সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মৎস্য ভাণ্ডারখ্যাত চলনবিলে দেশীয় প্রজাতির মিঠাপানির মাছের অভয়াশ্রম ও কাটাগাঙ্গের দুইপাড়ের কৃষকদের উন্মুক্ত সেচের আওতায় আনতে উপজেলার ভেটুয়া থেকে পাবনার অষ্টমনিষা পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার খাল পুনর্খনন করা হয়। তবে এ খাল খননে ২০ কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও তা এলাকাবাসীর কোনো উপকারে আসছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
Advertisement
স্থানীয়রা বলছেন, নীতিমালা অনুযায়ী খনন না করেই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। যে কারণে খালে মাছের অভয়াশ্রম তো দূরের কথা, কোনো পানিই নেই।
সোমবার (২০ মার্চ) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, খালটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারিয়ে একদম পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। কাটাগাঙ্গে ব্যবহৃত নৌকাগুলোও পড়ে আছে। অথচ এ খালটি খনন করার পর কৃষকদের সেচযন্ত্র দিয়ে ফসলি জমিতে পানি দেওয়ার কথা ছিল।
কাটাগাঙ্গের দুইপাড়ের কৃষকরা বলেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে নামমাত্র পুনর্খনন দেখিয়ে এ প্রকল্পের ২০ কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে।
Advertisement
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৃষকরা অভিযোগ করেন, খননের কাজ চলাকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী বা প্রকৌশলী প্রকল্প এলাকা ঘুরেও দেখেননি। শিডিউল অনুযায়ী খালটির ১২-১৪ ফুট পর্যন্ত গভীর করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাঁচ-ছয় ফুটের মতো মাটি তুলে খালের দুইপাড়ে এলোমেলোভাবে ফেলে রেখেছিল।
অথচ এটি ভালোভাবে খনন করলে বোরো মৌসুমের পুরো সময় আমরা ধান ক্ষেতে উন্মুক্তভাবে পানি দিতে পারতেন তারা। সেইসঙ্গে কাটাগাঙ্গের নাব্যতা ফিরে আসলে গ্রীষ্মকালে মাছের প্রজনন সময়কালে খালটি অভয়াশ্রম হিসেবে কাজ করতে পারতো।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, পাউবো দেশের ৬৪ জেলায় ছোট নদী, জলাশয় ও খাল খননে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসেবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তাড়াশ উপজেলার ভেটুয়া থেকে পাবনার অষ্টমনিষা পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার খাল পুনর্খননের জন্য ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়, যা ২০২০ সালের শেষের দিকে শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
উপজেলার মাগুড়াবিনোদ গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, যে উদ্দেশ্যে খালটি খনন করা হয়েছে তা এখন কোনো কাজেই আসছে না। সত্যি কথা বলতে কাটাগাঙ্গটি খননের নামে ঠিকাদার ও পাউবোর কর্মকর্তারা হরিলুট করেছেন।
Advertisement
কাটাবাড়ি গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এটি পুনর্খনন করার সময় পাউবোর ব্যাপক গাফলতি ছিল। খালটি খনন করা মাটি খালের পাড় বা তীরে আলগাভাবে রাখায় গত দুই বর্ষার মৌসুমে মাটিগুলো আবার খালের তলানিতেই গিয়ে জমেছে। যে কারণে খালটি পানি শূন্য হয়ে পড়েছে।
চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব এস এম মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, খাল খননে ২০ কোটি টাকা ব্যয় হলেও বাস্তবে এটি কোনো কাজে আসবে না। এ খননে কেবল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পাউবোর কর্মকর্তারা লাভবান হয়েছেন। এ কাজ চলনবিলের জন্য কোনো সুফল আনেনি।
তবে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নিয়ম মেনেই খালটি খনন করা হয়েছিল। বছরে চার মাস পর্যন্ত ওই খালে পানি থাকে।
তবে খালটি কত ফুট গভীর করা হয়েছিল এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি এ কর্মকর্তা।
এমআরআর/এএসএম