আন্তর্জাতিক

১১ দিনের ঝড়ে ৪ ব্যাংক বন্ধ, যায় যায় আরেকটি

মাত্র ১১ দিনের অর্থনৈতিক অস্থিরতার ঝড়ে বন্ধ হয়ে গেছে বিশ্বের চারটি বৃহৎ ব্যাংক, যায় যায় দশা আরেকটির। তবে তাদের ধসে পড়ার প্রেক্ষাপট কিন্তু এক নয়। ভিন্ন ভিন্নভাবে সংকটে পড়েছিল ব্যাংকগুলো।

Advertisement

চলুন দেখে নেওয়া যাক ব্যাংকগুলো কীভাবে বন্ধ হলো এবং তাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিলো নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষগুলো-

সিলভারগেটঝড়ের প্রথম শিকার যুক্তরাষ্ট্রের সিলভারগেট ক্যাপিটাল করপোরেশন। মূলত ক্রিপ্টো শিল্পে মন্দার কারণে ধসে পড়েছে ব্যাংকটি। প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে ফেডারেল রিজার্ভের অনুমোদন নিয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছিল ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি)।

কিন্তু দুর্ভাগ্য! ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক ব্যাংকটি টিকে থাকতে পারেনি। ক্রিপ্টো জায়ান্ট এফটিএক্স এবং আলামেডা রিসার্চের সঙ্গে লেনদেনে সম্ভাব্য দুর্নীতির বিষয়ে মার্কিন বিচার বিভাগের ফৌজদারি তদন্তের মুখে পড়েছিল সিলভারগেট। সেই বিতর্কের ধাক্কা সামলাতে না পেরে শেষপর্যন্ত ধসে পড়ে ব্যাংকটি।

Advertisement

আরও পড়ুন>> ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা: বিশ্ববাজারে তেলের দাম ১৫ মাসে সর্বনিম্ন

যদিও এখন পর্যন্ত কোনো অপরাধ প্রমাণিত হয়নি, তবু আতঙ্কিত গ্রাহকরা ব্যাপকহারে আমানত তুলে নিতে শুরু করলে সিলভারগেটের সংকট আরও ঘনীভূত হয়। অবশেষে গত মার্চ 8 সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় মার্কিন ব্যাংকটি।

সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি)৮ মার্চ সিলভারগেট যখন মৃত্যুপথযাত্রী, তখন সংকটের প্রায় চূড়ান্ত দশায় পৌঁছে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক। চরম বিনিয়োগ ঘাটতির মুখে ওই দিন ২২৫ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা ঘোষণা করে ব্যাংকটি। এটিই কাল হয় তাদের।

ঘোষণার পরের দিনই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর ৬০ শতাংশ কমে যায় এবং তার পরের দিন এসভিবির নিয়ন্ত্রণ নেয় মার্কিন নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ এফডিআইসি। বলা হচ্ছে, ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বৃহত্তম ব্যাংকের পতন এটি।

Advertisement

আরও পড়ুন>> ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক

সাধারণত উপযুক্ত ক্রেতা পেতে ব্যর্থ হলে ব্যাংক বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যান মার্কিন নীতিনির্ধারকরা। তবে আশার কথা, একাধিক সম্ভাব্য ক্রেতার কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়ায় বিডিং প্রক্রিয়ার সময় বাড়িয়েছে এফডিআইসি। ধারণা করা হচ্ছে, শেষপর্যন্ত সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক কিনে নিতে পারে ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংকশেয়ারস ইনকরপোরেশন।

সিগনেচার ব্যাংকগত ১২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ব্যর্থতার রেকর্ড গড়ে বন্ধ হয়ে যায় সিগনেচার ব্যাংক। আতঙ্কিত গ্রাহকরা ব্যাংকটি থেকে ব্যাপক হারে আমানত তুলে শুরু করেন। একপর্যায়ে এর হার ব্যাংকটির মোট আমানতের ২০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছায়।

মাত্র চার দিন আগে সিলভারগেটের পতন সিগনেচার ব্যাংকে আমানত রাখার বিষয়ে গ্রাহকদের আতঙ্কিত করে তুলেছিল। যদিও ক্রিপ্টোয় সিগনেচার ব্যাংকের লেনদেন ছিল অনেক কম। তারপরও প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে শেষপর্যন্ত এর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন ফেডারেল নীতিনির্ধারকরা।

আরও পড়ুন>> দেউলিয়া হওয়ার শঙ্কায় আরও ব্যাংক, সতর্ক যুক্তরাষ্ট্র

গত ১৯ সার্চ সিগনেচার ব্যাংকের আমানত এবং এর কিছু ঋণের দায় গ্রহণ করেছে ফ্ল্যাগস্টার ব্যাংক। ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে ব্যাংকটি কিনে নিয়েছে নতুন মালিক।

ক্রেডিট সুইসবৃহত্তর আর্থিক সংকট এড়ানোর লক্ষ্যে গত ১৯ মার্চ ৩২০ কোটি ডলারে ক্রেডিট সুইস ব্যাংক কিনে নেওয়ার চুক্তি করেছে সুইজারল্যান্ডের বৃহত্তম ব্যাংকিং সংস্থা ইউবিএস গ্রুপ। এতে মধ্যস্থতা করেছে দেশটির নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ। এটি না হলে ক্রেডিট সুইস ব্যাংককে পূর্ণ বা আংশিক জাতীয়করণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না তাদের সামনে। ইউবিএসের অধিগ্রহণের মাধ্যমে ১৬৬ বছরের পুরোনো ব্যাংকটির ইতি ঘটলো।

আরও পড়ুন>> এবার ইউরোপীয় ব্যাংকের শেয়ারে দরপতন

গত বছর অভূতপূর্ব পরিমাণ তহবিল তুলেছিল ক্রেডিট সুইস ব্যাংক। তবে নিন্দিত বিনিয়োগকারী লেক্স গ্রিনসিল এবং ব্যর্থ বিনিয়োগ সংস্থা আর্চেগোস ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে একাধিক লেনদেন কেলেঙ্কারি এবং কয়েকশ কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় এই প্রচেষ্টা যথেষ্ট ছিল না।

গত ৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং এটি প্রকাশে বিলম্ব করতে বাধ্য করে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক আঞ্চলিক ব্যাংকের পতন এবং ক্রেডিট সুইসের বৃহত্তম অংশীদার সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠানটিতে আর বিনিয়োগ না করার ঘোষণা দিলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শেষপর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাওয়া আটকাতে ইউবিএসের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় ব্যাংকটি।

ফার্স্ট রিপাবলিকযুক্তরাষ্ট্রে আগে যে কারণে তিনটি ব্যাংক বন্ধ হয়েছে, সেই একই পরিস্থিতির শিকার ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকও। এটি থেকে সম্ভাব্য আমানত প্রত্যাহারের অংক দাঁড়াতে পারে ৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে।

আরও পড়ুন>> গ্রাহকদের বিপদে ফেলে হাওয়াইয়ে পালিয়েছেন সিলিকন ভ্যালির ‘নিরো’

গত সপ্তাহে নগদ তিন হাজার কোটি ডলার দিয়ে ফার্স্ট রিপাবলিককে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তা সত্ত্বেও সান ফ্রান্সিসকো-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির ক্রেডিট-রেটিং নেমে গেছে সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে।

সূত্র: ব্লুমবার্গকেএএ/