বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পোশাকশিল্প উদ্যোক্তাদের পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিতে বলেছেন। আমরা মনে করি, তার ঐকান্তিক সহায়তায় বিগত বছরগুলোতে বাজার বহুমুখী করতে সক্ষম হয়েছি। একইভাবে যদি সরকারের নীতিগত সহায়তা পাই, তবে পণ্য বহুমুখীকরণেও বিশেষ করে নন-কটন খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সফল হবেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
শনিবার (১৭ মার্চ) বিজিএমইএ’র উত্তরার কার্যালয়ে ‘পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি’ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ফারুক হাসান। এসময় বিজিএমইএ’র পরিচালনা পর্ষদ সদস্যসহ খাত সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
ফারুক হাসান বলেন, ক্রেতারা বর্তমানে বড় অর্ডার না দিয়ে ছোট ছোট স্লটে অর্ডার দিচ্ছেন, ফলে কারখানা পর্যায়ে আমাদের উৎপাদন পরিকল্পনা বিপর্যস্ত হচ্ছে। করোনার ক্ষত সেরে ওঠতে না ওঠতেই আমরা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যার প্রভাব পড়েছে আমাদের অর্থনীতি ও শিল্পে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমাদের প্রধান বাজারগুলোতে বিশেষ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব উন্নত দেশের ভোক্তারা ভোগ্যপণ্যের ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন, ফলে কমে আসছে পোশাকের চাহিদা। তাই, পোশাকের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে অব প্রাইস বা ডিসকাউন্টেড পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ছে। আবার আমরা দেখছি যে ক্রেতারা তাদের সোর্সিং কৌশল পরিবর্তন করছেন, একসঙ্গে বড় অর্ডার না দিয়ে ছোট ছোট স্লটে অর্ডার দিচ্ছেন, ফলে কারখানা পর্যায়ে আমাদের উৎপাদন পরিকল্পনা বিপর্যস্ত হচ্ছে।
Advertisement
আরও পড়ুন>> ‘রপ্তানি বহুমুখীকরণে সব শিল্পখাতে সমান সুবিধা দিতে হবে’
বিজিএমইএ নেতারা বলেন, বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক ভোক্তাদের আচরণেও বেশ পরিবর্তন এসেছে। তারা এখন সার্কুলার ফ্যাশন ও রিসাইকল পণ্যের ব্যাপারে অনেক বেশি আগ্রহী। সার্কুলার ফ্যাশন আজ সাসটেইনেবল ফ্যাশন এজেন্ডার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা এরই মধ্যে অপচয় কমিয়ে আনা ও সম্পদের পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কারখানাগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের কারখানাগুলো নতুন নতুন টেকনোলজি ব্যবহার ও প্রসেস আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে তাদের অপচয় কমিয়ে আনছে। এখন আমরা পোস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েস্ট বা ঝুট কাপড় পুনরায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। বর্তমানে প্রতিবছর টেক্সটাইল ও পোশাকখাত থেকে প্রায় ৫ লাখ টনের মতো ঝুট তৈরি হয়। এর একটি অংশ আমরা প্রায় রপ্তানি করে থাকি, যার মাধ্যমে বছরে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়। আমরা যদি এ ঝুটগুলোকে রিসাইকেল করতে পারি তবে তা দিয়ে আমরা প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পণ্য উৎপাদন করতে পারবো, যা আমাদের দেশজ সম্পদে প্রবৃদ্ধি আনবে। এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি যেন রিসাইকেলিং শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রক্রিয়া, পণ্য ও সেবাকে শুল্ক ও ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়। ফলে বিনিয়োগকারীরা এইখাতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন।
আরও পড়ুন>> এইও তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া সহজ চায় বিজিএমইএ
তারা বলেন, আমরা যে মডেল ফলো করে শিল্পকে এগিয়ে নিয়েছি, তার ওপর ভিত্তি করে আগামী দিনে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা কঠিন হবে। আমাদের বেশ কিছু বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সামনের দিনগুলোতে আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বিশেষভাবে, নন-কটন খাতে আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিগত চার দশকে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছলেও আমাদের পণ্যের ম্যাটেরিয়াল ডাইভারসিফিকেশন হয়নি বললেই চলে।
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রপ্তানি অনুযায়ী আমাদের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৭৪ দশমিক ১৪ শতাংশ ছিল কটনের তৈরি, যা দশ বছর আগে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৬৯ শতাংশ, অর্থাৎ বিগত দশ বছরে আমাদের শিল্পটির কটন নির্ভরতা বরং বেড়েছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মোট ২০ লাখ ৫২ হাজার টন ফাইবার আমদানি করে, যার ৯৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ ছিল কটন। যেখানে বিশ্বের মোট টেক্সটাইল কনজাম্পশনের প্রায় ৭৫ শতাংশ নন-কটন, এবং কটনের শেয়ার মাত্র ২৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন>> পোশাক রপ্তানির সম্ভাবনাময় গন্তব্য চীন: বিজিএমইএ সভাপতি
বর্তমানে বৈশ্বিক পোশাক বাণিজ্যের ৫২ শতাংশ পণ্য নন-কটনের, সেখানে আমাদের রপ্তানির মাত্র ২৬ শতাংশ নন-কটন। বর্তমান বিশ্বে ভোক্তাদের ক্রমাগত জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পোশাকের চাহিদা বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে নন-কটন পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। সুতরাং এ খাতে আমাদের বিপুল সম্ভবনা রয়েছে।
ইএআর/এমএএইচ/জেআইএম