ধর্ম

বিনা ওজরে রোজা না রাখার শাস্তি কী?

বিনা ওজরে কোনো ব্যক্তি রমজানের রোজা না রাখার দুটি কারণ হতে পারে; হয় সে তা (রমজানের রোজাকে) ফরজ বলে অস্বীকার করছে এবং ফরজ ইবাদত বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে না (নাউজু বিল্লাহি মিন জালিক)। আর না হয় সে আলসেমি করে রোজা রাখছে না। এ অবস্থায় বেরোজদারের শাস্তি কী?

Advertisement

রমজানের রোজা ফরজ ইবাদত। রোজাকে ইসলামি শরিয়তে ফরজ নয় বলে অস্বীকার করা কুফরি। অস্বীকারকারী কাফের ও মুরতাদ হয়ে যাবে। কারণ সে ইসলামে প্রধান একটি রোকনকে অস্বীকার করছে। আর মুরতাদ হওয়ার ফলে একজন মুরতাদের মাল ও পরিবারের ব্যাপারে যা বিধান আছে তা কার্যকর হবে। সরকারের কাছে সে হত্যাযোগ্য অপরাধী বলে গণ্য হবে। তার গোসল-কাফন ও জানাজা হবে না এবং মুসলিমদের গোরস্থানে তার লাশ দাফন করাও যাবে না।

অবশ্য যদি কেউ নওমুসলিম হওয়ার ফলে অথবা ইসলামি পরিবেশ ও ওলামা-মাশায়েখদের থেকে দূরে থাকার ফলে এ ধরনের কথা বলে থাকে, তাহলে তার কথা ভিন্ন।

পক্ষান্তরে যদি কেউ আলসেমি করে রোজা না রাখে?

Advertisement

তাহলে তাকে ভয়ানক কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। কারণ সময় হওয়ার আগে আগে ইফতার করার কঠোর শাস্তির বিবরণ হাদিসে পাকে এসেছে। আর যদি পুরো দিন বা মাস রমজানের রোজা না রাখে তবে তার শাস্তি কতো কঠিন হতে পারে তা অনুমেয়। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আবু উমামাহ বাহেলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি শুনেছি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, ‘একদিন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম; এমন সময় (স্বপ্নে) আমার কাছে দুই ব্যক্তি উপস্থিত হলেন। তাঁরা আমার উভয় বাহুর ঊর্ধ্বাংশে ধরে আমাকে এক দুর্গম পাহাড়ের কাছে উপস্থিত করলেন এবং বললেন, ‘আপনি এই পাহাড়ে চড়ুন বা আরোহন করুন।’ আমি বললাম, ‘এ পাহাড়ে চড়তে আমি অক্ষম।’ তাঁরা বললেন, ‘আমরা আপনার জন্য চড়া সহজ করে দেব।’ সুতরাং আমি চড়ে গেলাম। অবশেষে যখন পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে পৌঁছলাম তখন বেশ কিছু চিৎকার-ধ্বনি শুনতে পেলাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ‘এ চিৎকার-ধ্বনি কাদের?’ তাঁরা বললেন, ‘এ হলো জাহান্নামবাসীদের চীৎকার-ধ্বনি।’

পুনরায় তাঁরা আমাকে নিয়ে চলতে লাগলেন। হঠাৎ দেখলাম একদল লোক তাদের পায়ের গোড়ালির উপর মোটা শিরায় (বাঁধা অবস্থায়) লটকানো আছে, তাদের কশগুলো (শিরাগুলো) কেটে ও ছিঁড়ে আছে এবং কশ বেয়ে রক্তও ঝরছে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি বললাম, ‘ওরা কারা?’ তাঁরা বললেন, ‘ওরা হলো তারা; যারা সময় হওয়ার আগে আগেই ইফতার করে নিত...।’ (ইবনে খুযাইমা, ইবনে হিববান, বায়হাকি ৪/২১৬, মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৪৩০, তারগিব ৯৯১)

এখানে ‘ওরা হলো তারা; যারা সময় হওয়ার আগে আগেই ইফতার করে নিত...।’ রোজা রাখার পরেও সময় হওয়ার আগে ইফতার করায় যদি তাদের ঐ অবস্থা হয়, তাহলে যারা পূর্ণ দিন মূলেই রোজা রাখে না, তাদের অবস্থা এবং যারা পূর্ণ মাসই রোজা রাখে না, তাদের অবস্থা যে কত করুণ, কত ভয়াবহ হতে পারে, তা অনুমেয়!

Advertisement

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মুস্তাফা মুহাম্মাদ আম্মারাহ তাঁর তারগিবের টীকায় (২/১০৯) বলেন, ‘উক্ত হাদিসের ভাবার্থ এই যে, মহান আল্লাহ তাঁর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রোজা ভঙ্গকারীদের আজাব সম্বন্ধে জানিয়েছেন।

তিনি দেখেছেন, তাদের সেই দুরবস্থা; তাদের আকার-আকৃতি ছিল বড় মর্মান্তিক ও নিকৃষ্ট। কঠিন যন্ত্রণায় তারা কুকুর ও নেকড়ের মত চিৎকার করছে। তারা সাহায্য প্রার্থনা করছে অথচ কোনো সাহায্যকারী নেই। তাদের পায়ের শেষ প্রান্তে (গোড়ালির উপর মোটা শিরায়) জাহান্নামের আঁকুশি দিয়ে কসাইখানার যবাই করা ছাগলের মত তাদেরকে নিম্নমুখে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর তাদের কশ বেয়ে মুখভর্তি রক্ত ঝরছে!

আশা করি বিনা ওজরে বেরোজাদার মুসলিম সম্প্রদায় এই আজাবের কথা জেনে আল্লাহর কাছে তওবা করবে এবং আল্লাহর সেই আজাবকে ভয় করে যথানিয়মে রোজা পালন করবে।’

হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, একটি সম্প্রদায় উল্টোভাবে (পা উপরে আর মাথা নিচের দিকে) ঝুলছে। তাদের গাল ফাড়া। আর তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এরা কারা? (প্রশ্নের উত্তরে) বলা হলো- এরা সেসব ব্যক্তি যারা বিনা কারণে রমজান মাসের রোজা নষ্ট করেছে।' (ইবনে খুযায়মাহ)

ইমাম যাহাবি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘মুমিনদের কাছে এ কথা স্থির-সিদ্ধান্ত যে, কোনো ব্যক্তি রোগ ও ওজর না থাকা সত্ত্বেও রমজানের রোজা ত্যাগ করে, সে ব্যক্তি একজন ব্যভিচারী ও মদ্যপায়ী থেকেও নিকৃষ্ট। বরং মুসলিমরা তার ইসলামে সন্দেহ পোষণ করে এবং ধারণা করে যে, সে একজন নাস্তিক ও নৈতিক শৈথিল্যপূর্ণ মানুষ।’ (মাজমু ফাতাওয়া ২৫/২২৫, আল-কাবায়ের ৪৯পৃঃ, ফিকহুস সুন্নাহ ১/৩৮৪, ফাইযুর রাহীমির রাহমান, ফী আহকামি অমাওয়াইযি রামাযান ২০-২১পৃঃ)

এমএমএস/জিকেএস