জাতীয়

জরায়ু ক্যানসারের নকল ভ্যাকসিন ৬ হাজার নারীর দেহে

একটি ভ্যাকসিনের তিন ডোজ নিলে কখনোই হবে না জরায়ু ক্যানসার- এমন প্রচারণা চালিয়ে গাজীপুরে ছয় হাজারের বেশি নারীর দেহে তিনটি করে নকল ভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়া হয়েছে। ভ্যাকসিনটি বানানো হয়েছে আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বি'র ভ্যাকসিন থেকে।

Advertisement

গত তিন বছর ধরে জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিন সেরাভিক্স বাংলাদেশে আমদানি বন্ধ রয়েছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে হেপাটাইটিস-বির ভ্যাকসিনের অ্যাম্পল খুলে অন্তত ১০টি জরায়ু ক্যানসারের নকল ভ্যাকসিন বানিয়ে বিক্রি করছে একটি অসাধু চক্র।

হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে দেহে পুশ করার পর তা মানবদেহে ইমিউনিটি তৈরি করে। এক ভ্যাকসিন খুলে ১০টি ভ্যাকসিন বানালে এর কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। এছাড়া ভ্যাকসিনের অ্যাম্পল খুলে অন্য অ্যাম্পলে প্রবেশ করানোর সময় নতুন করে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে চোরাই পথে হেপাটাইটিস-বির ভ্যাকসিন জিন ভ্যাক-বি নিয়ে আসে চক্রের সদস্যরা। চোরাইপথে এই ভ্যাকসিনের এক অ্যাম্পল বাংলাদেশে নিয়ে আসতে খরচ হয় ৩৫০ টাকা। একটি অ্যাম্পল খুলে ১০টি অ্যাম্পলে প্রবেশ করানো হয়। নতুন অ্যাম্পলগুলোতে লাগিয়ে দেওয়া হয় জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিন সেরাভিক্সের লেভেল।

Advertisement

লেভেল লাগানোর পর জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিন সেরাভিক্সের প্রতিটি অ্যাম্পল বিক্রি করা হয় আড়াই হাজার টাকা করে। গাজীপুরে ছয় হাজার নারীর কাছে জনপ্রতি তিনটি করে ১৮ হাজার অ্যাম্পল ভ্যাকসিন বিক্রি করে চক্রের সদস্যরা হাতিয়ে নিয়েছেন সাড়ে চার কোটি টাকা।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে গত বুধবার এই প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলেন- সাইফুল ইসলাম শিপন, ফয়সাল আহম্মেদ, আল আমিন, নুরুজ্জামান সাগর ও আতিকুল ইসলাম।

তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. গোলাম সবুর জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, চক্রের সদস্যরা ভ্যাকসিনগুলো বিক্রি করে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এমন তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম গ্রেফতার ব্যক্তিরা প্রকাশ করেছে।

গ্রেফতার আসামিদের বরাত দিয়ে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, মিরপুর দারুসসালামের ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশন, দক্ষিণখানের আল নূর ফাউন্ডেশন ও চেরাগআলীর পপুলার ভ্যাকসিনেশন সেন্টারের মাধ্যমে নকল জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিনগুলো বিক্রি করে আসছিল চক্রটি।

Advertisement

ডিসি সবুর আরও বলেন, আমরা এই তথ্যগুলো আরও যাচাই করে এর বাইরেও কারা জড়িত, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, চক্রটি সুনির্দিষ্ট কিছু ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন চালিয়ে জরায়ু ক্যানসারের নকল এই ভ্যাকসিনগুলো বিক্রি করেছে। নকল ভ্যাকসিন একজন নারীদের দেহে পুস করার মাধ্যমে মৃত্যুঝুঁকি পর্যন্ত তৈরি হতে পারে।

যেভাবে বানানো হয় নকল ভ্যাকসিনগ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের মাধ্যমে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পেরেছে, নকল ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ভারত থেকে চোরাইপথে হেপাটাইটিস-বির ভ্যাকসিন জিন ভ্যাক-বি বাংলাদেশে নিয়ে আসেন সাইফুল ইসলাম শিপন। ফজর আলী নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ভ্যাকসিনগুলো সংগ্রহ করে ঢাকার দক্ষিণখান ও কেরানীগঞ্জে মজুত করা হয়।

পরবর্তী সময়ে ভ্যাকসিনের অ্যাম্পলগুলো খুলে নতুন অ্যাম্পলে প্রবেশ করানো হয়। হেপাটাইটিস-বি-এর এক অ্যাম্পল খুলে এক মিলিগ্রাম করে প্রবেশ করানো হয় নতুন ১০টি অ্যাম্পলে। নতুন অ্যাম্পলগুলোতে মোড়ক লাগানো হয় জয়ায়ু ক্যান্সারের ভ্যাকসিন সেরাভিক্সের নাম করে।

টিটি/এমকেআর