা। আজকে শসার চাহিদা বাড়বে। তাই একটু বেশি কিনলাম। ৬০ টাকা কেজি হিসাবে কিনলাম।
Advertisement
আরেকটু বেলা গড়াতেই আবারও বাড়লো শসার দাম। সকাল সাড়ে ৮টায় সাহেববাজারে আরডিএ মার্কেটের পেছনের কাঁচাবাজারে শসা বিক্রি শুরু করেন আলাল। এবার দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৬৫ টাকা কিনেছি, ৭০ টাকা করে বিক্রি করছি।
আরও পড়ুন: ‘ঈদের সময় গরুর মাংস খেয়েছিলাম, এরপর আর সুযোগ হয়নি’
আলালের কাছে থেকে সে দামেই শসা কিনলেন সাহেববাজারের বাসিন্দা মকবুল হোসেন।
মকবুল হোসেন বলেন, রমজানে শসা লাগবে। এখন দাম বাড়লে কী করবো?সব কিছুরই দাম বাড়ছে। তাই বলে মানুষ খাওয়া ছেড়ে দেয়নি।
ঘটনা জানিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, খড়খড়ি থেকে একটা ভ্যান ভাড়া ২০০ টাকা। একভ্যানে কমপক্ষে শসা থাকবে ৩০০ কেজি। তাহলে শসার দামতো এত বাড়ার কথা নয়। এগুলো ব্যবসায়ীদের কারসাজি। এদের ধরতে হবে। পুলিশে দিতে হবে।
অন্যদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, কোনো বিক্রেতা যদি অস্বাভাবিক বেশি দাম নেয় তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্ততের সহকারী পরিচালক ফজলে এলাহী বলেন, রমজানের শুরু থেকেই আমরা বাজার মনিটর করছি। শুধু শসা নয়, যেকোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হলেই আমরা অভিযান চালাবো। অভিযানের সময় আমরা সব ধরনের খরচের কাগজ দেখি। শসার ক্ষেত্রেও এমন করা হবে। বেশি দাম রাখা হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাখাওয়াত হোসেন/এমএইচআর/এএসএম