দেশজুড়ে

পুতুল নাচে মুগ্ধ দর্শক, নিয়মিত শো না থাকায় বিপাকে শিল্পীরা

এক সময় গ্রামগঞ্জ, হাট-বাজার, স্কুল কিংবা খোলা মাঠে মঞ্চ সাজিয়ে যে পুতুল নাচের আসর জমত, এখন আর সেই দৃশ্য তেমন একটা চোখে পড়ে না। তবে পুতুল নাট্যদিবস উপলক্ষে সারাদেশের মতো কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করলেন দর্শকরা।

Advertisement

পুতুলের নৃত্যের তালে কিছুক্ষণ পর পর হাততালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে অডিটরিয়াম। ঐতিহ্যবাহী নাচ উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন স্কুল থেকে ছুটে আসে শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে অনেকেই তাদের সন্তানদের নিয়ে আসেন কালের এই ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে।

এদিকে, বহুদিন পর পরিবেশনার ডাক পেয়ে উচ্ছ্বসিত পুতুল নাচ দলের সবাই। তবে নিয়মিত শো না পাওয়ায় পুতুল নাচ এখন প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। ফলে এর শিল্পীরা পড়েছেন বিপাকে। পুরোনো পেশা আগলে রেখে জীবিকানির্বাহ করা মানুষগুলো অর্থের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে পল্লীবাংলা ঝুমুর ঝুমুর পুতুল নাচের দল চালিয়ে আসছেন আনোয়ার হোসেন। তিনি কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলার ছাতিরচর গ্রামের বাসিন্দা।

Advertisement

আনোয়ার হোসেন বলেন, ছোটবেলা থেকে আর কোনো কাজ শিখিনি, এই পুতুল নাচটাই শিখেছি। কিন্তু এটা দিয়ে তো এখন আর সংসার চলছে না, বাপ-দাদার ঐতিহ্য তাই এখনো ধরে রেখেছি, ছাড়তে পারছি না।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির হলরুমে গিয়ে দেখা যায়, আনোয়ার হোসেন পুতুল নাচের মঞ্চের পাশে বসে গান এবং বয়ান করছেন, পেছন থেকে তার স্ত্রী ও ছোট ভাই খাদিম গানের তালেতালে ঐতিহ্যবাহী ঘটনার সঙ্গে সুরের মূর্ছনায় পুতুলের নৃত্য পরিবেশনের কলকাটি নাড়ছেন। তারই পাশে বসে আরেক ভাই বাজাচ্ছেন ঢোল। আর এভাবেই গ্রামীণ জনপদে শিশু-কিশোর ও সর্বস্তরের মানুষের বিনোদনের একসময়ের শক্তিশালী মাধ্যম ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচের সমাপ্তি ঘটে।

অনুষ্ঠান শেষে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় আনোয়ার হোসেনের। এসময় আবেগজড়া কণ্ঠে বলেন, আর কিছুদিন পর হয়ত ছেড়েই দিতে হবে। যখন দুই টাকা দিয়ে নাচ দেখাতাম তখনো বেশ চলত। এখন ৫০ টাকা টিকিট থাকে তবুও সংসার চলে না। আগের মতো আর আমাদের ডাক পড়ে না।

বাংলার এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিটি আয়োজনে পুতুল নাচ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান এই শিল্পী।

Advertisement

দলের আরেক সদস্য খাদিম শিল্পকলার এমন আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা এই আয়োজনের ধারাবাহিকতা চাই। বছরে কয়েকটা এমন আয়োজন থাকলে আমরা হয়তো টিকে থাকতে পারবো।

জেলার বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী আয়দা মাহবুব বাবা-মার সঙ্গে প্রথমবার পুতুল নাচ দেখতে এসে বেশ উচ্ছ্বসিত। বার বার এমন আয়োজন দেখতে চায় ক্ষুদে এই দর্শকও।

কিশোরগঞ্জ থিয়েটার ফোরামের সভাপতি কোহিনূর আফজল বলেন, এমন আয়োজন শিশুদের মানবিক বিকাশে যেমন কার্যকর তেমনি আমাদের পুরোনো ঐতিহ্যকে বাঁচাতে বিরাট ভূমিকা রাখবে।

সারাদেশে ২৩টি জেলায় পুতুল নাট্যদিবসের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বিকেলে কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির হলরুমে এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মহুয়া মমতাজ। এসময় জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার তানিয়া ইসলাম ঝুমুর বলেন, একসময় মেলা হলেই পুতুল নাচ দেখা যেত। তবে এখন খুব বেশি দেখা যায় না। এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা এবং নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই শিল্পকলার এই আয়োজন।

এমআরআর/এমএস