বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এবং দুর্ঘটনায় অঙ্গ হারানো হাজারো মানুষের জীবন বদলে দিতে সক্ষম ওয়্যারলেস হাত। এই হাতের উদ্ভাবক চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার জোবড়া গ্রামের রবি ও রিনা বড়ুয়ার সন্তান জয় বড়ুয়া লাভলু। তার ভাবনা, কাজ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন আবিদ আহনাফ—
Advertisement
বর্তমানে উচ্চশিক্ষার অজুহাতে যখন দেশের অধিকাংশ মেধাবী তরুণ স্থায়ী হচ্ছেন ভিনদেশে, ঠিক সেই সময় দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং নিজে কিছু করার তীব্র ইচ্ছা থেকেই ভারতের বিশ্ববিখ্যাত টাটা কোম্পানির লোভনীয় সব প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি!
২০১৫ সালের কথা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাতকাটা পরা শিক্ষার্থীর গামছা দিয়ে শরীরের অঙ্গহীন অংশ লুকিয়ে চলাফেরা করার করুণ দৃশ্য আবেগতাড়িত করে ছোট্ট লাভলুর কোমল মন। ঠিক সেই সময়টাই এই শ্রেণির মানুষদের জন্য কিছু একটা করার তীব্র ইচ্ছা জাগে লাভলুর। কয়েক বছরের কঠিন গবেষণা এবং পরিশ্রমে ২০১৯ সালেই লাভলু তৈরি করতে সক্ষম হন এই ওয়্যারলেস হাতের প্রোটোটাইপ। মস্তিষ্ক থেকে আসা স্নায়বিক সিগন্যাল ব্যবহার করে এই হাত কাজ করে হুবহু মানব অঙ্গের মতোই। এখন পর্যন্ত দেশের ৩৩ জন হাত হারানো ব্যক্তি উপকৃত হয়েছেন লাভলুর এই ওয়্যারলেস হাত ব্যবহার করে। এরই মধ্যে তিনি তুরস্ক, সৌদিআরব এবং মালয়েশিয়ার মতো উন্নত দেশে রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছেন এই হাত।
ব্যাপক চাহিদা আছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইন্ডিয়ার মতো দেশেও। বিদেশ থেকে এই ওয়্যারলেস হাত আমদানি করতে যেখানে খরচ পড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সেখানে লাভলু ধরন ভেদে ত্রিশ থেকে এক লাখ টাকার মাঝেই সরবরাহ করেন এই রবোটিক্স হ্যান্ড।
Advertisement
এরই মধ্যে নাসা স্পেস চ্যালেঞ্জ চট্টগ্রামের প্রথম স্থান, ‘এসো রোবট বানাই’ জনপ্রিয় টিভি শোতে দ্বিতীয় স্থান এবং সম্প্রতি কৃত্রিম হাত তৈরি ও প্রতিস্থাপনের জন্য পুরষ্কৃত হয়েছেন জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডে। বর্তমানে সিইও হিসেবে লাভলু কাজ করছেন নিজেরই প্রতিষ্ঠান রোবো লাইফ টেকনোলজিসে এবং অধ্যয়নরত আছেন ইউনাইটেড কলেজ অব এভিয়েশনের অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে।
শৈশব থেকেই উদ্ভাবনের নেশায় মত্ত জয় বড়ুয়া লাভলু বলেন, প্রথম দিকে সংসারের আর্থিক অনটনের কারণে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে দেশের বৃহৎ এক টেলিকম সেবা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি এক স্বনামধন্য গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালনা করছি তিনটি অফিস। যার একটিতে পুরোদমে তৈরি হচ্ছে এই ওয়্যারলেস হাত। তার কোম্পানির ট্যাগ লাইন, ‘রোবো লাইফ, রোবোটিক্স ফর লাইফ’।
লাভলুর ইচ্ছা তার এই মানবিক হাতের মাধ্যমে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট কিংবা কলকারখানায় ঝুঁকিপুর্ণ কাজ করা দেশ বিদেশের লাখো মানুষকে উপকৃত করা। লাভলু বলেন, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষই যেন উপকৃত হতে পারেন আমার প্রতিষ্ঠান রোবো লাইফ টেকনোলজিসের মাধ্যমে এই চেষ্টাই সামনে করব। তিনি হাসি ফোটাতে চান দেশ-বিদেশের হাজারো হাত বিহীন মানুষের মুখে!
কেএসকে/এএসএম
Advertisement