সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি (বার অ্যাসোসিয়েশন) প্রাইভেট সংগঠন, প্রধান বিচারপতির কিছুই করার নেই বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) অ্যাটর্নি জেনারেল সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধান বিচারপতি এমন কথা বলেন বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতির কাছে আদালত চলাকালে বুধবারের ঘটনা তুলে ধরেন। এরপর প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের বিরতির সময় তাদের খাস কামরায় দেখা করতে বলেন।
সে মোতাবেক বেলা ১১টার দিকে প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপি সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক পদের প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। তারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এসময় আপিল বিভাগের অন্য সাত বিচারপতি উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
প্রধান বিচারপতির কার্যালয় থেকে বেরিয়ে হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে গিয়ে ব্রিফিং করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
ব্রিফিংয়ে রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আধাঘণ্টা ধরে আমাদের বক্তব্য শুনেছেন। তারা বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি। আমরা যাওয়ার পর তারা তার সঙ্গে কথা বলবেন। করণীয় থাকলে এ সম্পর্কে জানাবেন।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বের হওয়ার কিছু সময় পর প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে যান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
পরে নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বারের দুজন সাবেক সম্পাদক গিয়েছিলেন কথা বলতে। যারা বর্তমানে সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আমি উনাদের বলেছি, যেহেতু এটা বারের বিষয়, আমাদের করণীয় নাই। প্রধান বিচারপতির এখানে করার কিছু নেই। আপনারা বারের সিনিয়র যারা আছেন তাদের সঙ্গে আলাপ করে সুষ্ঠুভাবে, সুন্দরভাবে করেন। পরিবেশ সবাই মিলে সঠিক রাখার চেষ্ট করেন। এটি প্রাইভেট সংগঠন। বার অ্যাসেসিয়েশনের বিষয়ে প্রধান বিচারপতির কিছু করার নেই।
Advertisement
এর আগে সকাল ১০টা থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে শেষ দিনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচন ঘিরে আজও আওয়ামী ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে প্রথম দিনের ভোট চলাকালে সাদা (সরকার সমর্থক) ও নীল (বিএনপি সমর্থক) দলের দিনভর দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি, হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এতে আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।
বুধবার সকাল ১০টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু করার কথা থাকলেও হট্টগোল, হাতাহাতিতে ভোট শুরু হয় দুপুর পৌনে ১২টায়। প্রথম দিনে দুই হাজার ২১৭টি ভোট পড়ে। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা নির্বাচনে ভোট দেননি।
এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়।
বুধবার সকাল ১০টায় ভোটগ্রহণের সময় বিএনপি সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে সেখানে বিক্ষোভ করতে থাকেন। নতুন করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবি তোলেন তারা। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রেই বিক্ষোভ করেন তারা। এরপর আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীরাও ভোটকেন্দ্রে ঢুকলে শুরু হয় হট্টগোল, এক পর্যায়ে শুরু হয় হাতাহাতি। এ সময় শতাধিক পুলিশ ভোটকেন্দ্রে ঢুকে লাঠিপেটা শুরু করে। ভোটকেন্দ্রের বাইরেও আইনজীবীদের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়।
এ সময় ভোটকেন্দ্রের ভেতরে থাকা সাংবাদিকদের ওপরও চড়াও হয় পুলিশ। সাংবাদিকদের এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ। এতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক গুরুতর আহত হন।
এ ঘটনার পর সুপ্রিম কোর্ট বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) সভাপতি আশুতোষ সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ সরোয়ার হোসেন ভূঞার নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা বিষয়টি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে জানান। তখন প্রধান বিচারপতি লিখিত অভিযোগ নিয়ে যেতে বললে পরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। লিখিত অভিযোগের পর প্রধান বিচারপতি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এলআরএফ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
এফএইচ/এমএইচআর/জিকেএস