‘লিচুর রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর। এখানকার সুস্বাদু লিচুর কদর দেশজুড়ে। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই জেলায় লিচুর চাষ বাড়ছে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে গাছে আসা শুরু করে মুকুল। মার্চের মাঝামাঝি এসে সোনালি মুকুলে ভরে গেছে প্রতিটি গাছ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না এলে এবারও দিনাজপুরে রেকর্ড পরিমাণ লিচুর ফলন হবে বলে আশা করছেন চাষিরা।
Advertisement
লিচু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে যখন লিচুর মুকুল আসা শুরু করে সে সময় মনে হয়েছিল এবার মুকুল কম আসবে। কিন্তু মার্চের মাঝামঝি সময়ে বাগানে লিচুর মুকুল দেখে মালিক ও বাগানি সবাই খুশি।
গতবছর প্রতি পিস বেদানা ও চায়না থ্রি লিচু বিক্রি হয়েছে ১৩ থেকে শুরু করে ৩২ টাকা দরে। এবারও ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন বাগানমালিকরা।
আরও পড়ুন: বালা তৈরির গ্রাম সখিপুর দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, এবার দিনাজপুরে ছয় হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হচ্ছে। গতবছর হয়েছিল পাঁচ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এবার ৬৮০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান বেড়েছে।
Advertisement
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নূরুজ্জামান জানান, চলতি বছরে জেলায় ছয় হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানকার লিচু সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় দেশব্যাপী এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দিনাজপুর থেকে অনেক আগে একবার মধ্যপ্রাচ্যে লিচু রপ্তানি করা হয়েছিল। পরে আর তা সম্ভব হয়নি। কারণ এটি দ্রুত পচনশীল পণ্য। এত অল্প সময় পাওয়া যায় যে রপ্তানি করা খুব কঠিন। তবে লিচুর মান ও উৎপাদনের পরিমাণসহ নানা দিক বিবেচনা করে লিচু সংরক্ষণাগার, প্রক্রিয়াকরণ এবং লিচু গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যাতে লিচু দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করে দেশ-বিদেশে পাঠানো যায়।’
আরও পড়ুন: জেলের বিষে বিষাক্ত সুন্দরবন
বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে লিচুগাছ। আশা করা হচ্ছে, এবার ভালো ফলন হবে। কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কোন সময় কোন কীটনাশক, বালাইনাশক ব্যবহার করা উচিত সেই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
Advertisement
দিনাজপুরের লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি ও কাঁঠালি উল্লেখয্যেগ্য। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে এবার এসব প্রজাতির লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা। তারা সার্বক্ষণিক লিচু বাগানের পরিচর্যা করছেন।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনাজপুরের প্রতিটি বাড়ির বসতভিটায় বা আঙিনার লিচুগাছে মুকুল দুলছে। মুকুলের সঙ্গে ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন আর ঝিঁঝি পোকার ঝিঁ ঝিঁ শব্দে এলাকা মুখরিত।
আরও পড়ুন: ‘অটোরিকশা হামার কামাই কমাইচে’
লিচুগাছগুলোতে ফুল আসা থেকে লিচু আহরণ পর্যন্ত তিন-চারমাস লিচু বাগানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের কর্মব্যস্ততা থাকে। ফুল আসার ১৫ দিন আগে এবং ফুল আসার ১৫ দিন পরে সেচ দিতে হয়। সে অনুযায়ী গাছে মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গেই তা টিকিয়ে রাখতে লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা স্প্রে করে চলছেন। এ ছাড়া মুকুল যাতে ঝরে না পড়ে সেজন্য গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি ও সার দিয়ে যাচ্ছেন চাষিরা। জেলার যেসব স্থানে লিচু চাষ করা হয় তার মধ্যে সদর, বিরল, বোচাগঞ্জ, কাহারোল, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর ও খানসামা উপজেলা বিখ্যাত।
সদর উপজেলার মাসিমপুর গ্রামের লিচু চাষি নজরুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফুল আসার আগেই লিচু গাছের পরিচর্যা করতে হয়। এজন্য নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দেওয়া শুরু হয়েছে। গাছে ফুল আসতেই রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লিচু ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন। তারা লিচু বাগান আগাম কিনে নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ডিম-সবজিতে টিকে আছে মেসের শিক্ষার্থীরা
বিরল উপজেলার রবিপুর গ্রামের লিচু চাষি মতিউর রহমান বলেন, গতবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লিচুর ভালো ফলন হয়েছিল। এবার এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো। মুকুলও এসেছে। যদি আবহাওয়া অনুকূলে তাকে এবং গতবছরের মতো ফলন হয় তাহলে লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
এসআর/এমএস