সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে ১৯ মার্চ দেশটির অন্যতম ক্রেডিট সুইস ব্যাংক ও বৃহৎ ব্যাংক ইউবিএস-এর চেয়ারম্যান যারা চির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন একত্রে কাজ করার ঘোষণা দিলেন। বিষয়টি সুখকরও নয় বটে। কিন্তু এই বিকল্প ছাড়া ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের কোনো উপায় ছিল না।
Advertisement
এক সপ্তাহজুড়ে হতাশায় নিমজ্জিত এবং একীভূতকরণ ক্রেডিট সুইসের মূল্য এখন প্রায় ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ৩২০ কোটি ডলার। সেটি ইউবিএস এজি এখন ৩২৩ কোটি ডলারে কিনে নিচ্ছে। একই সঙ্গে ক্রেডিট সুইসের ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ঋণের দায়ও নিচ্ছে ইউবিএস।
দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ১৬৭ বছরের পুরোনো ব্যাংক ক্রেডিট সুইস অস্তিত্ব হারালো। যুক্তরাষ্ট্রের পর ইউরোপের ব্যাংকগুলোতে বিপর্যয় ঘটতে থাকায় বৈশ্বিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাও গোলযোগের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে।
ব্যাংক দুটির চুক্তির মূল্য ক্রেডিট সুইসের স্টকমার্কেট মূল্যায়নের ওপর ৬০ শতাংশ ছাড়ে করা হয়েছে। সুইস কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট সুইসের অবাঞ্চিত বিটগুলো নিষ্পত্তি করার সময় ক্ষতির হাত থেকে ইউবিএসকে ৯ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ সুরক্ষা প্রদান এবং ১০০ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ তারল্য প্রসারিত করতে সম্মত হয়েছে।
Advertisement
আরও পড়ুন> ক্রেডিট সুইস ব্যাংক বাঁচাতে ৬ বিলিয়ন ডলার গ্যারান্টি চায় ইউবিএস
২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের কারণে উভয় ব্যাংকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সে সময় ইউবিএস সুইস সরকারের কাছ থেকে বেল-আউট পেয়েছে। সম্প্রতি, তাদের পথ ভিন্ন হয়ে গেছে। ইউবিএস-এর কর্তারা যখন জাহাজটিকে স্থির রাখার চেষ্টা করেছেন ক্রেডিট সুইস অনেক দুর্ঘটনার কারণে সে সময় নিম্ন স্তরে চলে গেছে।
গত বছর ক্রেডিট সুইস ব্যাংক ৭ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ লোকসান গুণে। ২০০৮ সালের পর এটি ছিল সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি। গত ৩ বছরে ক্রেডিট সুইসের শেয়ারের দাম ৭০ শতাংশ কমেছে। যেখানে ইউবিএসের শেয়ারের মূল্য দ্বিগুণ হয়েছে। গত অক্টোবরে ক্রেডিট সুইসের কর্মকর্তারা তাদের বিনিয়োগ-ব্যাংকিং খাত থেকে খরচ কমাতে এবং পুঁজি পুনঃবন্টন করার যে পরিকল্পনা করে তা বাজারকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে।
এসব ঘটনার জেরে এক সপ্তাহ আগেও খুব কম লোকই একটি টাই-আপের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। কিন্তু ১৫ মার্চ ক্রেডিট সুইসের শেয়ারের মূল্য এক চতুর্থাংশ কমে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছায়। সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংক, এই প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার। সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংক নতুন ফান্ড দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর গত বুধবার একদিনেই শেয়ারের ৩০ শতাংশ দর পতন ঘটে ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের। ১৬ মার্চের প্রথম দিকে, ক্রেডিট সুইস জানায়, এটি তারল্য বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ঋণ নেবে।
Advertisement
১৬ মার্চের প্রথম দিকে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) ব্যাংকটিকে ৫০ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আমানতকারীদের এবং বাজারকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছিল। এটিই যথেষ্ট হওয়া উচিত ছিল।
আরও পড়ুন> ক্রেডিট সুইস ব্যাংক/যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার ইউরোপের ব্যাংকে বড় ধাক্কা
কিন্তু আশ্রয় কোটরে কোনো শেয়ারহোল্ডার নেই। আমানতকারীরা তাদের নগদ টাকা তুলে নিচ্ছেন। ফলে বিপর্যয়ের মুখে সুইস কর্মকর্তারা অধিগ্রহণের জন্য সরকারকে চাপ দেয়।
ইউবিএস এখন পরিকল্পনা করছে, ক্রেডিট সুইসের বিনিয়োগ ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়ার। তাহলে তারা আশাবাদী যে ২০২৭ সালের মধ্যে তারা ব্যয় কমাত পারবেন ৭০০ কোটি ডলার। সুইস নিয়ন্ত্রকদের এই জাতীয় পরিকল্পনা কার্যকর করা বিশেষভাবে কঠিন হবে।
এক সপ্তাহ আগেও ক্রেডিট সুইস একটি সংস্কারমূলক, লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল। তবে ব্যাংকের সম্পদ-ব্যবস্থাপনা ও সুইস ব্যাংকিং কার্যক্রমের সমন্বয় আশা জাগাচ্ছে। একীভূত হওয়ার পর দুটি বিভাগই হবে পাওয়ার হাউস। ইউবিএস সম্ভবত সুইস দেশীয় বাজারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করবে।
একীভূত ফার্মের বিনিয়োগ ব্যাংকে সবচেয়ে বেশি খরচ কমানো হবে। ফলে এর বেশিরভাগই ক্রেডিট সুইসের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মতো অবস্থা হবে। বিনিয়োগ ব্যাংকিংয়ে দৃঢ়ভাবে সম্পদ ব্যবস্থাপনার অধীনে রাখার অঙ্গীকারের অর্থ হলো প্রচুর ছাঁটাই চলবে। আপত্তিকর ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসাগুলোকে একটি ‘নন-কোর’ ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হবে এবং দ্রুত বিক্রি করা হবে।
বিশ্বজুড়ে আর্থিক নীতিনির্ধারকরা নতুন প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের জন্য আগ্রহী হবেন। আমেরিকা ও ইউরোপের অশান্তি যেখানে তাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯ মার্চ ফেডারেল রিজার্ভ ও অন্যান্য পাঁচটি ধনী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তহবিলে বাজারের ওপর চাপ কমানোর প্রয়াসে ডলারের তারল্য বাড়ানোর ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে। তবে সুইস কর্মকর্তারা একটি সুস্থ ইউনিয়নের জন্য সবার চেয়ে আগ্রহী হবেন। ইউবিএস ও ক্রেডিট সুইসের সম্মিলিত সম্পদ সুইস জিডিপির প্রায় দ্বিগুণ হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন মেগা ব্যাংকের গুরুত্বের কারণে নিয়ন্ত্রকরা উচ্চ মূলধন অনুপাতের ওপর জোর দেবে। এ ধরনের চুক্তির ফলে নতুন প্রতিষ্ঠানটির আকারও খুব বড় হবে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
এসএনআর/জিকেএস