দেশজুড়ে

‘ঈদের সময় গরুর মাংস খেয়েছিলাম, এরপর আর সুযোগ হয়নি’

মধ্যবয়সী সাব্বির আলম। নিত্যপণ্যের বাজার করতে এসেছিলেন নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্যতম প্রধান দিগুবাবুর বাজারে। তিনি নিয়মিত এ বাজারে বাজার করতে আসেন। পণ্য কেনার জন্য তিনি এ-দোকান ও-দোকান ঘুরছিলেন।

Advertisement

সাব্বির আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাজার করতে এসে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ সব জিনিসেরই দাম চড়া। সবকিছু সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে রমজানকে কেন্দ্র করে পরিবারের সদস্যদের চাহিদা অনুযায়ী মুরগি কিনতে এসে মাথায় হাত উঠেছে।’

তিনি বলেন, ‘একমাস আগে যে মুরগি (ব্রয়লার) ১৬০ টাকা কেজি কিনেছি, সেই মুরগি এখন ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসের দামের কথা আর নাই-বা বললাম। ঈদের সময় গরুর মাংস খেয়েছিলাম। এরপর আর সুযোগ হয়নি।’

আরও পড়ুন: ব্রয়লার মুরগির দাম ৩০০ ছুঁই ছুঁই

Advertisement

নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্যতম প্রধান দিগুবাবুর বাজারে সরেজমিন অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাব্বির আলমের মতো অনেক ক্রেতারই একই অবস্থা। কেউই গরুর মাংস কেনার সাহস পাচ্ছেন না। সবাই মুরগির দোকানে ভিড় করছেন। কিন্তু এখানে এসেও তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন। কারণ মুরগি কিনতে গিয়েই তাদের বাজার করার সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬৫ টাকা কেজি দরে। লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা এবং পাকিস্তানি কক মুরগি ৩৮৫ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুরগি কিনতে আসা আব্দুল হাকিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত সপ্তাহেও ব্রয়লার মুরগি কিনেছি ১৬০ টাকা। আজ এসে শুনি ২৬৫ টাকা কেজি। আমরাতো এমনিতেই গরুর মাংস খেতে পারি না। এখন মুরগিও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।’

আরও পড়ুন: ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকার বেশি হওয়ার যৌক্তিকতা নেই

Advertisement

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ চিকেন হাউজের মুরগি বিক্রেতা ফয়সাল জাগো নিউকজে বলেন, ‘আসলে মুরগির খাদ্যের দাম দিনদিন বাড়ছে। এজন্য মুরগির দামও বাড়ছে। আমরা বিক্রেতারা বেশি দামে মুরগি কিনলে তো কম দামে বিক্রি করতে পারবো না।’

রাসেল নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা যে দামে কিনি তার চেয়ে একটু লাভে বিক্রি করি। অনেক সময় ক্রেতারা আমাদের সঙ্গে রাগারাগি করেন। কিন্তু আমরা কী করবো? আমরাতো নিরুপায়।’

গরুর মাংসের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা। কিছুদিন আগে এই মাংস ছিল ৭০০ টাকা। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়। ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা। তবে গরুর মাংসে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি।

আসিফ হোসেন নামের এক যুবক গরুর মাংস কিনতে আসছিলেন। কিন্তু দাম শুনে তার আর মাংস কেনা হয়নি। দরদাম করে শেষ পর্যন্ত মাংস না কিনেই অন্যদিকে হাঁটা শুরু করেন।

আরও পড়ুন: সবচেয়ে খরুচে রমজান এবার!

কথা হয় ওমর ফারুকের সঙ্গে। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি। তিনি জানান, যে টাকা বেতন পান তা দিয়ে কোনোরকম সংসার চলে। শেষ কতদিন আগে গরুর মাংস খেয়েছেন তা মনে নেই।

ওমর ফারুক বলেন, ‘পরশু থেকে রমজান শুরু। প্রথম রমজানে পরিবারের সদ্যস্যদের একটু ভালো খাবার খাওয়ানোর জন্য মাংস কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি অনেক দাম। মাংস কিনতে গেলে অন্যকিছু কিনতে পারবো না। তাই হাফ কেজি মাংস কিনেছি।’

হযরত শাহজালাল নামের মাংসের দোকানের মালিক আলম মুন্সি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন গরুর সংখ্যা কমে গেছে। গোখাদ্যের দামও বেশি। যে কারণে গরুর মাংসের দাম বেড়ে গেছে। তবে রমজান উপলক্ষে ক্রেতার সংখ্যা ভালোই পাওয়া যাচ্ছে।’

হাজী মাংসের দোকানের মালিক কাশেম বলেন, ‘কিছুদিন আগে গরুর মাংস ৭০০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন প্রতি কেজি ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছি। আসলে এটা রমজানকে কেন্দ্র করে নয়। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় গরুর মাংসের দাম বাড়ছে।’

আরও পড়ুন: ডিম-সবজিতে টিকে আছে মেসের শিক্ষার্থীরা

কথা হয় দিগুবাবুর বাজার কমিটির সভাপতি মো. রুহুল আমিনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবারের রমজানে কাঁচাবাজার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে কয়েকটা পণ্যের দাম একটু বাড়তির দিকে রয়েছে। এখানে আসলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কিছু করার নেই। তারা যদি কম দামে কিনতে পারেন তাহলে কম দামে বিক্রিও করতে পারবেন। তবে মুরগি ও গরুর মাংসের দাম চড়া রয়েছে।’

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের সহকারী পরিচালক মো. সেলিমুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। যদি কোনো ব্যবসায়ী অযৌক্তিকভাবে খেজুরের দাম বেশি রাখেন এবং আমাদের কাছে অভিযোগ করা হয় তাহলে অবশ্যই সে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ব্যবসায়ীদের আমরা আমাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছি। যদি কেউ হুট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন তাহলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এসআর/জিকেএস