অর্থনীতি

সরকারি এলপি গ্যাসের দাম বাড়াতে এলপিজিএলের প্রস্তাব

# বর্তমানে বেসরকারি ১২ কেজি গ্যাস ১৪২২ টাকা# সরকারি এলপিজিএলের সাড়ে ১২ কেজির দাম ৫৯১ টাকা

Advertisement

প্রায় দুই বছর পর এলপি গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল)। এজন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বর্তমানে সারাদেশে ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি ১২ কেজি বোতলের এলপি গ্যাসের দাম ১ হাজার ৪২২ টাকা, সেখানে এলপিজিএলের সাড়ে ১২ কেজির বোতলের দাম মাত্র ৫৯১ টাকা। ২০২১ সালের ১৭ মে থেকে ৫৯১ টাকা দরে এলপি গ্যাস বিক্রি করে আসছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। প্রায় দুই বছর পর এবার দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে এলপিজিএল। তাও সাড়ে ১২ কেজির বোতলে ৩০৯ টাকা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করার জন্য বিপিসিকে প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমান হিসাবে বেসরকারি সাড়ে ১২ কেজির এলপি গ্যাসের দাম পড়ে ১ হাজার ৪৮১ টাকার বেশি।

জানা গেছে, এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন এবং বিউটেন আমদানি করে বেসরকারি এলপিজি প্ল্যান্টগুলো। পেট্রোলিয়াম গ্যাসের এ দুই উপাদানের মূল্য সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো সিপি (কার্গো প্রাইচ) অনুসারে নির্ধারিত হয়। সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে প্রতি মাসে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সৌদি সিপি অনুসারে মার্চ মাসে প্রোপেন ৭২০ ডলার এবং বিউটেন ৭৪০ ডলার হিসেবে ৩৫:৬৫ অনুপাতে মিশ্রণ বিবেচনায় গত ২ মার্চ বিইআরসি মার্চ মাসের জন্য এলপিজির মূল্য সমন্বয় করে। হিসাব অনুযায়ী মার্চ মাসে প্রতি মেট্রিক টন এলপিজির সৌদি সিপি অনুযায়ী মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৩৩ ডলার।

Advertisement

আরও পড়ুন>> বড় বিনিয়োগের এলপিজি খাতের প্রবৃদ্ধিতে হোঁচট

বেসরকারি এলপিজি প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবমতে, বেসরকারিভাবে এলপিজি আমদানিতে প্রতিটনে গড়ে ১০০ ডলার করে জাহাজ ভাড়া বাবদ খরচ হয়। সে অনুযায়ী জাহাজ ভাড়াসহ (পরিবহন খরচ, বোটলিং খরচ, ব্যাংক চার্জ, অগ্রিম কর, অগ্রিম আয়কর, ভ্যাটসহ অন্যসব ব্যয় বাদে) প্রতিটন এলপিজির মূল্য দাঁড়ায় ৮৩৩ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী বর্তমানে ডলারের মূল্য ১০৬.১৫ টাকা হিসাবে) ৮৮ হাজার ৪২৩ টাকা। এতে আমদানিমূল্য ও শুধু জাহাজভাড়া মিলে প্রতি কেজি এলপিজির দাম পড়ে ৮৮.৪২ টাকা। সে হিসাবে ১২ কেজি আমদানিকৃত এলপি গ্যাসের মূল্য পড়ে ১ হাজার ৬১ টাকা এবং সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির কমপক্ষে মূল্য পড়ে ১ হাজার ১০৫ টাকা।

অন্যদিকে বিইআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১৭ মে থেকে ৫৯১ টাকা করে সাড়ে ১২ কেজি এলপি গ্যাস বিক্রি করে আসছে এলপিজিএল। এর মধ্যে গত এক বছর বেসরকারি এলপি গ্যাসের দাম হাজার টাকার নিচে নামেনি। বর্তমানে সরকারি এলপি গ্যাসের ভোক্তা পর্যায়ের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বিপিসিকে দেওয়ার পরও এখনও দাম বাড়েনি গৃহস্থালির এ গ্যাসের। সর্বশেষ গত ১৪ মার্চ সাড়ে ১২ কেজির এলপি গ্যাসের মূল্য ভোক্তা পর্যায়ে ৯০০ টাকা করার জন্য বিপিসিকে প্রস্তাব দেয় এলপিজিএল।

আরও পড়ুন>> ১২ কেজির এলপিজির দাম বাড়লো ২৬৬ টাকা

Advertisement

এলপিজিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু হানিফ স্বাক্ষরিত এক পত্রে উল্লেখ করা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির মূল্য ক্রমান্বয়ে হ্রাস-বৃদ্ধি হয়ে আসছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে বেসরকারি খাতে এলপিজির মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে সরকারি পর্যায়ে উৎপাদিত এলজিপির মূল্য বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এছাড়াও এলপি গ্যাস লিমিটেডের উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় প্রতি সিলিন্ডার বোতলজাতকরণ মার্জিন তুলনামূলক কম থাকায় এলপি গ্যাস লিমিটেডের পরিচালন মুনাফা হচ্ছে না। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় এলপি গ্যাসের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

ওই চিঠিতে বলা হয়, ভোক্তা পর্যায়ে সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাসের মূল্য ৯০০ টাকা। ডিলার পর্যায়ে স্থানীয় পরিবহন ব্যয়, অপারেশন খবর ও কমিশন হিসাবে ২৫ টাকা পাবে। এতে ডিপো পর্যায়ে মূল্য ধরা হয়েছে ৮৭৫ টাকা। বিপণন কোম্পাানিগুলোর মার্জিন ও সমান পরিবহন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে সিলিন্ডারপ্রতি ৭৭ টাকা ২০ পয়সা। এতে যাবতীয় শুল্ককরসহ এলপিজিএল পাবে সিলিন্ডার প্রতি ৭৯৭ টাকা ৮০ পয়সা। এলপিজি এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে প্রতি সিলিন্ডারে ভ্যাট ধরা হয়েছে ৫৪ টাকা ৮০ পয়সা। এর মধ্যে রিফাইনারি ও পেট্রোবাংলার প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) পাবে ৫৯৫ টাকা ২৫ পয়সা।

আরও পড়ুন>> কাতারের কাছে আরও ১ মিলিয়ন টন এলএনজি চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলপিজিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু হানিফ জাগো নিউজকে বলেন, এলপিজিএলের সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর জন্য বিপিসিতে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বিপিসির পরবর্তী নির্দেশনা ও অনুমোদন সাপেক্ষে গ্যাসের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হবে।

ইকবাল হোসেন/ইএ/এএসএম