মতামত

স্বপ্নের শুরু

আমার স্বপ্নের শুরু ১৯৯৪ সালে যখন আমি জাম্বিয়ার একটি অজানা ছোট শহর মাজাবুকাতে কাজ শুরু করি।

Advertisement

১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে ডাক্তারদের সরকারি চাকরি ছিল না। বেসরকারি খাত ছিল না বললেই চলে।

সেই সময়ই মাজাবুকা থেকে দেশের ডাক্তার বন্ধুদের জানাতে শুরু করি জাম্বিয়াতে কীভাবে ডাক্তারি পেশা শুরু করা যায়।কীভাবে সেখান থেকে অন্যান্য দেশে যাওয়া যায়। ব্যাপক সাড়া পাই সে সময়। কয়েকজনকে সাহায্য করি সেদেশে সরকারি চাকরি বা ট্রেনিং হিসেবে ঢোকার জন্য।

১৯৯৭ সালে আমি নিউ ইয়র্কে আমার ইন্টার্নশিপ শুরু করি। ইন্টার্ন থাকা অবস্থাতেই সেখানের বিভাগীয় প্রধানের সহায়তায় বাংলাদেশী ডাক্তারদের এটাচমেন্ট দেবার কাজ শুরু করি। সাফল্য আসতে থাকে সে সময়। সে থেকেই শুরু। নানাভাবে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের জন্য কাজ করি। অনেকেই আমাকে বলেন, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই আমি।

Advertisement

২০২০ সালের জুলাই মাসে কোভিড অতিমারির মাঝে দিন রাত কোভিড নিয়ে কাজ করছিলাম দেশে বিদেশে। হঠাৎ আমার প্রিয় অগ্রজ ডা. তাসবির ভাই বললেন, চলো আমরা একটি সংগঠনের মাধ্যমে কাজ শুরু করি যেখানে আমাদের মতো আরো অনেককে সংগঠিত করে কাজ করা যাবে দেশের জন্য। আমি এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম। তখন জুম কালচার শুরু হয়েছে। আমরা ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে পারস্পরিক আদান প্রদানের মাধ্যমে ছডিয়ে দিতে চাইলাম বাংলাদেশে।

আমাদের স্বপ্ন ছিল এটা হবে গ্লোবাল প্লাটফর্ম। তাই সংগঠনের নাম হলো Planetary Health Academia।আমাদের সাথে ইংল্যান্ডের কেম্ব্রিজ থেকে যুক্ত হলো ডা.শাকিল, নাভাডা থেকে ডা. হাফিজ, টেক্সাস থেকে ডা. নাসের এবং বাংলাদেশ থেকে ওমর।বাকিটা ইতিহাস।

Planatary Health Academia এখন অভিবাসী বাংলাদেশী একাডেমিক চিকিৎসকদের সবচে বড় প্লাটফর্ম। দুশোরও বেশি দেশী বিদেশী ফ্যাকাল্টি পঁচিশটিরও বেশি শাখায় জুমের মাধ্যমে নিয়মিত ক্লাস, কনফারেন্স করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু আন্তর্জাতিক কনফারেন্স হয়েছে। স্ট্রোকের ওপর একটি আন্তর্জাতিক কোর্স হয়েছে সিলেটে। বর্তমানে চট্টগ্রাম ও সিলেটে স্ট্রোক পোগ্রাম শুরু করার জন্য কাজ করছি আমরা।

ইতিমধ্যে International Travel Fellowship Program শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে তরুণ চিকিৎসকরা আমেরিকা এবং ইংল্যান্ড থেকে ট্রেনিং করে দেশে ফিরে যাবে। এ বছর কমপক্ষে পনের জন তরুণ চিকিৎসককে এই ফেলোশিপ দেয়া হবে।

Advertisement

বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজগুলোতে আমরা Ambassador Program শুরু করেছি। প্রথমবারের মতো আমরা বাংলাদেশের সবগুলো মেডিকেল কলেজে নিয়ে প্রথমবারের মতো Medical Olympiad করেছি বিশ্বমানের।

বাংলাদেশের তরুণ চিকিৎসকরা যারা আমেরিকায় কাজ করতে চায় তাদের জন্য আমরা তৈরি করেছি Road to Residency Program ( R2R) । আমি আর তাসবীর ভাই ছাড়াও ডা. সাহিল, ডা. রিদওয়ান, ডা. আদ্রিতারসহ অনেক তরুণ চিকিৎসক মেন্টররা কাজ করছে এ Program এ।

এবারও প্রায় বিশজন তরুণ বাংলাদেশী চিকিৎসক আমাদের সেন্টারে রোটেশন করতে এসেছিল। তাদের অধিকাংশই এবার রেসিডেন্সি ম্যাচিং প্রোগ্রামে সফল হয়েছে। তারা এবার Residency শুরু করবে। যারা এবার সফল হয়নি তাদের আমরা সাহায্য করেই যাবো।

আমাদের তরুণ চিকিৎসকরা মেধাবী উদ্যমী। এরা নিজের চেষ্টায় সফল হচ্ছে। আমরা কেবল মেন্টরশিপটা করছি।

এভাবেই ওদের স্বপ্নের শুরু। তারপর ওরাও স্বপ্ন দেখাবে অন্যদের।লেখক: অরলান্ডো প্রবাসী চিকিৎসক।

এইচআর/এমএস