দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদনশীল কোল ফেজের উত্তোলনযোগ্য কয়লার মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় কয়লা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বুধবার (২২ মার্চ) পর্যন্ত ২৩ দিন খনিতে কয়লা উত্তোলন করা হয়নি। কবে নাগাদ নতুন ফেজ থেকে কয়লা উত্তোলন করা হবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না খনি কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
কয়লা উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় তিনটি ইউনিটের মধ্যে একটি ইউনিট সচল রেখে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ১৭০ থেকে ১৮০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনা হয়েছে।
খনি সূত্র জানায়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদনশীল ১৩০৬ নম্বর ফেজে কয়লার মজুত শেষ হয়ে যায়। এতে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কয়লা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এখন ১১১৩ নম্বর ফেজ থেকে কয়লা উত্তোলন করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এ ফেইজটি অন্যান্য ফেজের তুলনায় জটিল। বর্তমানে ১৩০৬ নম্বর ফেজে ব্যবহৃত উৎপাদন যন্ত্রপাতি সরিয়ে ১১১৩ নম্বর ফেজে স্থাপনের কাজ চলছে। নতুন ফেজটি থেকে উৎপাদনে যেতে প্রায় তিনমাস সময় লেগে যাবে।
Advertisement
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, একটি ফেজের কয়লা উত্তোলন শেষ হলে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিয়ে নতুন ফেজে স্থাপনের জন্য স্বাভাবিকভাবে ৪০-৪৫ দিন সময় লাগে। এছাড়া ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ক্রটি-বিচ্যুতি ধরা পড়লে মেরামতের জন্য বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয়। তবে নতুন ১১১৩ নম্বর ফেজটিতে বড় ধরনের বোরহোল থাকায় সময় বেশি লাগবে। আগামী মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে নতুন এ ফেজ থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হতে পারে।
এদিকে, কয়লার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনটি ইউনিটের মধ্যে ১ ও ২ নম্বর ইউনিট দুটি বন্ধ রেখে ৩ নম্বর ইউনিট চালু রেখে গড়ে প্রতিদিন ১৭০-১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, খনিতে কয়লার উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একটি ইউনিট চালু রেখে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ১৭০ থেকে ১৮০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ১৯ মার্চ পর্যন্ত এক লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুত ছিল। এ কয়লা দিয়ে মে মাস পর্যন্ত একটি ইউনিটে উৎপাদন চালু রাখতে হবে। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলে পুরো উত্তরাঞ্চল বিদ্যুৎবিহীন অথবা লো ভোল্টেজের কবলে পড়তে পারে।
Advertisement
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তিনটি ইউনিট চালু রেখে স্বাভাবিক উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন পাঁচ হাজার ২০০ টন কয়লার প্রয়োজন হয়। তবে তিনটি ইউনিট একইসঙ্গে কখনই চালানো হয় না। কয়লার সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দুটি ইউনিট চালু রেখে ৩০০ থেকে ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। টেকনিক্যাল কারণে পর্যাক্রমে একটি ইউনিটকে বন্ধ রাখা হয়। তবে ৩০০ থেকে ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হয়।
এমদাদুল হক মিলন/এসআর/জিকেএস