ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) নামে যানবাহনের জ্বালানি সিএনজি (কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) রিফিল করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে একটি ফিলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে। ফিলিং স্টেশন থেকে ডিস্পেন্সার মেশিনের মাধ্যমে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে সরবরাহ করা হচ্ছে বাসাবাড়ি ও রেস্তোরাঁয়। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে ফায়ার সার্ভিস।
Advertisement
বিস্ফোরক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজিতে ৭০ শতাংশ কোপেন ও ৩০ শতাংশ ডিউটেন সংমিশ্রণ করা হয়। আর গাড়িতে ব্যবহৃত সিএনজিতে ৬০ শতাংশ কোপেন ও ৪০ শতাংশ ডিউটেন সংমিশ্রণ করে ব্যবহার করতে হয়। তবে এক্ষেত্রে ফিলিং স্টেশনগুলো কোপেন ও ডিউটেন সংমিশ্রণে গরমিল রেখেই সিলিন্ডারে রিফিল করে দিচ্ছে। আর এসব সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে রান্নার কাজে। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ গ্যাস তেলজাতীয় পদার্থ। রিফিল সংমিশ্রণ সঠিকভাবে না হলে গ্যাস সিলিন্ডারের নিচে বসে থাকে। নাড়াচাড়ার কারণে বিস্ফোরণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আরও পড়ুন: ফতুল্লায় রান্না করতে গিয়ে বিস্ফোরণ, স্বামী-স্ত্রীসহ দগ্ধ ৫
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের বেনীপাড়ায় সড়কের পাশে ‘মায়ের দোয়া ফিলিং অ্যান্ড কনভার্শন সেন্টার’ নামে একটি এলপিজি ফিলিং স্টেশন গড়ে উঠেছে। এ এলপিজি স্টেশনটি স্থাপনে কোনো অনুমোদন নেই। অথচ প্রকাশ্যেই যানবাহনের পাশাপাশি ডিস্পেন্সার মেশিনের মাধ্যমে সিলিন্ডারে ভরে এ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। ফিলিং স্টেশন থেকে সিলিন্ডার রিফিল করে আনায় স্থানীয় এলপি গ্যাস কোম্পানির পরিবেশকরা পড়েছেন লোকসানে।
Advertisement
এ ঘটনায় বুধবার (১৫ মার্চ) মেঘনা ফ্রেশ এলপিজি গ্যাস কোম্পানির নাসিরনগর উপজেলা পরিবেশক মো. খসরু মিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ওই ফিলিং স্টেশন থেকে দিনের বেলায় যানবাহনে গ্যাস দেওয়া হয় না। অথচ রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে গ্রাহকের সংখ্যা। রাত হতেই লোকচক্ষুর আড়ালে অবৈধভাবে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সাভারে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, মা ও দুই মেয়ে দগ্ধ
আনিস মিয়ার নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘বাজারে যে গ্যাস সিলিন্ডার বেচে তাদের তুলনায় এ ফিলিং স্টেশনে কম মূল্যে পাওয়া যায়। তবে রাত ছাড়া এখান থেকে গ্যাস নেওয়া যায় না।’
Advertisement
আরিফুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, ‘এখান থেকে কমে পেলে কেন বাজারে যাবো বেশি দামে গ্যাস আনতে?’
যমুনা গ্যাস লিমিটেড কোম্পানির নাসিরনগর বিক্রয় কর্মকর্তা ইলিয়াস ফকির বলেন, ‘প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানির খবরও পাওয়া যাচ্ছে। অথচ নাসিরনগরে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভ্রাম্যমাণ ফিলিং স্টেশন করে অবৈধভাবে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।’
যোগাযোগ করা হলে মায়ের দোয়া ফিলিং অ্যান্ড কনভার্শন সেন্টারের স্বত্বাধিকারী কুদ্দুস মিয়া নিজেও অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে বাসাবাড়ির সিলিন্ডারে গ্যাস রিফিল করা হয়েছিল। এখন আর হয় না। কর্মচারীদের মানা করে দিয়েছি।
তবে ফিলিং স্টেশনটি কৃষি অফিস, ফায়ার স্টেশন, ভূমি অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যায়ন নিয়েই করেছেন বলে দাবি করেন কুদ্দুস মিয়া।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আল মামুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রত্যায়নপত্র তো দূরের কথা, এ ফিলিং স্টেশনের জন্য আমাদের কৃষি অফিসে আবেদনই তিনি করেননি।’
নাসিরনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার হিমাংশু রঞ্জন সিংহ বলেন, আমরা কোনো প্রত্যায়ন দেইনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সেখানে অবৈধভাবে যানবাহনের গ্যাস রান্নার সিলিন্ডারে রিফিল করে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে গ্যাস সরবরাহে মারাত্মক ঝুঁকি ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এমন অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নাসিরনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আবুল হাসনাত মো. রাফি/এসআর/জেআইএম