চারদিকে অন্ধকার, সুনশান পরিবেশ। ঘড়ির কাটায় সবেমাত্র ভোর ৫টা বাজে। এর মধ্যেই ঘুম ঘুম চোখে হেলেদুলে স্কুলের দিকে এগোচ্ছে একদল শিক্ষার্থী। ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় একটি শহরে এখন এটি নিত্যদিনের (নাকি নিত্যভোরের) দৃশ্য। শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা শেখানোর লক্ষ্যে ভোর সাড়ে ৫টায় স্কুল খোলার নিয়ম চালু করেছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে জানা যায়, ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব নুসা টেংগারা প্রদেশের রাজধানী কুপাং শহরে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে এই কর্মসূচি। এর আওতায় স্থানীয় ১০টি হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ভোর সাড়ে ৫টায় ক্লাস শুরু হচ্ছে।
গত মাসে গভর্নর ভিক্টর লাইসকোডাট এই কর্মসূচি চালুর ঘোষণা দেন। কর্তৃপক্ষের দাবি, এটি শিশুদের শৃঙ্খলাবোধ শক্তিশালী করবে।
আরও পড়ুন>> পরীক্ষাকেন্দ্রে কড়া ‘গার্ডের’ প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
Advertisement
তবে চালুর পর থেকেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে কর্মসূচিটি। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, এত ভোরে ঘুম থেকে ওঠার কারণে স্কুল থেকে পুরোপুরি বিধ্বস্ত অবস্থায় ফিরছে শিশুরা।
ইন্দোনেশিয়ায় সাধারণত স্কুল শুরু হয় সকাল ৭টা বা ৮টার সময়। শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে।
১৬ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীর মা রাম্বু আতা বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, এটি খুবই কঠিন। তাদের এখন অন্ধকার থাকতে বাড়ি ছেড়ে যেতে হয়। আমি এটি মেনে নিতে পারছি না… অন্ধকার ও সুনশান অবস্থায় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না।
আরও পড়ুন>> করোনায় দৈনিক পড়াশোনা কমেছে চার ঘণ্টা, ঝরে পড়ায় শীর্ষে ছেলেরা
Advertisement
রাম্বুর মেয়ে ইউরেকাকে এখন যথাসময়ে স্কুলে হাজির হওয়ার জন্য ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠতে হয়। এরপর মোটরবাইকে চড়ে স্কুলে যায় সে।
মেয়ের অবস্থা সম্পর্কে রাম্বু বলেন, এখন যখনই সে বাড়িতে আসে, খুবই ক্লান্ত থাকে এবং সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ে।
ভোর সাড়ে ৫টায় স্কুল শুরুর বিষয়ে কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনীতিবিদরাও।
নুসা সেন্ডানা ইউনিভার্সিটির শিক্ষা বিশেষজ্ঞ মার্সেল রোবট বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়ন প্রচেষ্টার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। দীর্ঘমেয়াদে ঘুমের অভাব শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যকে বিপন্ন করতে এবং আচরণে পরিবর্তন আনতে পারে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা এখন মাত্র কয়েক ঘণ্টা ঘুমাবে। এটি তাদের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ঝুঁকি। এটি শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপের কারণ হবে এবং তারা কাজের মাধ্যমে সেই চাপের প্রকাশ ঘটাবে।
আরও পড়ুন>> ব্যাগের ওজন বেশি, পিঠে ব্যথার অভিযোগ শিশুদের
ইন্দোনেশীয় সংবাদমাধ্যম কমপাস জানিয়েছে, দেশটির ন্যায়পাল কেন্দ্রীয় সরকারকে এই কর্মসূচির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্ষমতায়ন ও শিশু সুরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিশু সুরক্ষা কমিশনও নীতিটি পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছে।
কুপাং প্রশাসনের নতুন নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করেছেন স্থানীয় আইনপ্রণেতারাও। তারা এই নীতি ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্সের ২০১৪ সালের এক সমীক্ষায় মধ্য ও উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঘুমে পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার জন্য সকাল সাড়ে ৮টা বা তার পরে ক্লাস শুরুর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন>> ঘরে খাবার নেই, স্কুলে যাওয়া বন্ধ শ্রীলঙ্কার শিশুদের
কুপাংয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়েছে ভোর সাড়ে ৫টায় স্কুল শুরুর এই কর্মসূচি। তবে ব্যাপক বিতর্ক সত্ত্বেও এখনো সেটি চালু রেখেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। বরং স্কুল থেকে এগিয়ে এই নিয়ম স্থানীয় শিক্ষা সংস্থাতেও নিয়ে গেছে তারা। সেখানকার সরকারি চাকরিজীবীদের এখন ভোর সাড়ে ৫টায় অফিসে যেতে হচ্ছে।
তবে এই নিয়মের পক্ষেও কথা বলেছেন কেউ কেউ। যেমন স্থানীয় শিক্ষা সংস্থার কর্মচারী রেনসি সিসিলিয়া পেলোকিলা বলেছেন, অনেক ভোরে কাজ শুরু করার নিয়ম তাকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে তুলেছে। কারণ তাকে এখন অফিসে গ্রুপ ব্যায়াম সেশনে যোগ দিতে হয়, আগে যে সময়টি তিনি ঘুমিয়ে কাটাতেন।
তিনি বলেন, একজন বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে আমি বিধিবিধান মেনে চলতে প্রস্তুত এবং আমি আমার সেরাটাই করবো।
কেএএ/