চলতি বছর হজে যেতে নিবন্ধনের সময় শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ)। সন্ধ্যা পার হলেও বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার কোটা পূরণ হয়নি। তবে, আনুষ্ঠানিকভাবে সময় শেষ হলেও নিবন্ধন সার্ভার খোলা থাকছে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
Advertisement
এরমধ্যে কোটা পূরণ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহ্জ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন ও অবশিষ্ট এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার হজ পোর্টালের তথ্যানুযায়ী, এক লাখ ১০ হাজার ৩৪৬ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। এরমধ্যে সরকারিভাবে ৯ হাজার ৬৮৩ জন এবং বেসরকারিভাবে এক লাখ ৬৬৩ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। এখনো কোটা পূরণে বাকি আছে ১৬ হাজার ৮৫২ জন।আরও পড়ুন>> হজযাত্রীদের বিমানভাড়া কমানোর সুপারিশধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিবন্ধন আজকে রাতেও চলবে। দেখি কি হয়। আজকে অনেক বেশি নিবন্ধিত হয়েছেন।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আপাতত আমাদের নিবন্ধন সার্ভারটা খোলা রাখতে হচ্ছে। কারণ আজকে কোথাও কোথাও নির্বাচনের জন্য ব্যাংকিং কার্যক্রমে সমস্যা হয়েছে। কোথাও কোথাও ব্যাংক সার্ভিস দিতে পারেনি বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে।’
হজ অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘হজ গাইড মোনজ্জেম মিলে আমাদের আরও তিন হাজার যুক্ত হবে। এরই মধ্যে নিবন্ধন এক লাখ পার হয়েছে। কোটা পূরণ হতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। যারা নিবন্ধন করেছেন, শুধু তারাই যাবেন, সমস্যা তো নেই। তবে এরমধ্যে কোটা পূরণ হয়ে যাবে আমরা মনে করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘হজে যাওয়ার জন্য আমাদের কাছে কিছু রিকুইজিশনও আছে। সরকার চাইলে পরে তাদের নিবন্ধনের আওতায় আনতে পারে। সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত।’আরও পড়ুন>> হজের খরচ কমাতে সরকারের সঙ্গে কথা বলতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ
হজ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তদারকি করছে জানিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আজকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। আগামী ১৯ মার্চ মিটিং রয়েছে। সেখান থেকে যেকোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’
Advertisement
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচন থাকায় ওইসব স্থানে ব্যাংকের শাখা বন্ধ ছিল। হজের অনেক ভাইচার ক্রিয়েশন হয়েছে, কিন্তু ব্যাংকের শাখা বন্ধ ছিল। তাই নিবন্ধন সার্ভার আগামী রবি ও সোমবারও খোলা থাকবে। কারণ তারা যাতে পেন্ডিং ভাউচারে টাকাগুলো জমা দিতে পারে। তাদের সেই সুযোগটা তো দিতে হবে। এ বিষয়ে একটি নোটিশও যাচ্ছে।’
এর আগে তিন দফা হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হয়। তবে হজের খরচ বেশি হওয়ায় এবার মানুষের আগ্রহ ছিল কম। নিবন্ধন হয়েছে খুবই ধীরগতিতে।
চলতি বছর হজে যেতে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি। তখন বলা হয়েছিল সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধনের ক্রমিক ৪২ হাজার ২৯৩ পর্যন্ত এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক নিবন্ধনের সর্বশেষ ক্রমিক ৭ লাখ ৮ হাজার ৩৬৪ পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের শেষ সময় থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়। তবে কোটার বিপরীতে খুবই কম সংখ্যাক হজযাত্রী নিবন্ধিত হন। পরে নিবন্ধনের সময় ৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সেই সময়েও কোটার অর্ধেকেরও কম হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়। সর্বশেষ নিবন্ধনের সময় ১৬ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।আরও পড়ুন>> হজযাত্রীদের বিমানভাড়া অমানবিক: হাইকোর্ট
সর্বশেষ নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারি ব্যবস্থাপনা এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়সীমা আগামী ১৬ মার্চ পর্যন্ত চূড়ান্ত ও শেষবারের মতো বর্ধিত করা হলো।
এতে আরও বলা হয়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধনের সর্বশেষ ক্রমিক আগের সিরিয়াল বহাল রেখে ৪৫ হাজার ৬০৫ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলো। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধনের সর্বশেষ ক্রমিক আগের সিরিয়াল বহাল রেখে ৮ লাখ ৮৬ হাজার ১৯০ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলো।
চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনের নিয়ম রাখা হয়েছে। এবার সরকারিভাবে হজ পালনে খরচ হবে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। অন্যদিকে, বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এরসঙ্গে যুক্ত হবে কোরবানির খরচ।
গত বছর সরকারিভাবে দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ হয়। প্যাকেজ-১ এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বেড়েছে ৯৬ হাজার ৬৭৮ টাকা, প্যাকেজ-২ এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বেড়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা। বেসরকারিভাবে হজ পালনে গত বছরের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৪ টাকা। এবারের হজে যাওয়ার খরচ অনেকেরই সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।
আরএমএম/এমএএইচ/জেআইএম