আন্তর্জাতিক

ইরাক যুদ্ধের ২০ বছর

ঠিকঠাক ২০ বছর আগের ২০ মার্চ। ২০০৩ সালের এই দিনে ইরাকে আগ্রাসন শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তেলসমৃদ্ধ দেশটির জনগণকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের শাসনের অবসান ও একই সঙ্গে গণবিধ্বংসী কথিত অস্ত্র (ডব্লিউএমডি) ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

Advertisement

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে ঘোষণা দেওয়ার আগের রাতেই বিমান অভিযান শুরু হয় ইরাকে। সে সময় তিনি ভাষণে বলেছিলেন, ‘এই মুহুর্তে, আমেরিকান ও জোট বাহিনী ইরাক নিরস্ত্রীকরণ, দেশটির জনগণকে মুক্ত করতে এবং বিশ্বকে রক্ষা করতে সামরিক অভিযানের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।’

যদিও কোনো বিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে পায়নি মার্কিন বাহিনী ও তার মিত্ররা। সে সময় প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে বন্দী করা হয়েছিল। তার বিচার করা হয় এবং ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছিল। তবুও দেশটি সংঘাতের জেরে গভীরভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, অর্থনীতি ধসে পড়েছে এবং রাজনৈতিক উত্থান-পতন ঘটেছে। শুধু তাই নয় ইরান ও আমেরিকার প্রভাবের অধীনে দিন কাটছে দেশটির নাগরিকদের।

আরও পড়ুন> নম্রতার ভাষা শিখছে আমেরিকা

Advertisement

ইরাক যুদ্ধের মাত্র দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন জর্জ ওয়াকার বুশ বা জর্জ ডব্লিউ বুশ। এর পরপরই নাইন ইলেভেনের মুখোমুখি হন তিনি। সেই সময় মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে আফগানিস্তানে অভিযান চালিয়ে তালেবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন বুশ।

এর প্রায় দেড় বছরের মাথায় তিনি ইরাকে অভিযান শুরু করেন। তারও আগে ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বুশ প্রশাসন নতুন জাতীয় নিরাপত্তা নীতি ঘোষণা করে। এতে বলা হয় জৈবিক, রাসায়নিক বা পারমাণবিক অস্ত্র, গণ বিধ্বংসী অস্ত্রের অধিকারী কোনো সন্ত্রাসবাদী বা দুর্বৃত্ত দেশ দ্বারা যুক্তরাষ্ট্র যদি হুমকির মুখোমুখি হয়, তাহলে সেটা ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনে সামরিক শক্তি ব্যবহার করবে।

ইরাক যুদ্ধে ২ লাখ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে চার হাজার সেনা নিহত হয়েছেন। শুধু তাই নয় আক্রমণের ফলে পুরো অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা গ্রাস করে ফেলে। যার রেস এখনো কাটেনি।

মার্কিন রাজনীতিবিদ ও তাদের মতাদর্শীরা ইরাক দখলের ভিত্তি স্থাপন করতে শুরু করেছিলেন অভিযান শুরু করার কয়েক বছর আগেই। ১৯৯০ সালে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম তেল-সমৃদ্ধ প্রতিবেশী কুয়েতে আক্রমণ করেন। এরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচডব্লিউ বুশ, জুনিয়র বুশের বাবা ইরাকে ‘উদার গণতন্ত্র’ চাপিয়ে দেওয়ার তার অভিপ্রায় ঘোষণা করেন। এটি মার্কিন নব্য রক্ষণশীল রাজনীতিবিদদের জন্য একটি সুযোগ করে দেয় যে সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে।

Advertisement

২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে আরও পাকাপোক্ত করে। সেই সঙ্গে ইরাকসহ এই অঞ্চলকে উদারীকরণ ও গণতান্ত্রিক করার জন্য আদর্শিক উদ্দেশ্যের মিশ্রণ ঘটায় যুক্তরাষ্ট্র।

আমেরিকান, ব্রিটিশ ও অন্যান্য জোট বাহিনীর সদস্যরা ২০০৩ সালের ২০ মার্চ কুয়েত থেকে ইরাকে আক্রমণ শুরু করে। ইরাকি সামরিক বাহিনীকে দ্রুত চূর্ণ করে ফেলে তারা এবং সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়।

হামলার তিন সপ্তাহ পর ৯ এপ্রিল মার্কিন সেনারা বাগদাদ নিয়ন্ত্রণে নেয়। ইরাকি বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে নিয়ে তারা বাগদাদের ফিরদোস স্কোয়ারে সাদ্দামের একটি ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে। একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত এটি যা মার্কিন বিজয়ের প্রতীক হয়ে ওঠে পরবর্তীতে। এরপর ১ মে বুশ ‘মিশন সম্পন্ন’ ঘোষণা করেন এবং ইরাকে প্রধান অভিযান শেষ করেন।

২০০৩ সালের শেষ দিকে, মার্কিন সেনারা সাদ্দামকে তিকরিতে তার শৈশবের বাড়ির কাছে থেকে গ্রেফতার করেন। পরে ইরাকের একটি আদালতে তার বিচার করা হয় এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

সাদ্দামের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য বেছে নেওয়া হয় ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর দিনটিকে। যেটি মুসলমানদের ঈদ-উল-আজহা পালনের দিন ছিল। এখনো সেটি নিয়ে বিতর্ক আছে।

সাদ্দামের বন্দী হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই, ‘বুশ প্রশাসন স্বীকার করে ইরাকে রাসায়নিক, জৈবিক ও পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত থাকার বিষয়ে যুদ্ধ-পূর্ব যুক্তি ভিত্তিহীন ছিল। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিশন উপসংহারে পৌঁছেছিল যে ইরাকি ডব্লিউএমডি সম্পর্কে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য সম্পূর্ণ ত্রুটিপূর্ণ ছিল।’

সূত্র: আল-জাজিরা, বিবিসি

এসএনআর/এমএস