বছর পাঁচেক আগে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলের কিছু সংবাদকর্মী বাংলাদেশের সুন্দরবন এসেছিলেন বাঘের খোঁজে। সেবার তারা প্রায় দুই সপ্তাহ থেকেও পাননি বাঘের দেখা; কিন্তু এখন যদি এখন তারা বাংলাদেশে আবার আসেন বাঘের খোঁজে, তাহলে নিশ্চিত করে বলা যায় সুন্দরবনে না পেলেও মিরপুর স্টেডিয়ামে সহজেই পেয়ে যাবেন অনেকগুলো বাঘের দেখা। এগারোজন বাঘ কাঁপাচ্ছেন মিরপুরের সবুজ মাঠ। সঙ্গে হাজারো বাঘের গর্জন উঠছে গ্যালারিতে।অনেকদিন থেকেই গ্যালারিতে নিয়মিত বাঘ সেজে আসেন মিলন এবং শোয়েব; কিন্তু এবার একসাথে আরও বেশকিছু বাঘ দেখা গেছে। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের সামনে এক সারিতে পাঁচজন বসে থাকেন পাঁচটি বাঘ সেজে। এরা হলেন খোকন, সবুজ, রাসেল, রাফি ও সুমন। এদের মাঝে সবুজ ব্যক্তিগত জীবনে একজন এমবিবিএস ডাক্তার। বাকি সবাই ব্যবসা করেন; কিন্তু যখনই বাংলাদেশের খেলা থাকে তখন তারা নানা রকম সাজে দর্শকদের উৎসাহ দিতে চলে আসেন মিরপুরের গ্যালারিতে।গ্যালারিতে বাঘ সেজে আসার কারণ জানতে চাইলে খোকন বলেন, ‘আমাদের বাঘ সাজার মূল কারণ, বাংলাদেশ জাতীয় দলকে উৎসাহ দেয়া। গত ম্যাচেই দেখেন, খেলাটা অনেকটাই শ্রীলঙ্কার দিকে চলে গিয়েছিল; কিন্তু আমাদের দর্শকদের চিৎকারে খেলোয়াড়রা উৎসাহিত হয়েছে।’ডাক্তার সবুজ জানান তিনি আসেন ক্রিকেটকে ভালবাসেন বলেই। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ক্রিকেট খেলার প্রতি আমার ভালবাসাটা অনেক, তাই খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতে মাঠে আসি। বাংলাদেশ যখন চাপে থাকে বা একটু পিছনে পড়ে থাকে তখন আমরা বিভিন্নভাবে যত পারি উৎসাহ দিয়ে যেতে থাকি। তখন তারা আমাদের গর্জন শুনে অনেক বেশি উৎসাহিত হয়।’রাসেল, রাফি ও সুমন জানান, তারা ক্রিকেটকে ভালবাসেন এবং বাংলাদেশ দলকে উৎসাহিত করাই তার মূল উদ্দেশ্য। এই জন্যই তারা নানা সাজে আসেন মাঠের বাঘদের উৎসাহ দিতে। এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম সাজ দিয়ে আসি। এর আগে চুল পরে এসেছি। একেক সময় একেক রকম সাজ দিয়ে আসি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অনুপ্রেরণা দেয়া মূলতঃ আমাদের উদ্দেশ্য।’এছাড়াও তাদের সঙ্গে নিয়মিত আসেন বিসিআইসি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম। বাঘ না সাজলেও তিনিও সারা দেহে জড়িয়ে নেন বাংলাদেশের পতাকার লাল সবুজ রঙের পোশাক। মাথায় পাগড়িও পরেছেন লাল-সবুজের। একজন শিক্ষক হয়েও এমন সাজে মাঠে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার হৃদয়টাই একটা বাংলাদেশ। আমরা সবসময় আপদে বিপদে, খারাপ খেলুক, ভালো খেলুক, সবসময়ই বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে থাকি। আমাদের কাজটা হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত করা। আমি বিশ্বাস করি ক্রিকেট একটি মনস্তাত্ত্বিক খেলা। খেলোয়াড়দের আমরা যত উৎসাহিত করতে পারবো, যত জাগ্রত করতে পারবো, তত তারা ভালো খেলবে। আর এই ভূমিকাটা দর্শকদের। আমাদের অধিনায়কও স্বীকার করেছে, আমাদের দর্শকরা আমাদের প্রাণ। দর্শক যদি চিৎকার করে উৎসাহিত করে, সে দেশ ভালো খেলবেই। টেন্ডুলকারের মত খেলোয়াড় স্বীকার করেছে বাংলাদেশের দর্শক এতো একজোট, এত্ত একাট্টা যে খেলতে মাঝে মাঝে ভয় লাগে।’বর্তমানে বাংলাদেশের সুন্দরবন থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার প্রায় বিলুপ্তির পথে। এ কথা ভালো করেই জানেন তারা। তাই তারা বনের বাঘদের রক্ষার জন্যও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। সবাই একই কথা বললেন জাগো নিউজকে, বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং পরিবেশের একটা অংশ বাঘ। তাই পরিবেশের ভারসাম্য, সর্বোপরি দেশের সন্মান রক্ষার্থে হলেও অবিলম্বে বাঘ রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’আরটি/আইএইচএস/আরআইপি
Advertisement